এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫

নজরুলের চিকিৎসা বিড়ম্বনা ও অজানা তথ্য (১-ম পর্ব ) ::::(সৌজন্যে: শুভাশীষ ঘোষ)

 নজরুলের চিকিৎসা বিড়ম্বনা

ও অজানা তথ্য (১-ম পর্ব ) ::::


বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম অকস্মাৎ বাকরুদ্ধ হন ১৯৪২ সালের ১০ জুলাই। ১৯৪২ সালের ১৭ জুলাই কবির অসুখের অষ্টম দিবসে কাজীর শাশুড়ি গিরিবালা দেবীর বিবৃতি অনুসারে কাজী নজরুলের জিহ্বার আড়ষ্টতা ক্রমেই বেড়ে চলছে। সকাল থেকেই তিনি উত্তেজিত এবং বেশ জোরেশোরে চেঁচিয়ে ক্রোধের সাথে কথা বলছেন। তবে তার সব কথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। গিরিবালা দেবীর চিঠি পেয়ে চুরুলিয়া থেকে কাজীর বড় ভাই ও ছোট ভাই সাহেবজান ও কাজী আলী হোসেন ইতোমধ্যে চলে এসেছেন। তারা দুজনে বললেন ডা. বিধান চন্দ্র রায়কে (১৮৮২-১৯৬২ খ্রি.) দিয়ে দেখাবার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় কি না। কবির চেহারা বিমর্ষ, দীপ্তিহীন।


নির্জীব, নিস্তেজ অবস্থায় তিনি বিছানায় পড়ে রয়েছেন।

অসুখের শুরু থেকেই কবির খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে একটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ঠিক উন্মাদের মতোই তাড়াহুড়া করে আবার কখনো বা বাঁ হাতে তিনি খাবার মুখে পুরে দিতেন। তার শাশুড়ি গিরিবালা দেবী মাছের কাঁটা বেছে না দিলে নিজে কাঁটা ছাড়িয়ে খাওয়ার খেয়ালও তার লোপ পেয়ে গিয়েছিল। সে দৃশ্য বড়ই করুণ। তবে এই অসুখের বেলায়ও তার খাওয়ার রুচি হ্রাস পায়নি। বেশ খেতে পারতেন।


কিছু দিন পর কবির আবার এক নতুন উপসর্গ দেখা দিল। কোনো কোনো দিন অস্বাভাবিকভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়তে লাগলেন এবং স্বগত অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে শুরু করলেন। ক্রমে ক্রমে এমনি অবস্থা দাঁড়াল যে, তার পাগলামির জন্য তাকে বাড়িতে রাখা একরকম অসম্ভব হয়ে উঠল। সেই ছোট্ট বাড়িটার একটা ছোট্ট কামরায় তাকে আবদ্ধ করে রাখা হলো। কিন্তু সেখানেও বাহ্য-প্রস্রাব করে নোংরা করতে শুরু করলেন। একেক দিন এমনও দেখা গেল যে, মলমূত্র ত্যাগ করে সেই কামরাতেই তিনি সেগুলো দুই হাতে চটকাতে থাকতেন এবং কাপড়-চোপড় ছুড়ে ফেলে দিয়ে উলঙ্গ হয়ে বসে আছেন। কখনো বা বিড়বিড় করে, আবার কখনো বা জোরে জোরে নানা ধরনের শালীনতাহীন উক্তি করেছেন।


সে সময় ওই কামরায় কারো যাওয়ার সাহস হতো না, কবির কনিষ্ঠ সহোদর কাজী আলী হোসেন তখন তার চুরুলিয়ার বাড়ি থেকে এসে এখানে দিনকয়েক ছিলেন। তিনি কবির চেয়েও যথেষ্ট বলিষ্ঠ চেহারার শক্তিমান পুরুষ। অধিকাংশ সময় কবিকে কবির কনিষ্ঠ সহোদর কাজী আলী হোসেন কবিকে ধরে নিয়ে পাশের বাথরুমে কলতলায় নিয়ে গিয়ে গা ধুয়ে কাপড় বদলিয়ে দিতেন এবং কবির মাথায় তেল দিয়ে চুল অাঁচড়িয়ে তাকে সভ্যভব্য করে তুলতেন।


সামনে খাবার নিয়ে দিলে কোনো কোনো সময় খেয়েছেন, আবার কখনো বা ভাত-তরকারি কিংবা অন্য যে কোনো খাবার হোক, হাত দিয়ে চটকিয়ে মেঝের ওপর লেপে দিয়েছেন এবং সেই চটকানো হাত মাথায় ঘষেছেন। কবির কী নিদারুণ চেহারা, কী নিদারুণ দৃশ্য। শুধু দুই চোখ ফেটে প্রিয়জনদের দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়েছে।


শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক নজরুলের অসুস্থতার খবর শুনে টেলিফোনে ডক্টর শ্যামা প্রসাদকে (তৎকালীন অর্থমন্ত্রী) বললেন, 'শ্যামা প্রসাদ, কবি নজরুল ইসলাম অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি যতটুকু শুনলাম তাতে প্যারালাইসিস বলেই মনে হচ্ছে। ডা. বিধানকে দেখানোর জন্য আমাকে এসে ধরেছে। বিধান রায়কে দিয়ে নজরুলকে দেখানোর ব্যবস্থা তুমি করে দাও। আমার সময় কই?' ১০ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত নজরুলের অসুস্থতার সব ঘটনা ডক্টর মুখার্জি শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়লেন। তিনি বললেন, কবি নজরুলের আর্থিক ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন? কবির আর্থিক অবস্থা কেমন? গিরিবালা দেবী বললেন, আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। দেনার দায়ে তিনি ডুবে রয়েছেন। ড. শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি শিউরে উঠলেন। কী বলছেন আপনি? কবি নজরুল দেনার দায়ে ডুবে রয়েছেন। তমিজ উদ্দিন তখন অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী তার কাছে গেলে শফিকুল ইসলাম (তখন তিনি ছাত্র) বলে উঠলেন, নজরুল ইসলামের অসুখ তো এখানে কেন? তমিজ উদ্দিন সাহেব কী করবেন? হক সাহেবের কাছে গেলে ভালো হয় না? মুসলিম সমাজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যে 'নবযুগে' লিখছেন সেই কবিকে মুসলমান কেন সাহায্য করতে যাবে? একজন মুসলমান হিসেবেই এই কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে কবি নজরুল ইসলাম বর্তমানে মুসলিম স্বার্থবিরোধী লোক। হক সাহেবের কাছে গেলে হক সাহেব সব শুনে বললেন, 'নজরুলকে রাঁচি পাঠিয়ে দাও। পাগলের জন্য রাঁচিতে গভর্নমেন্ট সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখে দিয়েছে। বাড়িতে রেখে কি পাগলের কোনো চিকিৎসা করা যায়?'


কমিটি গঠন করা হলো কবি নজরুল ইসলামের অসুখের চিকিৎসার ব্যাপারে। এরপর ড. শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি কয়েকজন মুসলমানের নাম করলে কমিটি গঠিত হলো_

১. ড. শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়_ প্রেসিডেন্ট ও কোষাধ্যক্ষ

২. সজনীকান্ত দাস (শনিবারের চিঠির সম্পাদক)_ যুগ্ম-সম্পাদক

৩. জুলফিকার হায়দার_ যুগ্ম-সম্পাদক

৪. সৈয়দ বদরুদ্দোজা_ সদস্য

৫. স্যার এ এফ রহমান_ সদস্য

৬. তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়_ সদস্য

৭. হুমায়ুন কবির_ সদস্য

৮. কবিরাজ বিমলানন্দ তর্কতীর্থ_ সদস্য

৯. সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার_ সদস্য

১০. তুষারকান্তি ঘোষ_ সদস্য

১১. চপলাকান্ত ভট্টাচার্য_ সদস্য

১২. গোপাল হালদার_ সদস্য।


এই নজরুল ফান্ড উৎসাহের সঙ্গেই বেশ কিছু দিন টাকা সংগ্রহ করেছিল বলে আমরা জানি। কিন্তু মাত্র ২০০ টাকা করে তিন মাসে মোট ৬০০ টাকা তারা কবিপত্নীকে দিয়েছিলেন। চতুর্থ ও পঞ্চম মাস কেটে গেলেও তারা টাকা পাঠাননি। পরবর্তী মাস থেকে আর কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। কবির আর্থিক দুরবস্থা আরো চরমে উঠেছিল। আর তারই সুযোগ নিয়ে কলকাতা শহরে এবং মফস্বল অঞ্চলেও টাকা রোজগারের ফন্দিফিকির হিসেবে একে অন্যের সাথে যেন প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছিল। নানারকম ভুয়া ফান্ড, সমিতি ও লটারি খেলা কবির নামে পর্যন্ত শুরু হয়ে গেল।


পীড়িত কবি নজরুলকে সাহায্য করতে গিয়ে এই আশ্চর্য এবং অবিশ্বাস্য মানুষ এবং মানুষের চরিত্র বোঝা গেছে সেই সময়। স্বার্থ ও অর্থ কী সাংঘাতিক জিনিস। এরপর নিজ দেশে নজরুল আর ভালো করে অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারেননি। অদৃষ্টের এ এক নির্মম পরিহাস!

(সৌজন্যে: শুভাশীষ ঘোষ)

কোন মন্তব্য নেই:

রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫

 রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সংবাদ তারিখ ২৫-০৬-২০২৫ আজকের সংবাদ শিরোনাম বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা --- পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টি...