🔸🏖️লাইকোপোডিয়াম, সালফার, এবং গ্রাফাইটিস, তিনজনে হাজির হয়েছে।
সালফার---- তারপর বলো গ্রাফাইটিস মটু কি খবর?
গ্রাফাইটিস--- আচ্ছা, আমি মোটা তাতে তোমার এত গাত্রদাহ কেন বলতো ভাই সালফার?
তোমার মতন, ফসফরাসের মতন, ক্যালকেরিয়া ফসের মতন, টিউবারকিউলিনামের মতন ,
কি লম্বা ঢ্যাং হবো?
তোমার চেহারার কি ছিরি!
তাও যদি তুমি ফসফরাসের মতন দেখতে একটু সুন্দর হতে তাও বুঝতাম!
সালফার---এত বড় কথা তুমি বলতে পারলে মোটুরাম ?
ফসফরাস আমার থেকে সুন্দর?
ফসফরাস আমার থেকে বেশী শিক্ষিত?
গ্রাফাইটিস--- ফসফরাস তোমার থেকে আলবৎ সুন্দর, তোমার মতন অমন কুঁজো চেহারা আর লাল টকটকে ঠোঁট নয় তার ,
তোমার ঠোঁট দেখলে মনে হয় যেন সবসময় পান সুপারি খাচ্ছো!
যাই বলো দাদা, তুমি ভীষণ অপরিষ্কার আর অপরিচ্ছন্ন!
কিছু মনে করো না দাদা, আমি তোমাকে বহুদিন ধরে দেখছি তুমি প্রায়ই ঘা, পাঁচড়া, ফোঁড়া, ছুলি, দাদ, চুলকানি, ইত্যাদিতে ভোগো! একটু পরিষ্কার থাকতে পারো না?
তাছাড়া প্রায়ই দেখি তুমি বোগলে বা নাকে আঙুল ঢুকিয়ে সেই আঙুল শুঁকতে থাকো, তোমার এমন বদ অভ্যাস কেন বলতো?
কিছু মনে করো না দাদা, তোমার এইসব দেখে আমার মনে হয় তুমি শুধু শারীরিক অপরিচ্ছন্ন নও, তুমি মানসিক অপরিচ্ছন্নও বটে!
সালফার --- মোটু গ্রাফাইটিস তুমি আমার সম্মন্ধে বড্ড বেশী কটুকথা বলছো, আমি যদি তোমার সম্মন্ধে বলি তাহলে ক্লাবের সবাই তোমাকে ছি! ছি! করবে,
আর আমারই শুধু ঠোঁট লাল দেখছো ? কেন লাল ঠোঁট তো বেলেডোনা, ল্যাকেসিস, স্যাঙ্গ ক্যান, টিউবারকিউলিনামদেরও আছে,
তা কি তুমি দেখতে পাও না?
লাইকো---- এই তোমরা দুজনে কি শুধু বাক-বিতন্ডাই করবে? থামো!
দেখো, চর্মরোগে ভোগার দিক দিয়ে আমি যা বুঝি তোমরা দুজনেই সমান। কেন গ্রাফাইটিস-- তোমার শরীরের চামড়াও তো খুব খারাপ,
তোমার নাকের পাতায় বা নাকের পাতার কোনে, চোখের পাতায় বা চোখের পাতার কোনে, ঠোঁটের কোনে, সমসময় আমি ফাটতে দেখি, আর ওসব জায়গা থেকে সবসময় রস বেরুতেও দেখি ! তুমি নিজেও আমাকে বলেছো-- তোমার কুঁচকি ও মলদ্বারের চারপাশে ভীষণ ফাটে আর মধুর মতন চটচটে রস বেরোয়! তাই শুধু সালফারকে দোষ দিলে আমি মানবো না বাপু!
সালফার-- এটাই হলো মনুষ্য সমাজের বড় দোষ লাইকো কাকু!
আমরা নিজেদের দোষ দেখতে চাই না, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের মুখ দেখতে চাই না!
আমরা আসলে অনেকেই খেয়ুর গাওয়া সঙ, নিজেরা কাক হয়ে ময়ুর সাজতে চাই।
আমাকে তোমরা নোংরা বলো!
কিন্তু আমি যে একজন উচ্চ শিক্ষিত, আমি যে নাটক, থিয়েটার করতে পারি, গান গাইতে পারি, কবিতা লিখতে পারি,
তার মর্যাদা তোমরা কোনদিনও দিলে না!
এই তো আজ ভোর ৫ টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠেই একটা গান লিখবো ভাবছিলাম, কিন্তু হঠাৎ মলত্যাগের বেগ আসায় সব গোলমাল পাকিয়ে গেল। গানটা আর লেখা হলো না!
আমার তো ঐ একটা বাজে রোগ লাইকো কাকু--- রোজ ভোরে ঘুম থেকে উঠেই মলত্যাগ করতে দৌড়াতে হয়,
লাইকো --- তাছাড়া সালফার, আমি জানি-- সকালে ঘুম থেকে উঠেই তোমার মতন মলত্যাগ করতে দৌড়ায় এমন লক্ষন---
এলো, ব্রায়োনিয়া, নেট্রাম মিউর, নেট্রাম সালফ, ফসফরাস, পডো, সোরিনাম, এদেরও আছে! তাই তোমার একার এই রোগ তা ভেবো না!
তবে তোমার আর এলোর যেমন মলত্যাগের বেগ নিয়েই ঘুম ভাঙে,
ব্রায়োনিয়া আর নেট্রাম সালফের তা নয়, এদের দুজনের আবার ঘুম থেকে বেগ নিয়ে উঠতে হয় না, এরা ঘুম থেকে উঠে যদি চুপচাপ বসে থাকে তবে কোনরকম মলত্যাগের বেগ হয় না, কিন্তু যেই না একটু নড়াচড়া করে অমনি মলত্যাগের বেগ পায়,
ঐ যে ফসফরাস ছোকরা ঢুকছে!
আরে এসো! এসো ছোকরা!
কদিন দেখি না কেন তোমাকে?
ফসফরাস---- কি যে বলো জেঠু, কদিন ধরে ওয়েদারটা কি গেল বল তো? ঝড়বৃষ্টি সব বছর হয়, কিন্তু এত বাজ কোন বছর পড়তে দেখেছো?
গ্রাফাইটিস---কেন তুমি বাজ পড়লে ভয় পাও নাকি?
ফসফরাস -- ভাল কথা বললে বাপু! বাজ পড়লে ভয় পায় না এমন লোক কেউ আছে গো? তার উপর কদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগও ছিল না। অন্ধকারে আমার ভয় করে, গা ছমছম করে, আর আমার এমনই পোড়া কপাল, এই কদিন সন্ধ্যা হতেই চারিদিকে ঘন অন্ধকার নেমে আসতো। গতকাল বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া গেছে তাই রক্ষে!
ওহ! ভীষণ পিপাসা পেয়েছে। তোমরা তো সবাই আবার এই প্লাষ্টিকের বোতলে ভরা জল খাও, যা গরম হয়ে যায়! বড় বিরক্ত লাগে আমার! কতবার বললাম--- ফান্ডের টাকা দিয়ে ক্লাবে একটা ছোট ফ্রিজ কেনা যাক, একটু ঠান্ডা জল যেন সবাই খেতে পারি, তা আমার কথার কোন গুরুত্বই দিল না কেউ!
যাই বাইরে -- কোল্ড ড্রিঙ্কস বা আইসক্রিম কিছু পাই না কি দেখি!
লাইকো--- ওহে ফসফরাস,
শুধু ঠান্ডা জল আর আইসক্রিম খাওয়ার জন্য একটা ফ্রিজ কেনার কোন মানে হয় না। ভাই, অল্প বয়স, তাই টাকার গুরুত্ব এখন বুঝবে না, এখন থেকে একটু মিতব্যয়ী হও, আর প্রতি মাসে কিছু কিছু টাকা জমানো অভ্যাস করো!
ভবিষ্যতে কোন বিপদে পড়লে টাকাই তোমাকে দেখবে! অন্য কেউ দেখবে না।
এই দ্যাখো! আমার আবার মাথাব্যথা শুরু হচ্ছে, বেশ ক'দিন ধরে দেখছি, বিকাল ৪টা /৫ টা হলেই আমার মাথাব্যথাটা আরম্ভ হচ্ছে, তবে কিছু একটু খেলেই কমে যায় ।
ভাই ফসফরাস, বাইরে যখন যাচ্ছো -- আমার জন্য ২ টি গরম রসগোল্লা এনে দিও না!
ফসফরাস ----- এত বয়স হয়েছে তোমার জেঠু, তবু বাচ্চাদের মতন মিষ্টি খাওয়ার প্রবনতা গেল না,
কি করে যে এত মিষ্টি খাও বুঝি না বাপু, আমার তো মিষ্টি খাওয়ার কথা শুনলেই গা ঘ্যানঘ্যান করে।
গ্রাফাইটিস---- ঠিক বলেছো ফসফরাস, আমারও! মিষ্টি দেখলেই, এমন কি মিষ্টির কথা শুনলেই আমার গা ঘ্যানঘ্যান করে! আমি মোটেই মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করি না।
লাইকো---- ওহে গ্রাফাইটিস, ওহে ফসফরাস, জেনে রাখো----
মিষ্টি খাবার ময়রাদের এক অপূর্ব সৃষ্টি,
যেখানেই থাকুক না কেন পড়বে আমার দৃষ্টি।
তাছাড়া বাপু, তোমরা দুজনে না খেতে পারো,
কিন্তু ---আর্জেনটাম নাইট্রিকাম, ক্যালকেরিয়া কার্ব, চায়না, ক্যালি কার্ব, মেডোরিনাম, সিপিয়া, টিউবারকিউলিনাম, আমাদের এই সালফারবাবু , এরা তো সবাই মিষ্টি খায়, তাহলে বলতে চাও -- এরা সবাই বোকা?
ফসফরাস---- থাক জেঠু, আর তোমার লেকচার শুনে লাভ নেই,
দাও, মিষ্টি আনার টাকা দাও,
লাইকোপোডিয়াম---- আরে দেবোখোন পরে , তুমি আনো না।
তোমার কাছে কি ২০ টা টাকা বেশী নেই?
ফসফরাস ---- আছে, তবে তুমি কারুর টাকা পয়সা বাকী থাকলে পরে আর দিতে চাও না, তুমি বড্ড কৃপনতা করো জেঠু!
ঐ যে আবার ফিটফাট বাবু ঢুকছে!
লাইকো ---- কে?
ফসফরাস ---- কে আবার, সবসময় দেখছো না---
কে গিলে করা, আয়রন করা ধপধপে সাদা পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে ভালো সাদা ধূতি কুঁচি দিয়ে পরে?
কে চকচকে একজোড়া নাগরা জুতো পায়ে গলিয়ে, হাতে তেলমাখানো লাঠিটা নিয়ে ঢোকে?
দেখো, আজকের লাঠিটার মাথা আবার রুপা দিয়ে বাঁধানো! মনে হচ্ছে দাদুর এটা নতুন লাঠি!
লাইকো---- ও বুঝেছি, আর্সেনিক বাবু , আমাদের আর্সেনিকবাবু ঢুকছে, তা ঢুকুক।
কিন্তু ব্যাটা ঢুকেই বলবে ফ্যানটা বন্ধ করো, বড্ড শীত করছে, মহাজ্বালা!
Cd
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন