এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

অন্য রকম বউ এর গল্প কিছু কথা কিছু হাসি ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 আমি কখনোই বউকে মার্কেটে নিয়ে যেতে পছন্দ করতাম না। 


বিয়ের পরপর  দুই তিনবার বোধহয় যাওয়া হয়েছিল। মার্কেটে এই দোকান থেকে ঐ দোকানে ঘোরাঘুরি ভালো লাগতো না। আমি টাকা দিতাম,সে কিনে আনতো। যখন বাচ্চারা হলো, তখনো আমি টাকা দিতাম,সে পছন্দ করে বাচ্চাদের জামা কাপড় কিনে আনতো।


 বিয়ের বহু বছর পর, কাজ সেরে একবার বসুন্ধরা সিটি গেছি একটা জনপ্রিয় ইংরেজি মুভি দেখতে। মুভি আরম্ভ হতে কিছুটা দেরি হবে,আমি টিকিট কেটে ফুডকোর্টের এক কোনায়  এককাপ কফি নিয়ে বসলাম টাইম পাস করার জন্য। 

 

কফি খাচ্ছি, সামনের টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখি,আমার বন্ধু আরফান আর ওর বউ। আমি কফি হাতে নিয়ে ওদের টেবিলে গেলাম। আরফান আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলো। 


ওর বউকে বেশ উৎফুল্ল মনে হলো।


টেবিলের উপর অনেকগুলো ব্যাগ। বুঝা যাচ্ছে বেশ কেনাকাটা করেছে। আমি মজা করে  বললাম, ভাবী, আরফানকে আজ ফতুর করে ছেড়েছেন, দেখছি!


ভাবী বললেন, না ভাই, আমি এতোকিছু কিনতে চাইনি, আপনার বন্ধু পছন্দ করে জোর করে কিনে দিয়েছে।


ভাবী একটা একটা করে ব্যাগ খুলে আমাকে দেখাতে লাগলেন। ভাবী  একটা জিনিস দেখাচ্ছেন আর বর্ননা করছেন আরফান কীভাবে কোন জিনিসটা পছন্দ করেছে। তার খুশি উপচে উপচে পড়ছে!


আমি জিনিসপত্র দেখছি আর ভাবছি,আরফানের বউ  কতো আগ্রহ নিয়ে তার জামাইয়ের পছন্দ করে কেনা জিনিস দেখাচ্ছে। আচ্ছা,  আমার বউয়ের কী এমন ইচ্ছে করে ?


অনেকদিন পর আমার মনে হলো,আহা! কতদিন বউকে নিয়ে মার্কেটে আসা হয় না!


 তারও নিশ্চয় ইচ্ছে করে করে স্বামীর হাত ধরে মার্কেটে ঘুরে বেড়াতে। সেও চায় তার স্বামী তাকে পছন্দ করে কিছু কিনে দিক। মুখে হয়তো কিছু বলে না।


আরফান আর তার বউ চলে গেছে।


 আমি চুপচাপ খালি কফি মগ হাতে নিয়ে বসে আছি। নিজের মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো। মানিব্যাগ খুলে দেখলাম, বেশি টাকা  নাই,তবে এটিএম কার্ড আছে। 


মুভি দেখার টাইম চলে যাচ্ছে। আমার উঠা দরকার, উঠতে পারছি না। 


আমি মোবাইলটা হাতে নিলাম, বউকে ফোন দিয়ে বললাম, তুমি বাচ্চাদের রেখে এক ঘন্টার মধ্যে আমার এখানে চলে আসতে পারবে? একটা সিএনজি নিয়ে চলে আসো।


বউ ভয় পাওয়া গলায় বললো,কী হয়েছে তোমার?  শরীর খারাপ করেনি তো?


আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, মনে হচ্ছে শরীর কিছুটা খারাপই হয়েছে। তুমি কি আসতে পারবে?


বউ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, তুমি এখন কোথায়?


আমি বসুন্ধরা সিটির লেভেল এইটে আছি।


হায় আল্লাহ! তুমি ওখানেই বসে থাকো,আমি এক্ষুনি আসছি। আমি না আসা পর্যন্ত ওখান থেকে উঠবে না!


এক ঘন্টার কম সময়ে বউ এসে হাজির। সে এসেই আমার কপালে ঘাড়ে হাত বুলাতে লাগলো,জ্বর এসেছে কিনা যাচাই করার জন্য!


আমি হাসিমুখে  বললাম,  আমার কিছুই হয় নাই, আজ দুইজন মিলে একসাথে মুভি দেখবো,এজন্যই তোমাকে ফোন করে এনেছি। আগে এককাপ কফি খেয়ে ঠাণ্ডা হও।


তবুও তার উৎকন্ঠা যায় না, সে বারবার কপালে,বুকে হাত বুলাতে লাগল। ডাক্তার দেখাতে তাগাদা দিতে লাগল। লোকজন অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল। 


আমি দুটো কফি অর্ডার করলাম। 


বউ কফি খাচ্ছে আর আমার দিকে সন্দেহ নিয়ে  তাকাচ্ছে। সে পরিস্হিতি বুঝার চেষ্টা করছে।  এমন একজন মানুষকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করছে,যার সাথে সে পরিচিত নয়!


আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। 


লজ্জা গোপন করে  হাসতে হাসতে বললাম, ভয় পাওয়ার কিছু নাই,তোমাকে খুন করার জন্য এখানে আনা হয় নাই। আমি জানি,তোমার নামে তোমার বাবা একটা জমি আলাদা করে রেখেছেন বাড়ি করার জন্য,এখন খুন করলে সেই জমি আমি পাবো না। তোমাকে খুন করলে আমার লস হয়ে যাবে। কফিটা আরাম করে খাও।


কফি খাওয়া শেষ করে বললাম, চল, মুভি দেখবো।


বউ অবাক হয়ে বলল, মাথা খারাপ! বাচ্চাদের বাসায় রেখে এসেছি না? আগে বললে বাচ্চাদের নিয়ে আসতাম!


আমি রোমান্টিক মুড নিয়ে বললাম,  আরে দূর! বাচ্চাদের সামনে তোমার সাথে প্রেম করতে পারতাম নাকি!


বুড়ো বয়সে ভীমরতি কেন হলো, জানতে পারি?


জানি না,হঠাৎ প্রেম করতে ইচ্ছে হল,কাউকে না পেয়ে ভাবলাম,তোমাকেই ফোন করি!


আচ্ছা, তাহলে এই ঘটনা!


একটা শাড়ির দোকানে গিয়ে আমি নিজে একটা শাড়ি পছন্দ করলাম,যা আগে কখনোই করিনি। বউকে বললাম, দেখ তো শাড়িটা পছন্দ হয় কিনা!


বউ বলল, তুমি একটা জিনিস পছন্দ করে দিবে,আমার পছন্দ হবে না, তা কি হয়? কিন্তু তুমি আজকে এই দামী শাড়ি কিনছো কেন? বাসায় তো আমার প্রচুর শাড়ি আছে। ওগুলোই ঠিক মতো পরা হয় না। কোন অনুষ্ঠানে গেলে একটু আধটু পরি।


শাড়ি কিনে গেলাম কসমেটিক্সের দোকানে। তার পছন্দসই অনেক জিনিস কিনলাম। বাচ্চাদের  জন্যও কিছু কেনাকাটা হলো। আগে তাকে নিয়ে দোকানে ঘুরতে বিরক্তি বোধ করতাম,আজকে সারাক্ষণ তার হাতটা ধরে রাখলাম।


কেনাকাটা করে খেতে গেলাম। সে খাচ্ছে আর গল্প করছে। আমার মনে হলো,বউ অনেকদিন আমার সাথে এতো আনন্দ নিয়ে গল্প করেনি। তার প্রতিটি কথায়,  খুশি উপচে উপচে পড়ছে।


 আনন্দিত মানুষের মুখ দেখাও আনন্দের।


নিজের অজান্তেই  মন থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল,হায়! জীবন থেকে অনেককিছুই মিস করে ফেলেছি, যা আমার হাতের মুঠোয় ছিল! 


খাওয়াদাওয়া শেষ করে সে বাচ্চাদের জন্যও কিছু খাবার প্যাক করে নিলো।


 সিএনজিতে উঠে বসে আমার একটা হাত চেপে ধরে রাখলো, যা আগে কখনো করেনি। তক্ষুনি আমার মনে হলো,  আরে!বউয়ের ভালবাসা পাওয়া কতো সহজ! অথচ আমরা বেশিরভাগ পুরুষ তা নিতেই জানি না!!


এখন যে কোন অনুষ্ঠানে গেলে,বেশিরভাগ জায়গায় সে এই শাড়িটা পরে যায়,যদিও এরচেয়ে দামী শাড়ি তার আছে। শাড়ি নিয়ে কথা উঠলে সে গর্ব করে বলে,এটা আমার হাজবেন্ড পছন্দ করে কিনে দিয়েছে। আগ্রহ নিয়ে সে শাড়িটা অন্যকে দেখায়। আগে সে কখনোই এসব কথা বলতে পারতো না!


আগে বিভিন্ন অজুহাতে তাকে মার্কেটে নিয়ে যেতে চাইতাম না, এড়িয়ে যেতাম। এখন মন খারাপ হলেই বলি, চল মার্কেট থেকে ঘুরে আসি।, মন ভালো লাগবে। 


এখন সে আগের মতো যেতে চায় না। সেই মন আর নাই। 


 মনে মনে ভাবি, যদি আগের  জীবনটা ফিরে পেতাম, নিজেকে সংশোধন করে নিতাম।  


তা যে হওয়ার নয়!


আমার মনে হয়,বিয়ের পর একটা মেয়ের গর্বের একমাত্র  জায়গা হচ্ছে তার স্বামী। মা, বাবা, ভাইবোন বা অন্য আত্বীয় স্বজন নয়,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,


ব্যার্থ প্রেমের গল্প

ফেইসবুকে থেকে কপি করা,,,,

 গল্পঃ ভাবি_যখন_বউ

পর্ব_০২

.

আমি এম্বুলেন্স এর পেছনের দরজাটা খুলে ভাইয়ার লাশটা বের করলাম, আম্মু আব্বু, ভাবি সবাই এগিয়ে আসলো।


আব্বুঃ কিরে এম্বুলেন্স কেন? আর এটা কার লাশ?


আমি কোনো কথা না বলে ভাইয়ার মুখের উপর থাকা সাদা কাপড়টা সরিয়ে দিলাম।


ভাইয়াকে দেখে আম্মু একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়, বাবা এসে জড়িয়ে ধরে। ভাবি ঠাস করে বসে যায়। 


অঝোর ধারায় সবাই কান্না করতে থাকে। এরপর ভাইয়ার কাফন দাপন শেষ হয়, আমি আর বাবা অনেক সময় ভাইয়ার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, বাবা বাসায় আসতে চায়নি। একসময় আমি জোর করে বাসায় নিয়ে আসি। 


বাসায় আসার পর ভাবি আর আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে, আমিও নিষেধ করিনি। 


আমি স্ট্রং ছিলাম, কারণ আমিও যদি ভেঙ্গে পড়ি ফ্যামিলির কেউই হয়তো ভালো থাকবে না। 


সেদিন থেকে আমাদের পরিবারের মুখের হাসি টা উড়ে গেলো। ভাবি একদম স্তব্ধ হয়ে যায়। 


ভাইয়া মারা যাওয়ার পর ফ্যামিলিতে ক্রাইসিস শুরু হয়, কারণ আগে ভাইয়ার টাকা দিয়েই সব খরচ হতো। আব্বুর দোকানটাও বিক্রি করে দিছে। 


আর আব্বুর এখন যে অবস্থা তার দ্বারা কোনো কাজ করা পসিবল না। বাধ্য হয়ে আমি নেমে গেলাম জীবন যুদ্ধে। 


অনার্স টা শেষ না করার কারণে ভালো কোনো চাকরি পাইনি,একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিই। 


আমার কাজ হচ্ছে বাজারের প্রত্যেকটা দোকানে গিয়ে কার কি মাল রাখবে সেটা লিখে এনে মাল গুলো আবার পৌঁছে দেওয়া। যাকে বলা হয় এস আর,,, 


ভাইয়ার কথা খুব মনে পড়তো, কতো কষ্ট করে ভাইয়া টাকা ইনকাম করতো এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। 


বেতন ছিলো কম, মাত্র ৮ হাজার টাকা। যেটা দিয়ে ফ্যামিলি কোনোমতে চললেও আব্বু আম্মুর মেডিসিন কেনা প্রায় অসম্ভব।


তাই বন্ধুদের বলে কয়েকটা টিউশনি নিয়ে নিলাম। 


সকাল ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত আমার এই যুদ্ধ চলতে থাকে। নিজের পড়ালেখা প্রায় শেষ করেই দিলাম, কিন্তু ভাবিরটা কন্টিনিউ রাখলাম। 


এরমাঝে ভাবির বাবা মা অনেক বার এসেছে আমাদের বাসায় ভাবিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আব্বু উনার হাত ধরে অনেক রিকুয়েস্ট করে ভাবিকে রেখে দেয়। 


ভাবিকে এতো ভালোবাসতো যে অন্য কারো ঘরে পাঠানোর চিন্তাও আব্বু আম্মু করতো না। 


সেদিন আমি কাজ শেষ করে টিউশনি করিয়ে বাসায় আসলাম, রুমে গিয়ে চেইঞ্জ করে নিলাম তখন বাবা আমার রুমে আসলো.... 


আমিঃ আরে আব্বু! আসো ভিতরে আসো। 


বাবাঃ আমার পাশে বস,,,, 


আমি গিয়ে বাবার পাশে বসলাম,,,, বাবা আমার হাত ধরে বললো.... 


বাবাঃ তোর খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনারে? 


আমিঃ আরে ধুর এগুলো কি বলো? 


বাবাঃ তোর জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি, তুই আমাদের মাফ করে দিস। 


আমিঃ আব্বু তুমি কি পাগল হইছো, এগুলো কি বলো। আমার ফ্যামিলি আমি না দেখলে কে দেখবে? আর আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না। 


বাবাঃ অবন্তীর বাবা আসছিলো। 


আমিঃ হুম কি বললো? 


বাবাঃ ওরে নিয়ে যেতে চায়, এভাবে নাকি দিন যায় না। 


আমিঃ তুমি কি বললে? 


বাবাঃ আমি তো বলে দিয়েছি আমি আমার মেয়েকে জীবনেও দিবো না। 


আমিঃ ও আচ্ছা। 


বাবাঃ বেয়াই যদি আবার আসে? 


আমিঃ আসবে না, টেনশন করার দরকার নেই। 


বাবাঃ তোর কাছে কিছু টাকা হবে? (করুনার সুরে)


আমিঃ এভাবে কেন বলো? কত টাকা লাগবে সেটা বলো। 


বাবাঃ অবন্তীর বই নাই, বই কিনতে হবে তাই। 


আমি মানিব্যাগ চেক করে দেখলাম মাত্র ৫৭৬ টাকা আছে, যেটা আমার পুরো মাসের পকেট ও যাতায়াত খরচ। এটা যদি দিয়ে দিই তাহলে পুরো মাস পায়ে হেটে কাজ করতে হবে। 


ধুর এতো কিছু চিন্তা করে লাভ নেই, পুরো টাকাটা বাবার হাতে দিয়ে দিলাম। 


বাবা টাকা হাতে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে গেলো। 


পরেরদিন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম কেননা আমাকে পায়ে হেটে যেতে হবে, গাড়ি ভাড়া নাই। 


তাই তাড়াতাড়ি উঠে রওনা দিলাম। তারপরও অফিস পর্যন্ত যেতে ২০ মিনিট দেরি হয়। বস ইচ্ছা মতো ঝাড়ি দিলো। তারপর গত কালকে রে মাল গুলোর রিসিট কেটে নিয়ে আসছি সেগুলো দোকানে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা কভার ভ্যান নিয়ে রওনা দিলাম। 


অন্য একজন ভ্যান চালাচ্ছে আমি পিছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। হাতে অনেক গুলো মালের সেম্পল,,, 


একটা দোকানে মাল দিয়ে আসার পথে ভাবিকে দেখলাম অনেক গুলো মেয়ের সাথে, মনে হয় ক্লাস শেষ করে বাসায় যাচ্ছে। ভাবির চোখ দেখেই চিনে ফেললাম যে এটা ভাবিই হবে। 


আমি তখন ভ্যান ঠ্যালতেছি। ভাবি আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আমি উনার চোখে স্পর্শ পানি দেখলাম। আমি ভাবিকে দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে গেলাম। 


এভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছে। বাস্তবতা কি জিনিষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। 


আজকে শুক্রবার, চাকরি টিউশনি সব কিছুই বন্ধ। তাই ঘুমিয়ে আছি, অনেক দিন ধরে ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না। 


ভাবি আমার রুমে আসলো,,,,


ভাবিঃ জুয়েল! এই জুয়েল,,,, 


আমিঃ আরে ভাবি আপনি কখনো আসলেন? 


ভাবিঃ এই তো একটু আগে, অনেক বেলা হইছে এবার ঘুম থেকে উঠো। 


আমিঃ হুম উঠতেছি, আসলে শরীরটা কেমন যেন ব্যাথা করতেছে, তাই ঘুমটা একটু বেশিই হলো। 


ভাবিঃ তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? 


আমিঃ আরে ধুর এগুলো কি বলেন, আমি তো সুন্দর লাইফ 

কাটাচ্ছি। কোনো প্রবলেম হচ্ছে না। 


ভাবিঃ আমি দেখেছি কেমন সুন্দর লাইফ কাটাচ্ছো।


আমিঃ আচ্ছা আপনার পড়ালেখার কি অবস্থা? (কথা ঘুরিয়ে নিলাম)


ভাবিঃ মোটামুটি  তুমি আর পড়বে না? 


আমিঃ দেখি কি করা যায়, কলেজে যাওয়ার মতো তো সময় নাই। পরীক্ষাটা দিবো। যদি কপালে পাশ লেখা থাকে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ্‌,,,,


ভাবিঃ হুম, আসো খেয়ে নাও। 


আমিঃ আপনি যান, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। 


তারপর ভাবি চলে গেলো, আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। 


এভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছিলো, এমন একটা লাইফ কাটাচ্ছি যেটাতে নিজের স্বাধীনতা বলে কিছু নাই। পরিবারের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে সব ত্যাগ করতে হয়।


একদিন খেয়াল করে দেখলাম মায়ের শাড়ি গুলো সব পুরাতন হয়ে গেছে, ভাবিও প্রতিদিন একটা ড্রেস গায়ে দিয়ে কলেজে যায়। বাবারও পাঞ্জাবি গুলোতে ময়লা জমে গেছে। ভাবির মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে যায় এরপর আর মোবাইল নেয়নি। তারপর লজ্জায় আর আমাদের কাওকে বলেনি।  সব কিছু মিলিয়ে সবারই অবস্থা খারাপ। 


নিজের শখের জিনিষ গুলা বিক্রি করে দিলাম, হুম আমার কম্পিউটার, গিটার, হাতের ঘড়ি এবং শখের মোবাইলটাও বিক্রি করে দিলাম সবার অজান্তে। 


তারপর আব্বু আম্মু আর ভাবিকে নিয়ে শপিং এ গেলাম। আব্বুর জন্য কয়েকটা লুঙ্গি, পাঞ্জাবি আর গেঞ্জি নিয়ে নিলাম। আম্মুর জন্য শাড়ি, ছায়া, ব্লাউজ আরো টুকটাক জিনিষ নিলাম। 


ভাবিকে উনার পছন্দ মতো নিতে বললাম, উনি কয়েকটা থ্রি পিছ, জুতা, কিছু কসমেটিক্স নিলো। 

.


.

আম্মু বললো..... 


আম্মুঃ তোর জন্য কিছু নিবি না? 


আমিঃ নাহ! আমার সব আছে। (মুছকি হাসি দিয়ে) 


তারপর উনাদের বাইরে দাঁড়িয়ে রেখে আমি একটা মোবাইলের দোকানে গেলাম, আমার জন্য একটা নরমাল মোবাইল নিলাম আর ভাবির জন্য একটা স্মার্ট ফোন নিলাম। 


তারপর উনাদের নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। 


রাতের বেলা সবাই আমার রুমে আসলো,,,,


আমিঃ কি ব্যাপার সবাই একসাথে?


আম্মুঃ কেন আসতে পারি না? 


আমিঃ আরে আজব না পারার কি আছে? আসো,,,,, 


সবাই এসে বসলো, আমি ব্যাগ থেকে ভাবির জন্য কেনা মোবাইলটা ভাবির হাতে দিলাম। 


ভাবিঃ কি এটা? 


আমিঃ মোবাইল আপনার জন্য নিলাম। 


ভাবিঃ আমার তো এখন মোবাইলের কোনো দরকার নেই, টাকা নষ্ট করলে কেন?


বাবাঃ সত্যি করে বলতো তুই টাকা কোথায় পেলি?


আমিঃ আমার কাছে জমানো ছিলো। 


আম্মুঃ মিথ্যা বলিস কেন? সত্যি করে বল টাকা কোথায় পাইছিস? 


আমিঃ কম্পিউটার, গিটার আর মোবাইলটা বিক্রি করে দিয়েছি। (মাথা নিচু করে) 


বাবাঃ কেন তোরে এগুলো বিক্রি করতে কে বলেছে? 


আমিঃ তোমাদের সবার কাপড়চোপড় গুলো পুরাতন হয়ে গেছে, দেখতেই তো খারাপ লাগে। সেজন্য,,,,, 


ভাবিঃ তাই বলে এগুলো বিক্রি করে দিবে? 


আমিঃ আরে কোনো সমস্যা নাই, আমি এখন কম্পিউটার চালানোর মতো সময় পাই না। আর গিটার তো বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না। এগুলো একটারও আমার দরকার নেই? 


ভাবিঃ মোবাইল কেন বিক্রি করলে? 


আমিঃ এতো দামি মোবাইলের কাজ নেই এখন, সারাদিন কাজে থাকি মোবাইল চালানোর সময় কই, আর মোবাইলের প্রতি এতো শখ নাই। একটা নরমাল হলেই চলবে। 


কেউ আর কিছু বললো না, নির্বাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। সবার চোখে যে পানি চলে আসছে সেটা আমি ভালো করেই দেখছি।


কিছুদিন পর আমি শুয়ে আছি, সকাল ১০.০০ টার মতো বাজে,, সোফা রুমে চিল্লাচিল্লি শুনে তাড়াতাড়ি সেখানে গেলাম, গিয়ে দেখি তালোই মানে ভাবির বাবা আর মা এসেছে। 


আমি গিয়ে সালাম দিলাম, কৌশল বিনিময় করে বাজারে গেলাম বাজার আনতে, কারণ মেহমান আসছে ভালোমন্দ কিছু না হলে খারাপ দেখা যায়। 


আমি বাজার থেকে কিছু বাজার করে নিয়ে আসলাম। তারপর রান্না ঘরে দিয়ে আসলাম ভাবি আর মা রান্না করতেছে। 


আমি গিয়ে উনাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম। 


দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়া করে সবাই সোফা রুমে গিয়ে বসলাম। আমি বসিনি আব্বু আম্মু আর ভাবির বাবা মা সবাই বসছে, মনে হয় কিছু বলবে। ভাবি দরজা পাশে ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 


কিছুক্ষণ পরই ভাবির আব্বু মানে আংকেল বললো.... 


আংকেলঃ দেখেন বেয়াই সাব যেজন্য আমরা আসছিলাম। 


বাবাঃ জ্বি বেয়াই বলুন। 


আংকেলঃ আমার মেয়েটার বয়স খুব একটা বেশি না। এই বয়সে সে বিধবা হয়ে যাবে কল্পনাও করিনি। যাইহোক আল্লাহর যা পছন্দ হয়েছে তাই করেছে। আমার মেয়েটা মাত্র দুইমাস জামাইয়ের সাথে ছিলো। তারপর কি হলো সেটা তো জানেন। 


এখন কথা হচ্ছে ওর তো একটা ভবিষ্যৎ আছে, এভাবে তো আর তার জীবন চলবে না। 


বাবাঃ তো এখন কি করতে পারি? 


আংকেলঃ আপনাদের কিছু করতে হবে না, আমাদের মেয়েকে আমরা নিয়ে যাবো। ওর অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবো। এভাবে থাকলে তো আর হবে না। 


বাবাঃ না বেয়াই এটা করবেন না, আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবেন না। 


আংকেলঃ দেখেন আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না। বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। 


হুম এটা ঠিক যে আমার মেয়ের কপাল অনেক ভালো, আপনাদের মতো শ্বশুর শাশুড়ি পেয়েছে। খুব কম মেয়েই এই রকম শ্বশুর শাশুড়ি পেয়ে থাকে।  কিন্তু আপনারা তো আর ওর কিছু করতে পারবেন না। ওকি আপনাদের সাথে জীবন কাটাতে পারবে? আপনাদের ওতো বয়স হয়েছে। মরতে তো হবেই। আপনাদের কিছু হয়ে গেলে আমার মেয়েটার কি হবে? 


ভাবি নির্বাক দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে আছে, না পারছে বাবার পক্ষে কিছু বলতে না পারছে শ্বশুরের পক্ষে কিছু বলতে। 


বাবাঃ কিন্তু এখানে তো ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সব ঠিকঠাক মতো আছে। 


আংকেলঃ হুম সব আছে বাট স্বামী তো নাই। একটা মেয়ে কি এভাবে লাইফ কাটাতে পারে? আপনিই বলুন, আপনার মেয়ে হলে আপনি কি করতেন? 


বাবাঃ..........(মাথা নিচু করে বসে আছে)


আংকেলঃ আমি জানি আপনি অবন্তীকে অনেক ভালোবাসেন, নিজের মতোই দেখেন। কিন্তু অবনন্তীকে আমরা আর এখানে থাকতে দিতে পারি না। অন্তত পক্ষে ওর বাবা হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।


বাবাঃ আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে, আমি আমার মেয়েকে যেতে দিবো না। 


আংকেলঃ আপনি এসব কি বলছেন? 


বাবাঃ হুম, আমার এক ছেলে হয়তো আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু আরেকজন তো আছে, আপনি না অবন্তীকে বাইরে বিয়ে দিতে চেয়েছেন? বাইরে দেওয়ার দরকার নেই। আমার ছোট ছেলের কাছেই ওর বিয়ে দিবো। এবার তো আর বলতে পারবেন না যে আপনার মেয়ে বিধবা? ওর স্বামী নাই। এগুলো তো আর বলতে পারবেন না। 


আমি বাবার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম, এটা কেমনে হয়, এখনো আমি অবন্তীকে ভাবি ডাকি আর সে নাকি আমার,,,, 


না এটা কিছুতেই সম্ভব না, আমার মাথা ঘুরতেছে। হঠ্যাৎ করে বাবা আমার দুহাত চেপে ধরে বলে.....


বাবাঃ প্লিজ বাবা, তুই না করিস না। তুই অবন্তীকে বিয়ে কর, আমার মেয়েকে আমার কাছে থাকতে দে। প্লিজ বাবা, আমার অনুরোধ টা রাখ। নাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না।


বাবার কথা শুনে আমি কি বলবো কিছুই বুঝতেছি না, আম্মুও করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। 


আম্মুঃ জুয়েল! বাপ আমার প্লিজ না করিস না। 


আমি বাবার হাত ধরে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম। ভাবির দিকে তাকিয়ে দেখি উনি চোখ মুছতে মুছতে রুমে চলে গেলো। 


ভাবির আব্বু বললো.....


আংকেলঃ বেয়াই (বাবাকে) আপনি মানুষ না, ফেরেশতা। একটা মানুষ এতো ভালো হয় কেমনে? আমি নিজেও জীবনে আমার মেয়ের জন্য এতোকিছু করিনি যেটা আপনি করলেন। 


বাবাঃ আচ্ছা বেয়াই মশাই, বিয়েটা আজকেই হয়ে যাক। আমি কাজী ডেকে নিয়ে আসি। 


আংকেলঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আমার ছেলেকে আর ছেলের বউকে আসতে বলি। আর অবন্তীকে বাইরে নিয়ে গিয়ে সাজিয়ে আনার জন্য বলবো। 


বাবাঃ আচ্ছা আমি বাজারে গেলাম। 


কোনো রকম অনুষ্ঠান ছাড়াই বিয়েটা হয়ে গেলো। ভাবি কে আজকে একটু অন্যরকম সুন্দর লাগছে। প্রথম বিয়ের ছেয়েও বেশি, শুধু একটা জিনিষের অভাব। সেটা হচ্ছে মুখের হাসিটা। 


ভাইয়ার সাথে যখন বিয়ে হয়েছিলো তখন ভাবির মুখে খুব সুন্দর হাসি ছিলো, আজকে সব আছে সেটাই নেই। হয়তো এমন কিছু হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি। 


তারপর..........

.

চলবে_কি??

.

আজব প্রাণী ফেইসবুকে থেকে নেওয়া

দুধের বাচ্চা নিয়ে বাসরঘরে বসে আছি। অনেকে বলেছিল বাচ্চাকে মা চাচিদের দিয়ে দিতে। বাসর রাত বলে কথা৷ কিন্তু রাজি হয়নি। বাচ্চাটা একটু থেকে একটু হলেই কান্না করে দেয়। যে শান্ত করতে পারতো সে এখন আমার উপর সব দায়িত্ব দিয়ে কবরে আরাম করে ঘুমিয়ে আছে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে৷ আমার এখনের স্বামির নাম ফারাবী। ঘরোয়াভাবেই বিয়েটা হয়েছে আজ আমাদের। আত্মীয় স্বজন বেশি নেই। গোটা বিশেক লোক হবে এসেছে।


মাত্র আমার মেয়েটা ঘুমালো। একটু পরই ফারাবী এসে ঢুকলেন রুমে। দরজা মারলেন নিঃশব্দে। আমি পা দুটো আরো গুটিয়ে নিয়ে মেয়েটাকে আরেকটু জোরে জাপটে ধরলাম। তিনি এসে বসলেন আমার কাছে। আমি মাথা নিচু করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। কতক্ষণ নীরব থাকার পর তিনি বললেন, জানেন তো আমাদের দুজনেরই এটা দ্বিতীয় বিয়ে? আমি মাথা নাড়লাম। তিনি তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন, কেন আমার স্ত্রী ছেড়ে গেছে এটা জানেন? আমি আবারও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। তিনি মৃদু হেসে বললেন, আমাদের সাত বছরের প্রেম আর এক বছরের সংসার জীবন ছিল। কিন্তু আমাদের সবটা প্রেমই রয়ে গেল ভালোবাসা হয়ে ওঠেনি। আমি তাকে মাতৃত্বের সুখ দিতে পারব না জেনেই ছেড়ে চলে গেল। আমি চুপ করে রইলাম।


- কি নাম ওর?


- মাইশা।


- বাহ্, অনেক সুন্দর নাম তো।


- ওর বাবার দেওয়া।


- দেখতেও কি বাবার মতো হয়েছে? 


- হুম। 


- আমার কোলে দেবেন একটু?


এবার আমি তার দিকে তাকালাম। মুখে আকুতিভরা, চোখ পানিতে ভরে উঠছে। দিলাম তাঁর হাতে। মেয়ে আমার যদিও জেগে গিয়েছিল কিন্তু কাঁদলো না। ফারাবী খেলল কতক্ষণ তার সাথে। আর মাইশা হাসছে। আমি অবাক হয়ে তাদের দিকে আছি। তাকে মেহরাজ, আমার প্রাক্তন স্বামীর মতো লাগছে। খেলা শেষে ওকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে বললেন, জানেন আমার মেয়ের খুব শখ ছিল। নুপুরকে বলতাম আমরা মেয়ে নেবো। কিন্তু বুঝতেই পারিনি সে ক্ষমতা আমার নেই। মাইশা না থাকলে হয়ত এ বিয়েটাও হতো না। কে জাইবে এমন ছেলের কাছে মেয়ে দিতে?


মাইশাকে পাশে শুইয়ে দিয়ে বললেন, আপনি ঘুমিয়ে যান। সারাদিন খাটুনি গেছে অনেক। বলে মাইশার পাশে শুয়ে পড়লেন। আমি তখনো তাকিয়ে আছি। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লাম। গভীর রাতে হঠাৎ অজানা অনিশ্চিত ভয়ে জেগে উঠলাম। পাশে ফিরে দেখলাম মাইশা ঠিক আছে কি না। ফারাবী একহাত দিয়ে রেখেছেন মাইশার উপর। যেন ঘুম পাড়াতে পাড়াতে নিজেও ঘুমিয়ে গেছে। কি করে পরের মেয়েকে এত আপন করতে পারলেন!


সকালে চোখ খুলতেই দেখলাম মাইশা ফারাবী কেউই নেই। আমি ধড়মড় করে উঠে বসে আশেপাশে তাকাতেই বারান্দায় চোখ পড়ল। ফারাবী রকিং চেয়ারে বসে ঘুম পাড়াতে চাইছে মাইশাকে। আমি কাছে যেতেই বললেন, কান্না করছিল, আপনার ঘুম ভেঙে যাবে দেখে এদিকে নিয়ে এসে ঘুম পাড়াতে চাইছিলাম। দুষ্ট বাচ্চাটা কিছুতেই ঘুমাতে চাইছে না। আমি দেখলাম মেয়ে হাত দিয়ে ফারাবীর দাড়ি নিয়ে খেলছে৷ আমি ফিক করে হেসে দিলাম। তিনি বললেন, হাসছেন যে বড়?


- মেয়ের আমার আপনার দাড়ি পছন্দ হয়েছে। 


- তা হয়েছে। ভাবছি আরো বড়ো করব দাড়ি মেয়ে যাতে খেলতে পারে। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।


আমি মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে গেলাম। নাস্তা খেতে বসেছি। ফারাবী বললেন, আপনি বেলের আচার বানাতে পারেন? আমি বললাম, দেখেছিলাম। আমার প্রাক্তন শ্বাশুড়ি বানাতেন খুব ভালো। তার আচারের স্বাদই আলাদা ছিল। তিনি রুটিটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললেন, আমার বেশ প্রিয় বেলের আচার।


- ঝোলটা আরেকটু দেবো?


- দিন। আপনার রান্নার হাতও বেশ ভালো।


আমি হেসে বললাম, রুটিটা একটু পুড়ে গেছে। তাও বলছেন? ফারাবী শেষটুকু খেয়ে বলল, ভালো হাতের পোড়া রুটিও অমৃত হয়। বলে উঠে চলে গেলেন মাইশার কাছে। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে দোলনায়। মাথায় হাত বুলিয়ে ল্যাপটপটা খুলে পাশে বসলেন।


পরদিন থেকে অফিস। মাত্র তিন দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। বলতে গেলে পেয়েছেন আর কি। প্রথম বিয়ে হলে হয়ত সপ্তাহ খানেক ছুটি পেতেন। বের হওয়ার সময় জুতো পরতে পরতে বললেন, আমার খুব শখ ছিল কাজে যাওয়ার আগে বউয়ের কপালে ভালোবাসার চিহ্ন দিয়ে যাবো। কিন্তু নুপুরের কাছে এটা ন্যাকামি ছিল। তাই কখনো এই শখ পূরণ হয়নি। আপনারও কি অপছন্দ? আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়ালাম। তিনি হেসে আমার কপালে চুমু এঁকে দিলেন। তারপর বেরিয়ে গেলেন। 


রান্না করতে করতে মেহরাজের কথা অনেক মনে পড়ল। মেহরাজেরও বেলের আচার অনেক প্রিয় ছিল। এক বসাতে একটা বয়াম শেষ করে ফেলে বলতো কাল বেল কিনে আনবো, মাকে বোলো তো আচার বানাতে। আমিও শিখেছিলাম। একবছর হলো ও নেই। তাই বানানো হয়নি আর। মাইশা যখন পেটে তিন মাস হবে তখনই হঠাৎ কার এক্সিডেন্টে চলে গেল না ফেরার দেশে। মেয়েটাকে দেখে যেতে পারেনি। আমরা নাম ঠিক করে রেখেছিলাম। ওর পছন্দের নামটাই দিলাম আকিকার সময়। কত ঝগড়া করেছিলাম নাম নিয়ে ওর সাথে! চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়ালো। সেগুলো টুপ করে পড়ার আগেই ফোনটা বেজে উঠল। তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি ফারাবী কল দিয়েছেন। ধরতেই বললেন, কি করছেন? নাক টানছেন যে। কাঁদছিলেন নাকি? আমি নাকটা মুছে নিয়ে বললাম, পেঁয়াজ কাটছিলাম।


- ও, রান্না করবেন তাহলে। আমার মেয়ে কি করে?


- খেয়ে দেয়ে ঘুমাচ্ছে এখন।


- আমি তো দুপুরে এখানে লাঞ্চ করি। আপনার অসুবিধা হবে না তো? 


- না সমস্যা নেই। আপনি খেয়ে নেবেন।


- আপনিও। কোনো ফাঁকিবাজি যাতে না করেন। খেয়ে তারপর কাজ থাকলে করবেন। 


- আচ্ছা। 


- রাখছি তাহলে?


- হুম


ফারাবী ফোন কেটে দিলেন। আমি রান্নাঘরে যেতে যেতে ভাবলাম, দুজন মানুষ কি করে একই হয়!


রাত আটটায় বেল বাজলো। আমি মাইশাকে কোলে নিয়ে টিভি দেখছিলাম। গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম ফারাবী দাঁড়িয়ে আছেন। ঘেমে আছেন পুরোটা। আমি দরজা খুলতেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। সোফায় বসতেই ফ্যান ছেড়ে দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলাম। সেটা খেয়ে ফ্রেশ হতে গেলেন। আমি সোফায় বসে আছি। তিনি ব্যাগ থেকে পাঁচটা বকুল লতা বের করে বললেন, আম্মুর কাছে শুনেছি আপনার নাকি বকুল পছন্দ। তাই আনলাম। সে একটা লতা নিয়ে মাইশার হাতে লাগিয়ে দিয়ে বললেন, এটা আমার মেয়ের। বাকি চারটা লতা আমার খোঁপায় লাগিয়ে দিয়ে বললেন, আর এগুলো আমার মেয়ের আম্মুর। আমি লজ্জায় মুচকি হাসলাম। তিনি বললেন, লজ্জা পেলে আপনাকে দেখতে বেশ সুন্দর লাগে।


সাত মাস চলছে আমাদের সংসারের। ফারাবী বেশ খেয়াল রাখেন। আমার টুকটাক ভালো লাগাগুলো তিনি বেশ গুরুত্ব দেন। আর মাইশা বলতে পাগল। মেয়েটাও বাবার কোলে কোলে ঘুরে বেড়ায় যতক্ষণ বাসায় থাকে। অফিসে গেলেই মেয়ের কি কান্না! এখন হাঁটতে পারে একটু আধটু। কলিং বেলের শব্দ পেলেই সব ফেলে বসার ঘরে চলে আসে বাবার কোলে ওঠার জন্য। ভালোই কাটছিল। এর মধ্যে হঠাৎ তার প্রাক্তন স্ত্রী এসে হাজির। আমি তখন রান্নায় ব্যস্ত। প্রায় শেষ। জুম্মার নামাজ পড়ে এসে মেয়েকে নিয়ে খেলা করছিলেন তিনি। তখনই কলিংবেল বাজল। দরজা খুলতেই নুপুর এসে ঢুকল। 


ফারাবী চুপ করে চেয়ে আছে তার দিকে। নুপুরকে বেশ বিধ্বস্ত লাগছে। ঢুকেই ফারাবীর দিকে কাঁদো কাঁদো হয়ে এগিয়ে এসেছিল জড়িয়ে ধরার জন্য। তিনি মাইশাকে কোলে নিয়ে দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বললেন, কেন এসেছো?


- একটু ঠাঁই পেতে এসেছি, ফারু। 


- দুঃখিত। এটা কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নয়। 


- প্লিজ ফারু আমাকে ফিরিয়ে দিও না। রায়হানের সাথে বিয়ে হওয়ার পর বুঝেছি আমি কি হারিয়েছি। ও আমার সাথে খুবই বাজে বিহেভ করে। ওকে ডিভোর্স দিয়ে আমি ফিরে আসতে চাই ফারু।


- সরি নুপুর, আমি আমার মেয়েকে ছেড়ে থাকতে পারবো না।


- তাহলে রেখে দাও ওকে। এমনিতেও তো তুমি বাবা হতে পারবে না। আমরা দুজন ওকে মানুষ করব।


এবার বেশ রেগে গেলেন ফারাবী। বললেন, তোমার মতো স্বার্থপর মেয়ে আমি দুটো দেখিনি। যখন সময় ছিল তখন নিজের স্বার্থ দেখে আমাকে ভেঙেচুরে চলে গিয়েছিলে। আজ এসেছো ফিরতে। তাও আমার স্ত্রীর সামনে এমন কথা বলেছো? আর যাই হোক সে তোমার মতো নয়। আমি বেশ সুখে আছি। তুমি সুখে নেই এটা তোমার সমস্যা। এখন আসতে পারো। তোমার মতো মানুষের ছায়া আমার সুখের সংসারে পড়ুক আমি চাই না। চলে যাও। নুপুর অনেক কাকুতি মিনতি করতে চেয়েছিল কিন্তু ফারাবী সুযোগ দিল না। তাকে গলাতে না পেরে হতাশ হয়ে বেরিয়ে গেল নুপুর।


বিকালে বারান্দায় মাইশাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ আমার হাত ধরে বলল, আমার সাথে এসো তো। ছাদে নিয়ে গেল। দেখলাম রংধনু উঠেছে৷ অনেকদিন দেখা হয় না। তিনি আমার হাত শক্ত করে ধরে বললেন, মেহরাজ ভাই আমার জন্য রত্ন রেখে গেছেন। এই রত্ন আমি হারাতে চাই না, আয়েশা। বলেই মাইশা আর আমার কপালে চুমু এঁকে দিলেন।


গল্প রংধনু 🦅🦅🦅

সমাপ্ত 

আজব প্রানি ফেইসবুক থেকে নেওয়া

-মিসেস স্নেহা আপনাকে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায় ফাঁসি দেওয়া হবে।আপনার কি কোন শেষ ইচ্ছে আছে?"

কথাটি পুলিশ অফিসার আসিফ সাহেব শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমাকে বলেন।আমি মুচকি হেসে কিছুক্ষণ তার পাণে চেয়ে বললাম - " অফিসার সাহেব আমার শেষ দুইটা ইচ্ছে আছে।পুরন করবেন?"


অফিসার সাহেব আমার মুচকি হাসির বিপরীতে মুচকি হেসে বলেন-" মানুষের দেখি হাজারো ইচ্ছে থাকে। আপনার দেখি দুটো।না-কি দুটো বলে আবার অনেকগুলো পরবর্তীতে বলবেন?"


আমি উচ্চস্বরে হেসে বলি-"অফিসার সাহেব আমি খুনি হতে পারি মিথ্যাবাদী নই।কিংবা কথা দিয়ে কথার বরখেলাপ করি না।"


অফিসার সাহেব দুই হাত বুকের মাঝে গুটিয়ে বলেন-"বাহ্!আজকাল দেখি খুনিও ডিজিটাল হয়ে গেছে।ওকে! আপনি যখন বলেছেন দুটো ইচ্ছের কথা আমি না হয় শেষ আপনার ইচ্ছেটা পুরন করবো।"


কথাটুকু শেষ করে তিনি চলে যান।মাথার উপরে থাকা হলুদ বাতিটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জীবনের কিছু হিসাব মেলাচ্ছি।কোথায় ছিলাম আমি, আজ কোথায় আছি?ভাগ্য কখন কাকে কোথায় নিয়ে যায় বলা বড় দ্বায়।কারো মনে কি প্রশ্ন জাগে না, আমি কেন আজ খুনি?কিভাবে খুনি হলাম?এ সমাজে আমি শুধু একা খুনি নই,আমার আড়ালেও রয়েছে হাজারো খুনি।কেউ আসে পুলিশের প্রকাশে তো কেউ রয়ে যায় পুলিশের আড়ালে।এ খুনি হওয়ার পিছনে যে রয়েছে এক বিশাল অতীত কেউ কি তা দেখেছে?উহু!আমরা যে বাঙ্গালী।হায় বাঙালি তুমি বড়ই মহান,সত্য না খুঁজে খোঁজ সত্যকে বানানো মিথ্যার পাহাড়। 


পরদিন দুপুর ৪টা।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় চ্যানেল সময় টিভির লাইভে আমার কথায় আমাকে আনা হয়।আজ সন্ধ্যা ৬টায় আমার ফাঁসি।অথচ আমার মাঝে নেই কোন ভাবান্তর।এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার আগে আমাকে যে বলতে হবে আমার না বলা কিছু কথা।জানাতে যে হবে কেউ নিজের ইচ্ছে খুনি হয় না।তাকে বাধ্য করা হয় খুনি হতে।সারা দেশের জনগণ খুব আগ্রহ নিয়ে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছে।পৃথিবীর এই প্রথম কোন ফাঁসির আসামি মনে হয় তাদের মতে নিজের ইচ্ছে পুরন করতে টিভিতে লাইভে আসছে।কি অদ্ভুত নিয়ম। ও আপনাদের তো বলা হয়নি।আমার দুটো ইচ্ছে সম্পর্কে।এক. আমার ইচ্ছে ছিলো আমার মতো মানুষেরা কিভাবে খুনি হয় সে সম্পর্কে পৃথিবীকে জানানো।দুই. আমার বাবাকে পাশে বসিয়ে নিজের নিকৃষ্ট অতীতের গল্প শোনানো।হ্যাঁ?!অফিসার সাহেব আমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছেন।


একজন উপস্থাপক এসে আমার ও আমার বাবার সাথে কৌশল বিনিময় করে আমাকে প্রশ্ন করেন -" আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এই প্রথম কোন খুনি লাইভে এসে পৃথিবীকে তার খুন সম্পর্কে জানাবে।আমার লাইফে অনেক নারী খুনির কথাই শোনেছি।কিন্তু আপনার মতো কারো কথা শোনা হয় নি।তাও আবার কি-না সাইলেন্ট কিলার। আপনি সত্যি এক সাহসী নারী।"


আমি মুচকি হেসে বলি- "তাহলে আজ শোনে নি এক ভীতু নারী থেকে সাহসী নারী হওয়ার গল্প।শোনে নিন সাহসী থেকে খুনি হওয়ার অন্য আরও একটি সত্য।"


তিনি আমার কথার বিপরীতে মুচকি হেসে বলেন-"তাহলে আমরা আমাদের কাজ শুরু করতে পারি কি বলেন?"


মুচকি হেসে আমি মাথা নেড়ে "হ্যা" বুঝাই।


ক্যামেরা অন করা হয়।চারপাশের লাইট ক্যামেরা আমার দিকে ফোকাস করা হয়।জনগণ আমার কথা শোনার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন টিভির সামনে।আমি শান্ত ভাবে বলা শুরু করি-


"আমি মিসেস স্নেহা রহমান।সচারাচর সবাই আমাকে একজন খুনি হিসেবেই চিনেন।কেউ তো আবার অবাকও হচ্ছেন আমি একজন মেয়ে হয়ে কিভাবে সাইলেন্ট কিলার হলাম?এটা আপনাদের কাছে যেমন অবাক হওয়ার তেমনই আমার কাছে অবাক হওয়ার মতোই ছিলো।কিন্তু এখন আমি স্বাভাবিক।হ্যাঁ! একদম স্বাভাবিক ভাবে বলতে পারি আমি সেই মেয়ে যে একজন সাইলেন্ট কিলার।কয়েকশত খুন আমি নিজ হাতেই করেছি।কেন করেছি আজ সে গল্প আপনাদের সাথে করার জন্যই এই লাইভে আসা।আপনারা সবাই জানেন আজ সন্ধ্যা ৬টায় আমার ফাঁসি।এখন আমার ভয় পাওয়ার কথা।সরকারের কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চেয়ে ফাঁসি না দেওয়ার আকুতি জানানো। কিন্তু আমি সে সব করবো না।আমিও চাই আমার ফাঁসি হউক।অন্তত এই নিকৃষ্ট সমাজ থেকে তো বেঁচে যাবো।চাইলে আমি আত্মহত্যা করতে পারতাম।করিনি কেন জানেন?আত্মহত্যা পাপ বলে।যার জন্য আমার কাজ শেষ করে আমি প্রশাসনের কাছে নিজের আত্মসমর্পণ করি।"


দীর্ঘ এক শ্বাস নিয়ে আবার বলা শুরু করি-


"এবার আসি আসল কথায়।আমি খুবই সাধারণ পরিবারের সন্তান ছিলাম।বাবা দিন মজুরের কাজ করতেন।মা গৃহিণী ছিলেন।আমরা তিন বোন দুই ভাই ছিলাম।টানা পোড়ার সংসার ছিলো আমাদের।ভাই বোনদের মাঝে আমি ছিলাম চার নাম্বার।বড় দুই বোনকে বাবা কোন রকম বিয়ে দেন।এক ভাইকে চট্রগ্রাম কাজের জন্য পাঠান।বাকী ছিলাম আমি আমার ছোট ভাই।হঠাৎ একদিন আমার বাবা-মা,ভাই বাসায় ছিলেন না।বাবা কাজে বের হয়ে যান।মা পাশের কোন এক চাচির কাছে যান।ছোট ভাই স্কুলে ছিলো।বাসায় আমি একা ছিলাম।সেদিন আমার এক খালাতো ভাই আসে আমাদের বাসায়।আমি সবচেয়ে বেশি খুশি ছিলাম।কারণ ভাইয়া এসেছে।বড় ভাই বলে কথা।তিনি এসে আমাকে ভালোর কথা জিজ্ঞাসা করে বলেন " মা কোথায়?" আমি হেসে বলি -"ভাইয়া মা পাশের বাসায় গেছেন।আপনি বসেন আমি ডেকে আনি।"হুট করে তিনি আমায় টেনে তার পাশে বসিয়ে বলেন "তোর যেতে হবে না।তুই আমার পাশে বস।"


আমি বোকার মতো ভাইয়ার পাশে বসি।তখন বয়স আমার কতই আর হবে?৯ কিংবা ১০ হবে।আমি হেসে হেসে ভাইয়াকে খালা-খালু,ভাবির কথা জিজ্ঞাসা করি।ভাইয়া হেসে বলেন "আছে সবাই ভালো।" কথার এক পর্যায় ভাইয়া আমার নিষিদ্ধ স্থানে হাত ছুঁয়ে দেন।আমি যখন চেচিয়ে বলি ভাইয়া আপনি কি করেন এগুলো?তিনি আমায় বলেন-"তেমন কিছু না। যা করতেছি করতে দে।আর একটু চুপ থাক।"ভাইয়ার এমন অদ্ভুত কথায় আমি কিছু না বুঝে চিৎকার করতে যায় ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি আমার মুখ চেপে ধরেন।"


কয়েক মিনিট চুপ থেকে আমি আবার বলা শুরু করি,


"সেদিন আমি ধর্ষিতা হয়।হ্যাঁ! খালাতো ভাই নামক মানুষটির কাছে আমি খুব বাজে ভাবে ধর্ষিতা হই।তখন তো আর বুঝতাম না ধর্ষিতার মানে কিন্তু এখন তো সেটা বুঝি।মায়ের কাছে অনেক বার কাঁন্না করে বলেছিলাম -" মা ভাইয়া আমাকে খুব বাজে ভাবে ছুঁয়েছে।মা আমায় সেদিন ধমক দিয়ে বলেন আমি মিথ্যা বলি।ভাইয়া এসব করতে পারেন না।এভাবেই চলছিলো আমার জীবন।যখনই তিনি আসতেন আমার সাথে কিছু না কিছু করতে চেষ্টা করতেন।আমি তখন এতটুকুই বুঝতাম তিনি খারাপ। খুব বাজে লোক।ভয়ে সেদিনের পর আর যাওয়া হয়নি ওনার কাছে।একদিন ভাইয়াদের বাড়িতে দাওয়াত পড়ে।আমি না করলেও মা আমায় জোর করে নিয়ে যান।সেদিনও ছিলো আমার জীবনের আরও ভয়ংকর রাত।মানুষ বেশি হওয়ায় ভাইয়ার মেয়ে আর আমাকে দেওয়া হয় ভাইয়ার সাথে ঘুমানোর জন্য।আমি যাবো না বলায় মা আমাকে খুব করে বকা দেন।শেষ আমাকে মেরে ভাইয়ার রুমে পাঠান।ভয়ে ভয়ে আমি ভাইয়ার মেয়েকে ওনার পাশে রেখে খাটের এক কোণে শুয়ে পড়ি।সেদিনও এই নরপিশাচ আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে ছাড় দেয়নি।তারপর দিন যখন বাসায় আসি সে থেকে ওনার সাথে আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।একা কখন ওনার সামনে যেতাম না।আস্তে আস্তে বড় হয়।ভালো-মন্দ বুঝতে শিখি।তখন বুঝতে পারি ঐ লোকটি ঘরে বউ সন্তান রেখেও অন্যান্য মেয়েদের সাথে খারাপ কাজ করে।এমন কি এক মেয়ে তার সন্তানের মা হতে চলেছে শোনেও লোকটি অস্বীকার করে।এক সময় মেয়েটি আত্মহত্যা করে।"


বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা একপলকে জলভরা চোখে তাকিয়ে আছেন আমার পাণে।আমি মিষ্টি এক হাসি দিয়ে আবার বলা শুরু করি-


"যখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তখন বাবা তার পছন্দ করা ছেলের কাছে আমায় জোর করে বিয়ে দেন।বিয়ের দিন রাতে জানতে পারি তার পরকীয়া চলছে নিজ বড় ভাইয়ের বউয়ের সাথে।তখন নিজের উপর নিজেরই ঘৃণা শুরু হয়।একদিন সকালে ভাবির মেয়ে তানহা এসে আমায় ভয়ে ভয়ে বলে-" কাকীমনি কাকা আমায় বাজে ভাবে ছুঁয়েছে আজ।" ছোট বাচ্চার কথাটি শোনে আমার পুরনো অতীত মনে পড়ে যায়।সেদিন চিন্তা করেছে যে দেশে ধর্ষকের বিচার হয়না সে দেশ থেকে তাদেরকে আমিই দূর করবো।একজন সাধারণ মেয়ে থেকে আমাকে সাহসী হতে হবে হাজারো স্নেহা,হাজারো তানহার মতো মেয়েদের জন্য।আমি চুপ করে থাকলে দেশ চুপ করে থাকবে।আমি রুখে দাঁড়ালেই তবে দেশ রুখে দাঁড়াবে।সে শপথ নিয়ে সর্বপ্রথম আমি আমার স্বামীকে খুন করি।খুন করে নিজেকে আত্মগোপন করার জন্য ছোট একটা মিথ্যা নাটক সাজাই।বাস আমার নাটকই আমার জন্য সেদিন যথেষ্ট ছিলো।রোড এক্সিডেন বলেই খুনটা ধামাচাপা পড়ে যায়।তারপর শুরু হয় ধর্ষকদের খুঁজে খুন করার প্ল্যান।খালাতো ভাই নামক নরপিশাচ কে মারার অনেক সুযোগ খুঁজেছি।কিন্তু সে আর হয়ে উঠেনি।একদিন সে আমার জালে পা রাখে।সেদিন অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে খুন করে দেই।অত:পর প্রশাসনের কাছে আমি আত্মসমর্পণ করি।


আজ আমি মেয়েদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলবো, তোমরা কখনো কোন পুরুষকে সুযোগ দিবেনা।না কখনো নিজের সন্তানের কথা মিথ্যা বলে চালিয়ে দিবে।ছোট বাচ্চারা কখনো মিথ্যা বলে না।তারা নিষ্পাপ হয়।কখনো নিজের সিন্তানকে পরপুরুষের কাছে একা যেতে দিবে না।নিজের সম্মান নিজেকে রক্ষা করার জন্য যদি নিজেকে শেষ করতে হয় তবে তাই করো।প্রয়োজনে ধর্ষকদের খুন করো।তবুও তাদের হাতের পুতুল হবে না।এই দেশে ধর্ষকদের কেউ দোষ দেয় না দেয় ধর্ষিতাদের।"


আমার কথা শেষ করে যখন চারপাশে তাকাই দেখি সবার চোখে পানি।যে অফিসার সাহেব গতকাল আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে আজ সে মাথা নিচু করে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছেন।হা!হা!কি অদ্ভুত নিয়ম।উপস্থাপক আমায় কিছু বলতে যাবেন তার আগে আমি হাত উঠিয়ে থামিয়ে দেই।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অফিসারকে বলি -"আমার ফাঁসির সময় হয়ে গেছে এবার চলুন।আর আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটা সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।"


বাবার দিকে তাকিয়েই "ভালো থাকবেন বাবা" কথাটুকু বলে বের হয়ে চলে আসি।পিছনে ফিরিয়ে মায়া বাড়াতে চাইনা।আমার জন্য মায়া মানায় না।না মানায় আমায় নিয়ে কেউ আফসোস করা।আমার জীবনের নেই কোন গতি।থেমে গেছে জীবনের ঘটী।নাম না জানা এক পথে পাড়ি জমিয়েছি।কোথায় থেকে শুরু আর কোথায় তার হবে শেষ সে নিয়ে নাই কোন আক্ষেপ।শুধু ধর্ষিতা নারীর প্রতি রয়ে গেলো এই সাইলেন্ট কিলারের দুটো লাইন-


"হে!ধর্ষিতা নারী তুমি ফিরে তাকাও,রুখে দাঁড়াও হায়নাদের দমন করতে,

তবেই হবে তুমি শ্রেষ্ঠ নারী,হবে তুমি ধর্ষিতাহীন।"


_____সমাপ্ত______

ছোট গল্প ঃঃসাইলেন্ট কিলার। 


ভুল_ত্রুটি_ক্ষমার_দৃষ্টিতে_দেখবেন_ 

বাংলাদেশ বেতার সকাল সাতটার সংবাদ শিরোনাম ২৬_০৯_২০২২ ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 বাংলাদেশ বেতারের সকাল ৭টার সংবাদ

(২৬-০৯-২০২২)

আজকের শিরোনাম -


* বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার চালায় তাদের উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহবান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। 


* পঞ্চগড় জেলায় করতোয়া নদীতে ট্রলার ডুবিতে অন্তত ২৪ জনের প্রাণহানি - রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক। 


* নির্বাচন ও জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই - বললেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। 


* অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভিত্তি মজবুত করতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দেয়ার আহবান জানালেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী। 


* আগ্নেয়াস্ত্র মামলায় জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড । 


* ইতালির নির্বাচনে বুথ ফেরত জরিপে জিততে চলেছেন কট্টর ডানপন্থী জর্জিয়া মেলোনি। 


* এবং আবুধাবীতে আইসিসি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ - আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের অদম্য মেয়েরা লড়বে দক্ষিণ আফ্রিকা নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।

জীবন কাহিনী,,, ফেইসবুক গল্প

"ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুঁয়ে মাকে বললাম, " মা..ভাত দাও।


"মা মাথা নিচু করে অপরাধীর ন্যায় বললো, " বাপরে..ঘরেতো চাউল নাই। 


"আমি মায়ের মন খারাপ দেখে জোরপূর্বক হেসে বললাম, 


" সমস্যা নেই মা...বাইরে থেকে চা বিস্কুট খেয়ে নিবো। আর আমি কাউকে দিয়ে চাল পাঠিয়ে দিচ্ছি। 


"বাড়ীর বড় ছেলে। তিন বোন আর আরেকটা ছোট ভাই আছে। কোনোরকম সারাদিন গ্যারেজে কাজ করে আর বিকেলে দু -তিনটা টিউশনি করে সংসার চালায়। বাবা আমার ছোট ভাই যখন দেড় বছরের তখন স্ট্রোক করে মারা যান। হাঁটতে হাঁটতে এইসব ভাবতেই বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো । 


" চাচা ২ কেজি চাল দাওতো"


"দোকানদার চাচাকে কথাটি বলতেই ওনি দেখেও না দেখার মতো অন্য কাস্টমারদেরকে এইটা সেইটা দিচ্ছেন। আমি আবার বললাম,


" চাচা...


" চাচা সাথে সাথে ক্ষেপে উঠে বললেন,


"বাকি টেহাগুলো আগে দেও এরপরে চাইল দিমু। ৩০০০ টাকার মতো বাকি হইয়া গেছে ওই টেহা না দেওয়া অব্দি কিছু দিবার পারুম না। আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম দোকানের সবগুলো মানুষ আমার দিকে কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। কান্না পাওয়ার কথা কিন্তু পাচ্ছেনা। ছেলে মানুষের কাঁদলে কি আর চলে! ওইদিন দোকানদারের পা ধরে ভাই বোনকে খাওয়ানোর জন্য চাল এনেছিলাম। আর আজ! আজ আমার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত, বোনেরা বিবাহিত। একটাবারো এই পঙ্গু ভাইটার খোঁজ নেয়না। হারিয়ে ফেলেছিলাম একটা পা এক্সিডেন্টে। নিজের ছোট ছোট দুইটা ছেলে মেয়ের চেহারা দেখে আফসোস হয়, কেনো যো আগে স্বার্থপর হতে পারেনি। তাহলে আজ হয়তো আমার স্ত্রী আর সন্তান দুটো না তিন বেলা পান্তা নুন খেয়ে থাকতে হতোনা।


© সমাপ্ত  

স্ত্রির সাথে রাগ,, ভুল শিক্ষা ,, ফেইসবুকের গল্প

 বউয়ের সাথে রাগ করে একটা পার্কে এসেছি।  পার্কের ভেতরে ঢুকতেই হঠাৎ একটি রঙ্গনফুলের গাছের পাশে বসে থাকা বৃদ্ধ লোক চোখে পড়লো। বৃদ্ধ লোকটার নিরব কান্না আমার রাগটাকে কোথাও হাওয়া করে দিলো। বেঞ্চির সাথে হেলান দিয়ে তাঁর নিরব কান্নার সাক্ষী হয়তো রঙ্গন ফুল আর আমিই হলাম। এই বয়সে জীবনের একাকিত্ব বড্ড পোড়ায়। তাহলে উনি কী সেই কারনেই কাঁদছেন?  কিন্তু তাঁর ওই নিরব কান্নায় কোথাও যেন অসহায়তা অনেকাংশে জুড়ে আছে। এক-পা দু-পা করে আমি এগিয়ে গেলাম। তাঁর পাশের খালি জায়গাটা দখল করলাম। আমার উপস্থিতি হয়তো উনি টের পেলেন। একটু সরে গিয়ে আমায় জায়গা করে দিলেন। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো,তিনি তাঁর চোখের জল মুছলেন না। আমি একটু আশ্চর্য হলাম। আমাকে দেখে একটু লজ্জিত হয়েও উনার চোখের জল মোছা উচিত ছিলো। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। তাঁর কী কোন বিষেস কারণ আছে। এবার যেন আমার কৌতুহল আরো বেড়ে গেলো। আমি তাঁর কাঁধে হাত রেখে বললাম।


_ ও চাচা কাঁদছেন কেন? কেউ বকেছে। অবশ্য ছোট্ট বাচ্চাদের একটু বকা দিলেই তাঁরা কেঁদে দেয়। আপনি তো আর বাচ্চা নন! কি ঠিক বলিনি।


আমার কথায় তিনি কোন ভাবভঙ্গি প্রকাশ করলেন না,সেটা তাঁর চেহারা দেখে বুঝলাম। তাই আরো একটু কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম। 


_ আমি তো আপনার ছেলের মতো! ভেতরের কষ্টটা একটু খুলে বলুন। 


এবারের কথাটা হয়তো তাঁর মনে ধরেছে। তাই তিনি চোখের জল মুছে আকাশ পানে তাকালেন। আমিও উনার দেখাদেখি আকাশের ওই তিব্র কড়া রোদের দিকে তাকালাম। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে রইলো। পকেট থেকে রুমালটা বের করে চোখটা মুছে নিলাম। বৃদ্ধ 

লোকটা তখনো আকাশ পানে চেয়ে আছে৷ আমি কয়েক সেকেন্ড তাকাতে পারিনি,আর সে এখনো তাকিয়ে আছে আশ্চর্য। কিছু বলতে উদ্যোগ হলে তিনি হঠাৎ মুখ খুললেন।


_ বুঝলে বাবা, মা জোর করে এক গরীব ঘরের মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছিলো। না ছিলো রূপ না ছিলো ভালো কোন গুন। এটাই ভাবতাম এবং ভেবে এসেছি। বাবা ছোট বেলায় মারা যাওয়ায়,মা কষ্ট করে মানুষ করেন। তাই তাঁর কথা ফেলতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিলাম ওই গেয়ো মেয়েকে বিয়ে করবো। করলাম বিয়ে। কিন্তু কেন জানি মেয়েটার সাথে আমার বনি বনাত হতো না। তাই তাঁর ভালো খারাপ দু'টোই আমার অসয্য লাগতো। যখনই ভাবতাম ওর সাথে আমার সারাজীবন কাটাতে হবে,বিশ্বাস করো মাথাটা যন্ত্রণায় ফেটে যেত। তবুও মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতাম না। কিন্তু কিছু চাপা রাগ থেকে প্রায় ওকে ঘর বন্দী করে মারতাম। আর বেচারি চুপচাপ সয্য করে নিতো। তারপর কয়েক বছর পর ওর কোল আলো করে জন্ম নিলো আমার সন্তান। খোকার জন্মের দিন মনে হলো,জীবনে হয়তো এই প্রথম কোন কাজ সে করেছে। আমি ছুটে গিয়ে ছেলেকে কোলে নিলাম। এ-গালে  ও-গালে চুমুতে ভরিয়ে দিলাম! অথচ যাঁর মাধ্যমে মহান আল্লাহ ওকে আমার ঘরে দিলেন তাঁর খবর একবারও নিলাম না। এভাবেই দিন কেটে বছরে গড়িয়ে গেলে। আগে ওকে বকাঝকা করার কোন কারণ খুঁজে না পেলেও এখন খোকার সূত্র ধরে ওকে আমি প্রায়শই হুমকিধামকি দেই। আর ও চুপচাপ শুনে যায়। খোকার তিন বছর বয়সে মা মারা গেলো। এবার যেন আমি হাতে চাঁদ পেলাম। কথায় কথায় গায়ে হাত তোলা বাবা-মা তুলে কথা বলা এটাই যেন আমার কাজ হয়ে উঠলো। শুধুমাত্র মায়ের শেষ ইচ্ছার জন্য ওকে কখনো ছেড়ে দিতে পারিনি। যাক সে-সব কথা! আসল কথা বলি। ওকে পছন্দ করতাম না বলে,ওর ভালোটাও মনে হতো খারাপ।  আমি যখন কোন খাবার আনতাম খোকার জন্য!  তখন ও সেটা অল্প কিছু খোকাকে দিতো, বাকিটা রেখে দিতো। আর খোকা তো কান্নাকাটি করে বাড়ি মাথায় তুলতো। আর খোকার কান্না দেখে আমি ভুল ঠিক বিচার না করেই ওকে রাগারাগি করতাম। এটাও বলতাম আমি চলে গেলে তুই খাবি এগুলো।  আর ও অসহায়ের মতো তাকিয়ে বলতো।

_ তুমি যা ভাবছো তা না। বাচ্চাদের একসাথে খাবারের সব দিয়ে দিলে,ওদের নজর সব সময় বেশি থাকবে। যখন অভাবের জন্য কম কিছু পাবে,তখন ওদের হবে না। 

আর ওর এই কথা শুনে ওকে একটা থাপ্পড় দিয়ে বাকি রেখে দেওয়া খাবার খোকাকে এনে দিতাম। এভাবেই আমি আমার খোকাকে ছোট থেকেই চোখ বড় বানিয়ে দেই। যা চাইতো সেটা সাথে সাথে দিয়ে দেওয়া। যখন লাগবে বলতো,তখনই প্রশ্ন না করে সেটা কিনে দেওয়া। নিজের পছন্দের খাবার না খেয়ে ওকে দিয়ে দেওয়া!  মানে একপ্রকার ওকে বেপথে দেওয়ার মতো সব কাজ আমি করেছি। এভাবে সময় গড়িয়ে বহুবছর কেটে গেছে। আমার বয়স ষাটের দশকে গিয়ে ঠেকেছে। ওই বয়সেও আমি আমার স্ত্রীর সাথে আগের মতোই ব্যবহার করেছি। আমার দেখাদেখি ছেলেটাও মা'কে পছন্দ করতো না। কারণ আমি তাঁকে বেপথে চলতে শিখিয়েছি,আর তাঁর মা বাঁধা দিয়েছে সেই পথে হাঁটতে।  মেরেছে, বকা দিয়েছে বুঝিয়েছে। সে বড়দের অসম্মান করেলেই তাঁর মা তাঁকে বকা দিতো,আমি কোলে টেনে নিয়ে উল্টো স্ত্রীকে বকতাম। কিছু নেই বলে যখন খোকা মিথ্যা বলতো,তখন ওর মা বুঝাতো! এভাবে মিথ্যা বলতে নেই। আর আমি সেই মিথ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে খোকাকে সেই জিনিস এনে দিতাম। ঝগড়া মারামারি করে খোকা বাড়ি ফিরলে ওর মা রাগ করে যখন ভাত দিতো না। আমি স্ত্রীকে দু'টো কড়া কথা শুনিয়ে খোকাকে পাশে বসিয়ে খাবার খাওয়াতাম। খোকা বড় হলো,বড় হলো তাঁর চাহিদা। বিয়ে করালাম জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে। আমার স্ত্রী বললো,যে বিয়েতে যত কম আয়োজন হবে,সেই বিয়েতে আল্লাহর রহমত তত। ছেলে মা'কে ধমক দিয়ে বললো। _ আমার বাবা-র কি কম আছে নাকি? তোমার তো আমার সব কিছুতেই অসুবিধা। কোন ভাগ্যে তোমার গর্ভে আল্লাহ আমাকে দিলেন আমি বুঝি না। 

আর আমি সব কথায় ছেলেকে সায় দিতাম। একদিন রাতের বেলায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমার স্ত্রী বললো। - যেভাবে ছেলেটাকে মানুষ করেছো,আমার তোমায় নিয়ে বড্ড ভয় হয়। কবে জানি তোমার ছেলে তোমার কলার ধরে বলবে! এটা আমার চাই মানে চাই। আমি হয়তো সেদিন দেখা'র জন্য বেঁচে থাকবো না। আর বেঁচে থাকতেও চাই না। শুধু প্রার্থণা করি,সেদিন এই অভাগীর কথা যেন মনে পড়ে তোমার চোখের জল না ঝড়ে। যদি সত্যি ঝড়ে না! আমি যদি দেখতে পাই সইতে পারবো না। প্লিজ তুমি সেদিন আমার কথা ভেবে কেঁদো না কিন্তু। আর ওর কথা গুলো শুনে বললাম। কানের ধারে প্যানপ্যান করো না-তো ঘুমাও। কিন্তু আমি কি কোন দিনও ভেবেছিলাম সেই রাত ছিলো শেষ রাত আমাদের পাশাপাশি শোয়ার। ঘুম থেকে উঠে সেদিন হয়তো আমি প্রথম দেখলাম ও এখনো আমার পাশে শুয়ে আছে। জীবনের প্রায় সাইত্রিশ  বছর ওর সাথে কাটিয়ে এই প্রথম ওর আগে আমার ঘুম ভেঙেছে। বেপারটা কেন জানি সাধারণ মনে হয়নি আমার। ওকে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে আমার খুব ভয় হলো। খুব ভয়! ছোট বাচ্চাদের যেমন কেউ চমকে দিলে ভয় পায়, ঠিক তেমন ভয়। আমি খুব নরম করে সেদিন ওকে ডেকেছিলাম। আর মনে মনে বলছিলাম, আমি যা ভাবছি তা যেন সত্যি না হয়। কিন্তু আমার ভাবনা মিথ্যা করে দিয়ে ও সেদিন ওঠেনি। আমি হঠাৎ খাট থেকে নিচে পড়ে গেলাম। চিৎকার করে খোকাকে ডাক দিলাম। খোকা আর খোকার বউ ছুটে এলো। অল্প সময়ের মধ্যে পুরো এলাকায় খবর ছড়িয়ে গেলো ও আর পৃথিবীতে নেই। জোহর বাদ দেওয়া হলো মাটি। ওর চলে যাওয়াতে হয়তো কেউ কষ্ট পায়নি,তাই আমাদের বাড়িটা মৃত বাড়ি মনে হয়নি। রাত বারার সাথে সাথে সকল আত্মীয় স্বজনরা বাড়িতে চলে গেলো। রইলাম শুধু আমি খোকা,খোকার বউ। ওরা নিজেদের মতো করে ঘরের দুয়ার আঁটকে দিয়ে শুয়ে পড়লো। আমি বারান্দায় বসে রইলাম প্রায় অনেক রাত। যখন ঘরে এলাম,তখন বুকটা ধক করে উঠলো। ওই প্রথম আমি ওর শূন্যতা অনুভব করলাম। মনে করতে রইলাম ওর সকল কথা। আস্তে আস্তে সব কিছু পাল্টে গেলো। যে সন্তানের কাছে আমি বেস্ট বাবা ছিলাম! আজ তাঁর কাছে বোঝা হয়ে উঠলাম। এখন আর আমার খাবারের খোঁজ কেউ নেয় না। খোকা তো জানেই না,আমি ঠিক মতো তিনবেলা খাবার খাই কিনা। অথচ নিজের পছন্দের খাবার গুলো নিজে না খেয়ে ওকে খাইয়েছি। আজ ওর কথা বড্ড মনে পড়ে। ও বলতো সন্তান হচ্ছে নরম কাঁদার মতো,যেমন গড়বে তেমন গড়াবে। আমি ওকে খারাপ গড়েছি তাই ও খারাপ হয়েছে। কখনোই আমি ওর কথার গুরুত্ব দেইনি। ও বলেছিলো,ছেলেকে মানুষ করো,মানুষের মতো দেখতে অমানুষ নয়। সেদিন এই কথার জন্য ওকে কি মা'রটাই না দিলাম। নিজের বলতে আজ আর কিছু নেই। সব নিয়ে গেছে খোকা। শেষ সম্বল বলতে আছে বাড়িটা। আজ সেটার জন্যও আমার দিকে তেড়ে এসেছে। বলে আমার ব্যবসার জন্য টাকা দরকার। তুমি যদি ভালোয় ভালোয় না দেও দরকার হলে তোমায় খুন করবো। আর কি বলবো বলো তো? আজ মনে হচ্ছে সেদিন রাতের বলা কথা গুলো। ও হয়তো সঠিকটা জানতো। আজ আমি আমার জীবনের কর্মফল পাচ্ছি। এটাই আমার পাওয়ার ছিলো। আমার ভুল ছিলো না,ছিলো অন্যায়! হ্যা অন্যায়। আজ আমি কাঁদছি কেন এটা তো হওয়ারি ছিলো। হ্যা হওয়ারি ছিলো। 


এই একটা কথা বলতে বলতে বৃদ্ধ লোকটা সামনের দিকে  চলে গেলো। আস্তে আস্তে আমার চোখের আড়াল হয়েও গেলো। আমি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে ভাবলাম। তাহলে আজ আমার স্ত্রী যে কথা গুলো বললো সেটা পুরোপুরি সঠিক। আমার সাত বছরের ছেলেটা আমার পকেট থেকে বিশ টাকা না বলে নিয়েছে। এই জন্য আমার স্ত্রী আমার ছেলেকে বকেছে,যাঁর জন্য ছেলে আজ খাবার খায়নি দুপুরে। অনেক বোঝানোর পরেও যখন ছেলে খাবার খায়নি। তখন ছেলেকে দু'টো চড় দিয়েছে। অন্যায় করবে আবার রাগ দেখাবে এই ঘরে সেটা হবে না। আজ বিশ টাকা নিয়েছো,কাল ত্রিশ টাকা। আস্তে আস্তে তোমার লোভ বারবে। ঘরে পাবে না, বাইরে চোখ যাবে। অফিস থেকে ফিরে ঠিক এগুলোই শুনলাম। ছেলের গালের লাল হয়ে যাওয়া চড়ের দাগ দেখে মাথা গরম করে স্ত্রীকে গালাগাল দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমার টাকা নিয়েছে ওর কি সমস্যা।  কিন্তু এখানে এসে বুঝলাম টাকা আমার নিলে কি হবে। সন্তান আমার চুরি করেছে। কোন কিছু না বলে নেওয়া মানেই চুরি। তাহলে আমিও তো ওই চাচার মতো নিজের সন্তানকে ভুল পথে পরিচালনা করছি। বাড়িতে গিয়ে আগে আমাকে ছেলেকে বুঝাতে হবে। তারপর ছেলের মায়ের রাগ ভাঙতে হবে। কারণ সে তো ভুল নয় সঠিকটা বোঝাচ্ছে আমার সন্তানকে। আমার সন্তান  যেন কোন ভুল পথে পা না বারায়। তাহলে ভুল তো আমার, আমার স্ত্রী নয়।


সমাপ্তি 

ফেইসবুকের গল্প


এটা গল্প, কিন্তু কোথাও আমি বাস্তবতা থেকে লিখেছি। শিক্ষা বড় কঠিন জিনিস। সবাই দিতে জানে না! আর কেউ বুঝতে  জানে না।

প্রশ্ন ঃঃযাওয়ালের সালাত কাকে বলে, রফিকুল ইসলাম বিন সাঈদ ফেইসবুকে

 প্রশ্ন:যাওয়ালের সালাত কাকে বলে? আজ যাওয়ালের সালাতের পরিচয়,সময়, গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।

▬▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬▬

দুঃখজনক হলেও সত্য ইসলামী শরীয়তে যাওয়ালের সালাত তথা সূর্য ঢলার বা হেলার সালাত নামে কোন সালাতের অস্তিত্ব আছে এ বিষয়টি আমাদের অনেকের কাছেই অপরিচিত।অথচ একাধিক বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমানিত রাসূল সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ঠিক মাথা বরাবর থেকে পশ্চিম দিগন্তে একটু ঢলে গেলে নিয়মিতভাবে চার রাকআত সালাত আদায় করতেন। 

.

✪ যাওয়ালের নামাজের পরিচয় ও সময়:

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

যাওয়াল (زَوَال) অর্থ: বিলোপ, বিলুপ্তি,অস্তগামিতা

,সূর্য হেলার সময়,উধাও, মধ্যাহ্ন, দ্বিপ্রহর ইত্যাদি। 

চাশতের নামায আদায়ের পর সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর থেকে পশ্চিম আকাশে হেলতে শুরু করে, তখন যোহরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যোহরের সূচনাতেই পড়তে হয় যাওয়ালের নামাজ। 

.

শরিয়তের পরিভাষায় যাওয়াল হলো দিনের তৃতীয় প্রহরের প্রারম্ভ, মধ্যাহ্নোত্তর, অপরাহ্ণের সূচনা সময়; দিনের মধ্যভাগে বা দুপুরে সূর্য যখন মাথার ওপর থেকে পশ্চিম দিকে হেলে যায়। এই সময়কে ওয়াক্তুজ যাওয়াল বলা হয়। এটি মূলত মধ্যদিনের সিজদা ও নামাজ নিষিদ্ধ সময়ের পর জোহরের ওয়াক্তের সূচনাপর্ব। এ সময় যে নফল নামাজ আদায় করা হয়, তাকে যাওয়ালের নামাজ বলা হয়।সহজে বলতে গেলে,যোহরের ওয়াক্ত সূচনাপর্ব চার রাকাত নফল নামাজ পড়াকে যাওয়ালের নামাজ বলে।উক্ত ৪ রাকাত নফল সালাত পড়া সুন্নাহ। 

.

হাদিসে এসেছে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ঢলার পর চার রাকাত পড়তেন। এ ক্ষেত্রে তিনি চার রাকাত শেষ করার পূর্বে সালাম ফেরাতেন না।

[সিলসিলা সহিহাহ ৭/১১৯৭, শাইখ আলবানী রহঃ বলেন, এর সনদ সহিহ মুসলিমের শর্তানুযায়ী  جيد (ভালো)। এছাড়াও তিনি তাখরীজু মিশকাতিল মাসাবিহ গ্রন্থে এটিকে সহিহ বলেছেন। হা/১২২৬]

.

অপর বর্ননায়,আবু আইয়ুব রা. হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যোহরের পূর্বে চার রাকআত-যার মাঝে কোন সালাম নেই-তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়।”[আবূ দাঊদ ১২৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৫৮৫, সহীহ আল জামি‘ ৮৮৫, ইবনু মাজাহ্ ১১৫৮ সনদ হাসান]


উপরোক্ত দুটি হাদীস থেকে স্পষ্ট যে, এ চার রাকআত

এক সালামে শেষ করতে হবে অর্থাৎ দু রাকআত পড়ে সালাম ফেরানো যাবে না বরং চার রাকআত শেষ করে সালাম ফিরাতে হবে।

.

✪ যাওয়ালের সালাতের ফজিলত ও রাকাতসংখ্যা:

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যোহরের পূর্বের চার রাকাত নামাজ ভোররাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ) সমতুল্য।’’ [আলবানি, সহিহুল জামি’: ৮৮২, হাদিসটি হাসান]

.

আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি করিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিনিয়ত (পশ্চিমাকাশে) সূর্য ঢলার সময় চার রাকাত নামাজ পড়তেন। একবার আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! (আপনাকে দেখছি) সূর্য ঢলার সময় চার রাকাত প্রতিনিয়তই পড়ছেন!’ তিনি বললেন, “সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং যোহরের নামাজ না পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। তাই, আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার নেক আমল (আসমানে) উঠুক।” আমি বললাম, ‘এ নামাজের প্রত্যেক রাকাতেই কি কিরাত আছে?’তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, ‘তার মাঝে কি পৃথককারী সালাম আছে?’ (অর্থাৎ, দুই রাকাত পর সালাম ফেরানো আছে?) তিনি বললেন, “না।” (অর্থাৎ, এক সালামে চার রাকাত। যেভাবে আমরা যোহরের চার রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়ি, ঠিক সেভাবে) 

[তিরমিযি, আশ-শামাইল: ২৪৯; হাদিসটি সহিহ]


আব্দুল্লাহ ইবনে সায়েব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃসূর্য (পশ্চিম গগনে) ঢলে যাবার পর, যোহরের ফরযের পূর্বে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার রাকআত সুন্নত নামায পড়তেন। আর বলতেন, “এটা এমন সময়, যখন আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তাই আমার পছন্দ যে, সে সময়েই আমার সৎকর্ম ঊর্ধ্বে উঠুক।[তিরমিযী ৪৭৮,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ৮৭৯]

.

✪ এখন এই সালাত কি যোহরের চার রাকাত সুন্নাত নামাজ নাকি অন্য কোনো নফল নামাজ?

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

এটি কোন সালাত এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে দুটি মত রয়েছে  কতিপয় আলেম বলেন, এই চার রাকআত মূলত: যোহরের চার রাকআত সালাত আর কতিপয় বিদ্বানের মতে, এটি যোহরের পূর্বের চার রাকআত সুন্নত নয় বরং এটি স্বতন্ত্র সালাত।তবে মতানৈক্য থাকলেও অধিক বিশুদ্ধ হল একটি স্বতন্ত্র সালাত অর্থাৎ যোহরের সুন্নত নয় এই মর্মে কয়েকটি মত,


➤(১).ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রাহ.) বলেন, এই চার রাকাত নামাজ যোহরের সুন্নাত নয়, বরং এটি অন্য নামাজ, যা তিনি (নবিজি) সূর্য ঢলার পর পড়তেন। আর এই স্বতন্ত্র আমলটি করার পেছনে কারণ হলো, এটি দিনের ঠিক মধ্যভাগ ও সূর্য ঢলার সময়। এর রহস্য হলো—আল্লাহ ভালো জানেন—এটি দিনের মধ্যভাগ, যার অবস্থান রাতের ঠিক মধ্যভাগের বিপরীতে। দিনের মধ্যভাগে সূর্য ঢলার পর আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয় আর রাতের মধ্যভাগের পর আসমানে মহান আল্লাহর অবতরণ ঘটে (যা সহিহ হাদিসে আছে)। সুতরাং এ দুটি আল্লাহর নৈকট্য ও রহমতের সময়। [ইবনুল কাইয়িম, যাদুল মা‘আদ মিশকাতুল মাসাবি,১১৬৮ নং হাদিসের ব্যাখ্যা দৃষ্টব্য]


➤(২).আল্লামা ইরাক্বী বলেন, এ চার রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) যুহরের পূর্বের চার রাক্‘আত ভিন্ন অন্য সালাত। এ সালাতকে সুন্নাতে যাওয়াল বলা হয়।[মিশকাতুল মাসাবীহ ১১৬৯ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য]

.

➤(৩).এছাড়া ইমাম গাযালি, ইমাম মুনাউয়ি,আল্লামা মুবারকপুরিসহ অনেকেই স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, যোহরের চার রাকাত সুন্নাত এবং যাওয়ালের চার রাকাত সুন্নাত ভিন্ন ভিন্ন নামাজ। [ইহয়াউ উলুমিদ্দিন, ফায়দ্বুল ক্বাদির, মির‘আতুল মাফাতিহ, তুহফাতুল আহওয়াযি]

.

➤বিপরীত দিকে যারা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে  হানাফি মাযহাবের ফকিহদের একাংশ, ইমাম বায়যাবি (রাহ.)-সহ অনেক আলেমের মতে, হাদিসে যাওয়ালের নামাজ দ্বারা মূলত যোহরের চার রাকাত সুন্নাত উদেশ্য। তাঁরা আবদুল্লাহ্ ইবনু সায়িব (রা.)-এর হাদিসের ব্যাখ্যায় এই মত পেশ করেছেন। [আদ দুররুল মুখতার: ২/১৩] তবে, এই মতটির পক্ষে শক্তিশালী স্পষ্ট কোনো দলিল পাওয়া যায় না।তাই এটি গ্রহণযোগ্য নয়।তাই এটি গ্রহণযোগ্য নয়।[কিছুটা নোট তাসবিহ ফেইজ থেকে]


❂ উপসংহার.উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম—

➤যাওয়ালের নামাজের  রাকাত সংখ্যা চার। 

➤উক্ত সালাত একত্রে চার রাকাত পড়তে হয়, যেভাবে

 যোহরের চার রাকাত সুন্নাত পড়া হয় যদিও যোহরের চার রাকাত সুন্নত দুই রাকাত করে দুই সালামে পড়া উত্তম। 

➤যাওয়ালের নামাজ এবং যোহরের পূর্ব চার রাকাত সুন্নত ভিন্ন নামাজ প্রমানিত। 

➤যোহরের চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এটি ত্যাগ করা উচিত নয়।পক্ষান্তরে যাওয়ালের নামাজ মুস্তাহাব আমল; আদায় করলে নেকি হবে, আদায় না করলে কোনো অসুবিধা নেই ইনশাআল্লাহ ।

➤যাওয়ালের নামাজ যোহরের ওয়াক্ত শুরুর সাথে সাথেই পড়তে হয়। অপর দিকে যোহরের চার রাকাত সুন্নত আযানের পর ফরজ সালাতের পূর্বে পড়তে হয়।

অতএব, বেশি দেরি না করে, যাওয়ালের নামাজ আনুমানিক সাড়ে বারোটার মধ্যে পড়ে নেওয়াই উত্তম। 

(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)


কুরআন-সুন্নাহর আলোকে পবিত্রতা অর্জন থেকে শুরু করে রাসূল (ﷺ)- এর সালাত সম্পাদনের বিশুদ্ধ পদ্ধতি। ধারাবাহিক ৫০ পর্বের আজ ৫০ তম পর্ব।

▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬

ভাগ্য ফেইসবুক থেকে নেওয়া গল্প

আমার শালিকা রুমির বিয়ে হবার পর থেকে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে শ্বশুর আব্বা আমাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি আসল রহস্যটা উদঘাটন করতে পারি রুমির স্বামীর অর্থবিত্ত দ্বারা। কেননা আমি পেশায় একজন সাধারণ হাই স্কুলের শিক্ষক হলেও রুমির স্বামী পেশায় একজন সরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা। 

আমার স্ত্রীও বোনের এমন বড় ব্যক্তিত্বের সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকে হিংসায় জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে এবং মাঝেমধ্যেই আমাকে আমার অবস্থান নিয়ে হেয় করতে ভুলে না। নারীদের এমন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমি আগে থেকেই অবগত হওয়াতে আমার স্ত্রীর এরকম ব্যবহারে আমি কিছু মনে করিনা। সেদিন সুমি অর্থাৎ আমার স্ত্রী কিছুটা আফসোসের স্বরেই আমার পাশে বসে বলে উঠলো, 
"কেবল আমিই তোমার সাথে এই কুড়েঘরে সংসার করলাম, অন্য কোনো মেয়ে হলে দুদিনও থাকতো না। আমার বোনটা যে স্বর্ণ কপাল নিয়ে জন্মেছিল সেটা ওর শ্বশুরবাড়ি দেখলেই বোঝা যায়। আর আমি জন্মেছিলাম এই পোড়া কপাল নিয়ে।"
সুমির কথা শুনে আমি শুধু মুচকি হাসি কিন্তু কিছুই বলিনা। কারণ মেয়েদের আকাঙ্ক্ষার কোনো শেষ নেই, তাদের যত দেওয়া হবে ততই তারা আফসোসের সাগরে হাবুডুবু খাবে, হয়তো সব মেয়ে এক নাও হতে পারে।

রুমির বিয়ের দুমাস পর শীতের ছুটিতে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। আমাদের পাশাপাশি রুমির স্বামীসহ ওদের শ্বশুর বাড়ি থেকেও অনেক মেহমান এসেছে শীতের আমেজটা উপভোগ করার জন্য। এত এত মেহমানের খাবার দাবার রান্নার দায়িত্বটা আমার স্ত্রী এবং শাশুড়ি আম্মা বেশ খুশি মনেই সম্পাদন করছেন। কিছুক্ষণ পরপরই আমার শাশুড়ি এসে তার ছোট মেয়ে জামাইকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছেন যে কিছু লাগবে কিনা? অথচ আমি এবাড়িতে আসার পর আমার দিকে একবারের জন্য মুখ ফিরিয়ে তাকিয়েছেন কিনা তা সন্দেহ! তবুও মনকে এই বলে বুঝ দিচ্ছি যে, নতুন জামাইয়ের প্রতি এটুকু কদরতো থাকবেই। আর আমিতো এই বাড়ির পুরোনো সদস্য, পুরাতন দের বেশি আপ্যায়ন না করলেও হয়। এসব বলে মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার মাঝেই আমার শ্বশুর আব্বা পুনরায় আগুনে ঘি ঢালা রূপে আবির্ভাব হলেন। তিনি বাজার থেকে তার ছোট জামাইয়ের পছন্দের সকল কিছুই কিনে এনেছেন এবং আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে তিনি সবার সামনেই রুমির স্বামীর ব্যপারে গুনগান গাইছেন। তিনি ভেবেছিলেন এতে হয়তো আমি ঈর্ষান্বিত হবো কিন্তু আমিতো আর এতো সহজেই ভেঙ্গে যাওয়ার পাত্র নই।

এরপর কেঁটে যায় আরো ছয়মাস, কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা ব্যপার হলো এই ছয়মাসে আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে কেউই আগবাড়িয়ে কল দিয়ে আমার খোঁজখবর নেয়নি। অথচ রুমির বিয়ের আগে আমার শ্বশুর সামান্য কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলেও আমার কাছে কল দিয়ে উপদেশ গ্রহণ করতেন নয়তো সাহায্য চাইতেন। আমিও কখনোই তাদেরকে কোনো কাজে অসম্মতি জানিয়ে নিরাশ করতাম না। তবে সুমির সাথে তারা নিয়মিতই কথা বলেন কেননা মেয়ের সাথে কি কথা না বলে থাকা যায়?
বোঝাই যাচ্ছে আমার শ্বশুর আব্বা আমার থেকেও রুমির স্বামীকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। 

আজ বাসায় ফেরার পর হঠাৎই সুমি বেশ উৎকন্ঠা নিয়ে আমার পাশে বসলো। খারাপ কোনো সংবাদ ব্যতীত সচরাচর ওর এমন উৎকন্ঠা দেখা যায় না। কৌতূহল বসত জিজ্ঞেস করলাম,
"কি হলো তোমার? এমন চিন্তিত মুখে বসে আছো কেন?"
"না আসলে আজ মা কল দিয়েছিল। বললো রুমি নাকি ওর স্বামীর সাথে আর ঘর করতে চায় না। মা হাজারবার বুঝিয়েছে কিন্তু ওতো নাছোরবান্দা।"
আমি অবাক নয়নে সুমির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
"এতো ভালো ঘরে ওর বিয়ে হলো এমনকি ওর স্বামীও একজন সরকারী চাকুরিজীবী তাহলে কি কারণে ও সংসার ছাড়তে চায়? তোমার মতো অভাবে তো আর নেই। তুমিতো আমার মতো এই গরীবের ঘরেও সংসার করে চলেছো।"
আমার কথায় সুমি বেশ ইতঃস্তত ভঙ্গিতে বললো, 
"ধুর এসব কথা ছাড়ো এখন। আর কারণটা আমিও ঠিক জানিনা। তুমি একটু বাবাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস কইরো।"
আমি আর কিছু না বলে গোসলের প্রস্তুতি নিতে চলে গেলাম।

এর কিছুদিন পর হঠাৎই রুমি ওর শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে চলে আসে। মূলত সবার অজান্তেই রুমির স্বামী অন্যত্র এক মেয়েকে বিয়ে করে। আর এই বিষয়টা রুমির পাশাপাশি আমার শ্বশুর শাশুড়িও মেনে নিতে পারেননি। কারণ যেই মেয়ে জামাইকে তারা এত আদর আপ্যায়ন করেছেন সেই লোকই আজ তাদের মেয়েকে ধোঁকা দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছে, এটা কোনো বাবা মা'ই হয়তো মেনে নিতে পারবে না।

রুমি ওর স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার কিছুদিন পরই আমি সুমিকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসি। আমার শ্বশুর আমাকে দেখে কোনো এক অজানা কারণে মুখ লুকাচ্ছেন। এর পিছনের গল্পটা আমি জানলেও তখন প্রকাশ করলাম না।

রাতে যখন সুমি আর আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিবো তখন হঠাৎই আমার স্ত্রী বেশ চিন্তিত মুখে বলে ওঠে, 
"আমার বোনটার সাথে কেন যে এমন হলো বুঝতে পারছি না। ওর ভাগ্যটা আসলেই খারাপ।"
আমি সামান্য মুচকি হেসে বললাম, 
"ওতো স্বর্ণের কপাল নিয়ে জন্মেছিল তাই হয়তো এরকম হলো। আর তুমিতো জন্মেছিলে পোড়াকপাল নিয়ে তাই হয়তো এখনও তোমার জীবনে কোনো দূর্ঘটনা ঘটেনি।"
আমার কথা শুনে স্বভাবতই আমার স্ত্রী মুখে কুলুপ এঁটে চুপ করে রইল। কারণ এমন বাক্যের প্রতিউত্তরে কিছু বলার মতো বাক্য তার মুখে অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। এটাই হয়তো এক অন্য রকম মধুর প্রতিশোধ। 

(সমাপ্ত)

ফেইসবুক থেকে কপি করা 


 

আপনার গাড়ির স্টিয়ারিং কাঁপছে??????

আপনার গাড়ির স্টিয়ারিং কাপছে??


কি কি কারণে গাড়ির স্টিয়ারিং কাপতে পারে-


১.হুইল এলাইনমেন্ট ঠিক না থাকলে।

২.টায়ারের কিছু অংশ যদি ফুলে যায়। অর্থাৎ কিছুটা টিউমারের মতো।

৩.ডিস্ক / ড্রাম বাঁকা থাকলে (ওয়ার্কশপে বলে টাল থাকলে)। 

৪.সিভি জয়েন্টের সমস্যা হলে।

৫.স্টিয়ারিং র‍্যাক খারাপ হলে বা র‍্যাকে থাকা বুশগুলো ছিড়ে গেলে।

৬.এক্সেলের বিয়ারিং নষ্ট হলে বা এক্সেল খারাপ হলে।

৭.চাকা যদি ভালো করে না লাগানো হয়।

৮.সাসপেনশন খারাপ হলে।

৯.গিয়ার বক্স/ইঞ্জিন মাউন্টিং ছিঁড়ে গেলেও গাড়ি কাপতে পারে।

১০.এছাড়া বিভিন্ন বুশ থাকে সেগুলো ছিঁড়ে গেলেও গাড়ি কাপতে পারে।


মোটামুটি এসব কমন সমস্যার কারনে স্টিয়ারিং কাপতে পারে। 

জানা প্রয়োজন গায়রত কী? *******************

 ★জানা প্রয়োজন গায়রত কী? ************************** প্রিয় নবীজীর সাহাবীরা তাদের স্ত্রী'র নাম পর্যন্ত পরপুরুষকে বলতো না। এটাই গায়রত।তথা-(...