বর্তমানে যারা অধিক আর্থিক সমস্যায় আছেন।
অপ্রত্যাশিত আর্থিক সংকটে পড়েছেন যারা, আপনার আয় কমে গেছে, খরচ কমেনি। আপনি এখন দিশেহারা। কেউ কেউ চিন্তা করবে বলে পরিবারকে এ বিপর্যয়ের কথা বলেননি। পুরো চাপ একা নিয়েছেন। খাবার টেবিলে হেসেছেন, সে হাসির পেছনে যে রক্তবর্ণ বেদনা লুকিয়ে আছে তা কাউকে বুঝতে দেননি।
ভেতরে ভেতরে আপনি শেষ হয়ে গেছেন। চাপ সইতে না পেরে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবেন।
এ মৃত্যুগুলো যে কী ভয়াবহ কষ্টের তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এ ব্যাপারে বাদল সৈয়দের কিছু পরামর্শ এখানে দেয়া হলো। কাজে লাগতে পারে।
•
১. দয়া করে পরিবারের সাথে সমস্যা শেয়ার করুন। তাঁরা আজ বা কাল ব্যাপারটা জানবেনই। তাই গোপন না করে তাঁদের নিয়েই পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।
২. প্রয়োজনে নাটকীয়ভাবে জীবনযাত্রার খরচ নামিয়ে আনুন। মিডল ক্লাসের প্রচলিত 'ইগো'র কারণে আমরা অযথা অনেক খরচ বাড়িয়েছি। সেগুলো চাইলে বাদ দেয়া যায়। কম দামের বাড়িতে শিফট করুন। গাড়ি বিক্রি করে দিন। অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিন। কে কী বললো সেদিকে পাত্তা দিবেন না, এখন টিকে থাকাটাই মুখ্য।
৩. বাচ্চাদের স্কুল খরচ খুব বেশি হলে তাও বদলে ফেলুন। স্কুলের পরিচয়ে ছাত্রছাত্রীদের আখেরে কোনো লাভ হয় না। কাজ হয় তার রেজাল্টে। সেটা যেকোনো ধরনের স্কুল থেকেই করা যায়। তুলনামূলক কম খরচের স্কুলে বাচ্চাদের শিফট করে নিজে তাদের পড়াশোনা তদারক করুন।
৪. সময়টা খুব খারাপ। তাই কোনো সমস্যা না থাকলেও মাঝে মাঝে ইসিজি করিয়ে ডাক্তারের সাথে আলাপ করুন।
৫. সমস্যা নিয়ে ভাইবোনের সাথে আলাপ করুন। পরিবারের যে ভাই বা বোন বিপদে পড়েছেন, তাঁকে অন্যরা আগলে রাখুন। টাকা গেলে টাকা আসবে। ভাইবোন গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। এই কঠিন সময়ে সবাই এক ছাতার নিচে আশ্রয় নিন। একজনের উষ্ণতা দিয়ে আরেকজনকে রক্ষা করুন।
৬. এ দুঃসময়ে পরিবারের সদস্যরা যুথবদ্ধ থাকুন। পরিবারের সবার সম্মিলিত আয় যদি সবার কাজে লাগানো যায় তাহলে সবাই উপকৃত হবেন। স্থায়ী বেদনাকে আমন্ত্রণ জানানোর চেয়ে এটা অনেক ভালো। মনে রাখবেন, যে মেষ শাবক পালছুট হয়, সে-ই বাঘের কবলে পড়ে। আমি মনে করি, পরিবারের সমস্যাগ্রস্ত সদস্যকে রক্ষা করার জন্য যুথবদ্ধ পরিবারের যুথবদ্ধ আর্থিক পরিকল্পনা অনেক বড় ওষুধ হিসেবে কাজ করবে।
৭. দয়া করে সমস্যার কথা বন্ধুদের বলুন। আর যেসব বন্ধুরা ভালো আছেন, তাঁরা বিপদগ্রস্ত বন্ধুকে আগলে রাখুন। প্রয়োজনে তাঁর জন্য 'বেইল আউট' প্ল্যান করুন। সবাই হাত লাগালে বিপন্ন বন্ধুটিকে আবার দাঁড় করিয়ে দেওয়া মোটেও অসম্ভব নয়।
৮. মধ্যবিত্তের যে ইগোর কথা বলছিলাম তা বাদ দিয়ে আয়ের বিকল্প উৎস বের করুন। যেমন, ছাত্রজীবনে যিনি টিউশনি করতেন, তিনি প্রয়োজনে তাতে ফিরে যান। যাদের বাড়িতে জায়গা আছে, তাঁরা কৃষি থেকে আয়ের ব্যবস্থা করুন। পুকুর থাকলে মাছ চাষ করুন, হাঁস-মুরগি পালন করুন। বাড়ির মহিলারা সেলাই কাজ, হোম মেইড ফুড এধরণের ছোটো ছোটো উদ্যোগ নিন।অনলাইন/অফলাইনে বিক্রি করুন। সততাকে পুঁজি করলে ক্রেতার অভাব হবে না।
৯. প্রতি বছর পুনর্মিলনী/ রি-ইউনিয়নের বন্যা আমরা দেখি। লাখ লাখ টাকা এসব অনুষ্ঠানে খরচ হয়েছে। এসব অ্যালামনাই এসোসিয়েশন প্রত্যেক সদস্যের বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারেন। নয়ত এসব মিলনমেলা একটি লোক দেখানো মূল্যহীন ব্যাপার বলে প্রমাণিত হবে।
১০. সবশেষে বলি, বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য হচ্ছেন নিঃসঙ্গ শেরপা। তাঁকে একাই লড়াই করতে হয়। এ একাকী যোদ্ধাকে বাড়ির সবাই স্বস্তি দিন, যত্ন করুন, মায়ায় ডুবিয়ে রাখুন। তিনি যাতে অযথা চাপে না পড়েন সেদিকে নজর দিন।
•
দশ মিনিটের বুকে ব্যথায় যিনি মারা যাচ্ছেন, তা আসলে দশ মিনিটের ব্যথা নয়, দিনের পর দিনের ব্যথা। অনিশ্চয়তার এ দীর্ঘ ব্যথার চাপ আসলে তিনি আর নিতে পারেননি। একমাত্র আমাদের সম্মিলিত হাত সে বুকে রাখলেই এ ব্যথা কমবে।
__________________
বাদল সৈয়দের স্ট্যাটাস থেকে সংকলিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন