জীবনানন্দ দাশ তাঁর ডায়েরিতে লিখছেন:
'যখন আমি আমার পরিত্যক্ত ছোট্ট মেয়েটির কথা ভাবি,উদলা,টুরটুর করে হাঁটছে, এবং সকলের দিকে তাকাচ্ছে, যেখানে সব্বাই সহানুভূতিহীন, আমার চোখের জল বাধ মানে না।'
কবিতায় লিখছেন:
'আমার এ ছোটো মেয়ে --সব শেষ মেয়ে এই
শুয়ে আছে বিছানার পাশে--...
ভুলে যাই ওর কথা --আমার প্রথম মেয়ে সেই
মেঘ দিয়ে ভেসে আসে যেন
বলে এসে:'বাবা,তুমি ভালো আছো? ভালো আছো?---ভালবাস?'
হাতখানা ধরি তার:ধোঁয়া শুধু
কাপড়ের মতো শাদা মুখখানা কেন!...
তবু তারে চাই আমি --তারে শুধু--পৃথিবীতে আর কিছু নয়...'
চিদানন্দ দাশগুপ্তকে চিঠিতে দুঃখ করে সন্তানের পরীক্ষায় ব্যর্থতার কথা জানাচ্ছেন।নিজের সন্তান কুশ্রী হওয়ার জন্য নিজের চেহারাকে দায়ী করছেন।
মেয়ে মঞ্জুশ্রী (১৯৩১-৯৫) যেন কক্ষপথ হারা কোনও গ্রহ।জীবনটাকে কোনওদিনই জুতসই করে বুনতে পারলেন না।ট্রেন থেকে নামার সময় ভুলে গিয়ে বাবার অনেকগুলো খাতা হারিয়ে ফেললেন, অনেক খাতা বন্ধুবান্ধবদের দিয়ে আর ফেরত নিলেন না।
আবার বাবাকে নিয়ে পি.এইচ.ডি.ও শুরু করলেন।থিসিসটা পড়তে পড়তে বুকে পাথর চেপে বসে। দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে মৃত বাবার সম্পর্কে সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করছেন।
বাবার মতো কোনও চাকরিই টিকিয়ে রাখতেন পারতেন না।জার্মানির বন শহর থেকে কাশ্মীর-পঞ্জাব কোথাও থিতু হতে পারেননি।সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে বাংলা অকাদেমি থেকে রবীন্দ্র ভারতী কোথায় না চাকরি করেছেন!ব্যক্তিগত জীবনে অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও, এমনকি বিয়ে করলেও, কোথাও স্থায়ীভাবে নোঙর ফেলতে পারেননি। কবিতা লিখতেন যে মেয়েটি!
বাউলমনে মঞ্জুশ্রী যেদিন মারা গেলেন,শুনেছি সামান্য টাকার জন্য তাঁকে দাহ করা যাচ্ছিল না। শ্রদ্ধেয় সুমিতা চক্রবর্তীর সহযোগিতায় তা শেষ অবধি সম্পন্ন হয়।
হ্যাঁ, জীবনানন্দ দাশের মেয়ের এই করুণ পরিণতি। ছেলে তো আগেই কোনও মানসিক কেন্দ্র হয়ে পিজি হাসপাতালে রোগভোগে মারা গেছেন।
কবির বড়ো আদরের মেয়ে ছিল মঞ্জু।ডায়েরির পাতায় পাতায় তার সাক্ষ্য।
কে একটি ছোট মেয়ে 'বাবা''বাবা' ব'লে ডাকে...মঞ্জুর মতো শোনায়।
শাদা চাদরের মতো বাতাসেরে জড়াল সে একবার...
সংগৃহিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন