ছবিতে নেপথ্যগায়িকা হতেই এসেছিলেন সুচিত্রা সেন ! তবে কিভাবে হলেন মহানায়িকা !
সুচিত্রা সেন। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল তিনি জন্ম নিলেন পাবনায় দাদামশাইয়ের বাড়িতে। ৮৩ বছর বয়সে ২০১৪-র ১৭ জানুয়ারি সকালবেলা তাঁর জীবনাবসান হয় কলকাতায়। এই মেয়ে যখন জন্মেছিলেন তখন কে জানত, এই মেয়ের জীবনাবসান হবে কলকাতায়।
কে জানত, এই মেয়ের অর্ধেক জীবন কাটবে স্বনির্বাসনের নিশ্ছিদ্র অন্তরালে ! তাঁকে আসতে আসতে বুড়ো হতে দেখেনি কেউ। কেউ কি সত্যিই কোনও দিন জানতে পেরেছিল, যে এই মেয়ের মরদেহ কেওড়াতলা মহাশ্মশাআনে পৌঁছবে কফিনবন্দি হয়ে, পাছে কেয়াউ তাঁকে দেখতে না পায়। সুচিত্রা সেনের মৃত্যুতে রাস্তায় নেমেছিল মানুষের ঢল। তাঁকে একবার চোখের দেখা দেখঅর জন্য। দেশ বিদেশ থেকে উড়ে এসেছিল শোকবার্তা। কারণ তিনি সুচিত্রা সেন। বাংলা সিনেমা শুধু নয় ভারতীয় সিনেমার গর্ব সুচিত্রা সেন। তাঁর কথা বলার ছন্দ ছিল একেবারেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন টলিউডৈর রানি। আর সেই জন্যই নিজের ইমেজ ধরে রাখতে তিনি সরে গিয়েছিলেন অন্তরালে।
গায়ের রঙ চাপা হওয়ায় দাদামশাই জগবন্ধু দাশগুপ্ত নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণা। সুচিত্রা সেনরা নয় ভাইবোন ছিলেন। সুচিত্রা সেন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তাঁর বাবা নাম রেখেছিলেন রমা। রমা জন্মাল পাটনায়, বড় হল পাবনায়। আর কাজ করলো কলকাতায়। পড়াশুনো পাবনাতেই। ১৯৪৯ এর বসন্ত বিকেল। বিয়ে হয় রমার। বিয়ের পর তাঁর নাম হয় রমা সেন। বিয়ের পর, মুনমুন সেনের জন্মের পর সুচিত্রা সেন আসেন স্টুডিয়ো পাড়ায়। তাও জানেন কি করতে? নেপথ্যগায়িকা হতে। তিনি চেয়েছিলেন নেপথ্যগায়িকা হতে। কিন্তু ভাগ্য তাঁর জন্য ঠিক করে রেখেছিল অন্য কিছু। সে সময় নিজের ছবি 'সংকেত'-এর জন্য নায়িকা খুঁজছিলেন পরিচালক অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর কাছে খবর যায়, যে টলি পাড়ায় এক অসামান্য সুন্দরী এসেছেন। রমা সেনকে অডিশনে ডাকেন অর্ধেন্দু। তিনি সিলেক্টও হন নায়িকার চরিত্রের জন্য। তবে ছবিটা সুচিত্রা সেন করেননি। তনি বাড়িতে ফিরে ফোন করে পরিচালককে জানান, আমি সিনেমায় নামছি না। অন্য নায়িকা খুঁজুন।
তবে টলিউড কিন্তু ছেড়ে দেয়নি রমাকে। তাঁকে আবার ডাকা হল 'শেষ কোথায়' ছবির জন্য। এখানে রমা কাজও শুরু করলেন নায়িকা হিসেবে। তবে টাকার অভাবে এই ছবির শুটিং বন্ধ হয়ে গেল। তবে সে সময় রমার কাজের খুব দরকার। যে কাজ একদিন তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই কাজ ছাড়া আজ তাঁর চলবে না। তখন তাঁকে ডেকে পাঠান পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্ত। তিনি তখন ছবি বানাবেন "সাত নম্বর কয়েদি"। কে নেই সেই ছবিতে-- ছবি বিশ্বাস, কমল নিত্র, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু নায়ক কে? জানতে চাইল রমা। পরিচালক জানিয়েছিলেন, 'সমর রায়'। নতুন অভিনেতা। বিচলিত হয়ে সুচিত্রা সেন বলেছিলেন, "আমিও তো নতুন। খুব রিস্ক নিচ্ছেন কিন্তু।" পাশে ছিলেন সহকারী পরিচালক নীতিশ রায়। তিনি বললেন, "রমা দেবী আজ থেকে আপনি সুচিত্রা !" "সাত নম্বর কয়েদি"র চুক্তিপত্রে রমা সই করল, সুচিত্রা সেন নামে। ঠিক এক বছর পর ১৯৫৪ সালে পর পর ৯টা ছবিতে সই করলেন সুচিত্রা সেন। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। নিজের দক্ষতায় শক্ত করেছেন পায়ের তলার মাটি। তাই তো আজ এতগুলো বছর হয়ে গেলেও মানুষ ভুলতে পারেননি সুচিত্রা সেনকে।
- Collected
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন