এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

ডেন্নি, ৯০হাজার১৩ বৎসরের কিশোর

 ॥ডেন্নি, ৯০হাজার১৩ বৎসরের কিশোরি॥


11-04-2025©তুষারমুখার্জি


ডেন্নির বাসস্থান সাইবেরিয়ার আলতাই পর্বতের ডেনিসোভা গুহা। ৯০ হাজার বৎসর আগে ডেন্নি বাবা মা তার কি নাম রেখেছিল আমাদের সেটা জানার কোন উপায় নেই। এই ডেন্নি নাম রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা অবশ্য তার আগে একটা কোড নাম রেখেছিলেন ডেনিসোভা-১১


সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা গুহার ভেতরে সারা বছরই  শুন্য ডিগ্রীর তীব্র ঠান্ডা। ২৭০ বর্গ মিটারের এই গুহার ভেতরে নানা প্রাণী বাস করত বরাবর। তারমধ্যে যেমন আছে গুহাবাসী নেকড়ে, গুহাবাসী সিংহ, তেমনি নানা গবাদিপশু। তার সাথে থাকত মানবগণ।

  

মানবগণ বলতে নিয়েন্ডারথল ডেনিসোভান আর স্যাপিয়েন্স। তবে স্যাপিয়েন্সরা অন্যদের সাথে একই সময়ে থাকত কি না, সেটা এখনো পরিস্কার না।

 

এখানে প্রবল ঠান্ডায় দেহাস্থিতে ডিএনএ টিকে থাকত। ফলে এখানে পাওয়া দেহাস্থি থেকে নিয়েন্ডারথল আর স্যাপিয়েন্স ডিএনএ চেনা হয়ে গেল ঝটপট। তারপরেই একটি ছোট্ট হাড়ের টুকরো, কড়ে আঙুলের গিঁট, তার থেকে পাওয়া ডিএনএ থেকে প্রথম জানা গেল এই ডেনিসোভানদের কথা। আগে জানা ছিল না এদের কথা, তাই কোন নামও ছিল না। এখন এই ডেনিসোভা গুহাতে প্রথম পাওয়াতে নাম রাখা হল ডেনিসোভান।

  

ডেনিসোভান জিন এশিয়ার মানুষদের মধ্যে রয়েছে যেমন করে ইয়োরোপিয়ানদের মধ্যে আছে নিয়েন্ডারথলদের জিন। 

 

ইয়োরোপে নিয়েন্ডারথলদের বহু দেহাবশেষ পাওয়া গেছে, তাই তাদের দৈহিক গঠন নিয়ে আমাদের একটা মোটামুটি ধারনা তৈরী হয়ে গেছে। কিন্তু ডেনিসোভানদের কোন দেহাবশেষ পাওয়া যায় নি। যা সামান্য কয়েকটি হাড়ের দাঁতের টুকরো পাওয়া গেছে তা এক পকেটে এঁটে যাবে। তাদের সম্বন্ধে আমাদের যা কিছু জ্ঞান সবটাই তাদের জেনেটিক তথ্য থেকে।

 

ডেনিসোভা গুহায় হাড়ের ছড়াছড়ি। সবই মাংসাসী পশুদের খাওয়ার পরের টুকরোটাকরা হাড়। এই হাজার হাজার হাড়ের থেকে স্যাপিয়েন্স বা নিয়েন্ডারথল বা ডেনিসোভান হাড় চিনে বের করার একমাত্র উপায় হল তার ডিএনএ বিশ্লেষণ করা। যা সময় আর খরচের দিক থেকে ভাবলে প্রায় অসম্ভব একটা কাজ।

 

ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক বাকলে একটা পদ্ধতি বের করলেন। হাড়ের কোলাজেন, যা লক্ষাধিক বৎসর টিকে থাকে, সেটা পরীক্ষা করে কোন প্রজাতির হাড় তা চিনে নেওয়ার পদ্ধতি।

ডেনিসোভা গুহায় কর্মরত বিজ্ঞানীদের নমুনা হাড় পাঠাতে বলা হল। তারা পুরো এক বস্তা হাড়ের টুকরো পাঠিয়ে দিলেন।কাজ শুরু হল অক্সফোর্ডে।

 

সেই হাড়ের থেকে ২০ মিগ্রা আকারের টুকরো কেটে নিয়ে, ট্যাগ লাগানো। তারপরে ম্যাঞ্চেস্টারে গিয়ে পরীক্ষা করা। তিনমাসে ১৫০টি হাড় পরীক্ষা হল। সবই গবাদিপশু। হতাশ হয়ে পড়লেন দুই বিজ্ঞানী। 

এবার তাঁরা বিভিন্ন বিভাগে ডক্টরেট করছে এমন ছাত্রদের ডাকলেন স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে সাহায্যের জন্য। একজনও এলো না। হতাশ বিজ্ঞানী দুইজন যখন প্রকল্পটি বাতিল করবেন ভাবছেন এমন সময় একজন এলেন। অস্ট্রেলিয়ান মেয়ে সামান্থা ফক্স। তিনি কয়েক সপ্তাহ কাজ করে ৭০০ নমুনা পরীক্ষা করে ফেললেন। এবারও সব গবাদি পশু। 

ধুত্তোরি বলে ছেড়ে দেবারই কথা। কিন্তু সামান্থা ফক্স ছাড়লেন না। লেগে রইলেন। আরো ১৫০০ নমুনা রেডি করে ম্যাঞ্চেসাটারে আরেকবার বসলেন পরীক্ষা করতে। 

সাফল্য এল। নমুনা নং ১২২৭, মানবগণের হাড়। কিন্তু নিয়েন্ডারথল? না স্যাপিয়েন্স? না ডেনিসোভান? জানার জন্য ডিএনএ সংগ্রহ করতে হবে।

  

অস্থির টুকরো চলে গেল জার্মানির লিপজিগের ম্যাক্সপ্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটে।

সেখানে স্বান্তে পাবোর নেতৃত্বে ডিএনএ সংগ্রহ করে পরীক্ষার প্রথমেই বোঝা গেল এই ডিএনএ ৫০হাজার বৎসর আগের ১৩ বৎসর বয়সী কোন একজনের। 

 

এরপরে স্বান্তে পাবোর ছাত্রী ভিভিয়ান স্লন লেগে পড়লেন ভালো করে পরীক্ষার কাজে। স্লন যে ফল পেলেন তা শুনে স্বান্তে পাবো ঘাবড়েই গেলেন। ভাবলেন নিশ্চয়ই পরীক্ষা করার সময়ে কিছু গোলমাল ঘটিয়েছে। 

 

আবার নতুন করে পরীক্ষাপর্ব। এবার খুব সাবধানে। 

দুই বার না ছয়বার পরীক্ষা করা হল। না পরীক্ষায় ভুল নেই। 

তবে ৫০ হাজার না ওটা হবে ৯০ হাজার বৎসর আগের।

 

পরীক্ষার ফলের সারমর্মঃ

৯০ হাজার বৎসর আগের ডিএনএ-র অর্ধেক নিয়েন্ডারথল অর্ধেক ডেনিসোভান। সংকর। মা নিয়েন্ডারথল বাবা ডেনিসোভান। মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ থেকে মায়ের পরিচয় জানা হয়ে গেল। আর নিউক্লিয়ার ডিএনএ থেকে বাকি তথ্য। যেমন এক্স ক্রমোজম থেকে জানা গেল এটি নারীদেহাস্থি, অটোজম থেকে তার বংশধারা।


এবার এই ৯০ হাজার বৎসর আগে জন্ম নেওয়া ১৩ বৎসর বয়সি অসাধারণ এই কিশোরির নাম রাখা হল ডেন্নি।


জানা গেল ডেন্নির মা নিয়েন্ডারথল। বাবা ডেনিসোভান। তা ছাড়া ডেন্নির ডেনিসোভান বাবারও কয়েক প্রজন্ম আগের পূর্বপুরুষ ছিল নিয়েন্ডারথল।

  

এই ডেন্নির বাবার তথ্য বলে ডেনিসোভান-নিয়েন্ডারথলদের বহুপ্রজন্ম ধরেই ঘণিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ডেনিসোভান-নিয়েন্ডারথল সংকর সন্তান হিসাবে ডেন্নির জন্ম কোন আচমকা ঘটনা না, বরং স্বাভাবিক ঘটনা।

 

ডেন্নির নিয়েন্ডারথল মায়ের জিন থেকে জানা গেল তার পূর্বপুরষরা ছিল ক্রোয়েশিয়ার বাসিন্দা। এর অর্থ দাঁড়াল, সম্ভবত খুব বেশি বৎসর আগেও না, ক্রোয়েশিয়ার নিয়েন্ডারথলরা এই দিকে চলে আসে। সম্ভবত আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য। তার সাথে এটুকুও বোঝা গেল, কয়েক প্রজন্ম ধরেই পূর্ব ইয়োরোপের প্রান্তের নিয়েন্ডারথল আর সাইবেরিয়ার ডেনিসোভানদের প্রিয় মিলনকেন্দ্র ছিল এই হিম শীতলগুহাটি। 

 

কেমন করে ডেন্নির মৃত্যু হল সেটা জানা সম্ভব না, ছোট্ট হাড়ের টুকরো থেকে।

 

তবে হাড়ের টুকরোতে যে অ্যাসিড ছিল তা বলে এই হাড় নেকড়ের পেটে ছিল একসময়। তাহলে কি ডেন্নিকে গুহা-নেকড়েই কামড়ে খেয়েছিল? এমন একটা সম্ভবনা একেবারে অসম্ভব না হলেও খুব সম্ভবও না। ১৩ বৎসরের ডেন্নি আমাদের হিসাবে কিশোরি। কিন্তু নানা বিশদ জেনেটিক বিশ্লেষণ ও গবেষণায় অনুমান করা হয় নিয়েন্ডারথল ডেনিসোভান এরা আমাদের স্যাপিয়েন্সদের চেয়ে দ্রুত বড় হত, বা পরিণত হত। ফলে ১৩ বৎসরের ডেন্নিকে আমরা সমর্থ যুবতী বলেই ভাবতে পারি। সেক্ষেত্রে নেকড়ের আক্রমণ তার মৃত্যুর কারণ নাও হতে পারে। 

 

সেক্ষেত্রে ডেন্নির হাড়ে নেকড়ের অন্ত্রের অ্যাসিডের ব্যাখ্যা হিসাবে বলা যায়, নেকড়ে তো মৃতদেহ খুবলে খায়ই।


ডেনিসোভা গুহার পড়ে থাকা অসংখ্য হাড়ের টুকরোর মধ্যে থেকে ডেন্নির হাড়ের টুকরো খুঁজে পাওয়া একেবারে অসম্ভব সম্ভব হওয়া ঘটনা। 

বিজ্ঞানী স্বান্তে পাবো বলেনঃ এটা খড়ের গাদা থেকে সুঁচ বের করার মত, শুধু এখানে সুঁচ যে আছে সেটাও জানা ছিল না।


তথ্যসূচীঃ-

 1. Meet Denny, the ancient mixed heritage mystery girl. : The Observer Evolution: The Guardian.


2. The Genome of the offspring of a Neanderthal mother and a Denisovan mother.  : Viviane Slon, Fabrizio Mafessoni, Benjamin Venot, Cesare de Philippo, Stefi Grote, Bence Vola, Mateja Hajdinjak, Stephane Peryegne , [Sarah Nagel](https://www.nature.com/articles/s41586-018-0455-x#auth-Sarah-Nagel-Aff1), Samantha Brown, Katerina Douka, Tom Higham, Maxim B. Kozlikin, Michael V. Shunkov, Anatoly P. Derevianko, Janet Kelso, Matthias Meyer, Kay Prüfer  and Svante PääboPublished in : nature.


Picture Credit> An artist’s impression of the teenage Denny. Photograph: John Bavaro/early-man.com Via The Guardian.

ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ছবিটির সবরকম বানিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ

কোন মন্তব্য নেই:

বাত ব্যথা হলেই হোমিও ঔষধের  আবশ্যকতা হয়ে পরে,— গেঁটে বাত (Gout)। ---

 🎋বাত ব্যথা হলেই হোমিও ঔষধের  আবশ্যকতা হয়ে পরে,— গেঁটে বাত (Gout)। --- 🔖 Ledum Palustre 30 🌹 প্রধান লক্ষণ: ▪ গেঁটে বাতের ব্যথা, যা নিচ থে...