বই পড়ার সুন্দর দুটা পদ্ধতি আছে। প্রথমটি হল সাথে একটা নোট খাতা রাখা এবং দ্বিতীয়টি হল শুধু মাত্র রিডিং না পড়ে প্রত্যেকটি লাইনে লাইনে লেখকের সাথে যুক্তি তর্ক করে যাবেন।
প্রথম পদ্ধতিটা আমি শিখেছি লেখক আহমদ ছফা'র কাছ থেকে। ছাত্রাবস্থায় তিনি অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের কাছ থেকে রোজ একটি করে বই নিয়ে পুরো বইএর সারমর্ম একটা নোট খাতায় নিজের মত করে লিখে রাখতেন।
এই নোট করে রাখার প্র্যাকটিসটা হুমায়ূন আহমেদের ভেতরেও পেয়েছি যদিও তার স্মৃতি শক্তি অনেক প্রখর ছিল। জীবনের শেষের দিকে এসে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শৈশবের সাত বছর বয়সে লুকিয়ে প্রথম বই পড়ার কথা লিখতে গিয়ে তিনি সেই বইএর ভেতরের গল্পটাও লিখে ফেলেছেন !
বই পড়ার দ্বিতীয় পদ্ধতিটা আমি শিখেছি, ভারতীয় যুক্তিবাদী লেখক প্রবীর ঘোষের কাছ থেকে। তিনি একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, আপনি যদি লেখক যাই লিখেন কোন রকমের চিন্তা ভাবনা না করে সবই বিশ্বাস করতে শুরু করেন তাহলে তার দশটা সত্য কথার সাথে দু একটা মিথ্যা কথাকেও বিশ্বাস করতে শুরু করবেন। এই দুটা মিথ্যা কথা আপনার জীবনে অনেক ভয়ংকর হবে ! কেননা দশটা সত্য কথার সাথে একটা মিত্থা কথা মিশে গেলে সেটাকে আলাদা করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
খাতায় নোট করবার ব্যাপারে আমি বেশ কিপটে। খুব সামান্যই লিখে রাখি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, যখন আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি এই নোট খাতাটা খুলে পড়তে শুরু করি এবং যেখান থেকে আমি দৌড়ানোটা থামিয়েছিলাম সেখান থেকেই আবার দৌড়াতে শুরু করি।
এ পি জে আবদুল কালামের ' টার্নিং পয়েন্টস' পুরো গ্রন্থটা পড়ে আমি শুধু মাত্র সেখান থেকে একটা লাইন আমার নোট খাতায় টুকে রেখেছি। আমি জানি যেদিন আমি মেঝেতে চিত হয়ে মাথার নিচে হাত দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে থাকব সেদিন এই লাইনটাই আমাকে মায়ের মত পিঠ চাপড়ে ভরসা দেবে। লাইনটা হল-'' আমি পেশা হিসেবে গবেষণা এবং শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছি কেননা আমি পুনরাবৃত্তি ভালোবাসি''
কিছু কিছু শব্দ আছে নিঃশব্দের মত। আমার কাছে পুনরাবৃত্তি শব্দটাকে সেরকম মনে হয়েছে। আমরা বেশিরভাগ মানুষ সফল হইনা কেননা আমরা পুনরাবৃত্তি পছন্দ করি না। একটা কাজে বাঁধা পেলে সেটা বার বার পুনরাবৃত্তি করার ধৈর্যটা আমাদের থাকে না।
আইরিশ লেখক জর্জ বার্নার্ডশ তার একটা নাটকের সংলাপে লিখেছেন '' আমি যেদিন থেকে বুঝেছি কোন একটা কাজ দশবার করার পর আমি একবার সফল হই সেদিন থেকে আমি প্রত্যেকটি কাজ দশবার করে করা শুরু করেছি''
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন