এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩

উপন্যাস- হাজার বছর ধরে ২ _____ জহির রায়হান poyet and poyem ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 উপন্যাস- হাজার বছর ধরে

_____ জহির রায়হান

                                   দুই- 


ধপাস ধপাস ঢেঁকির শব্দে গমগম শিকদার বাড়ি।


ঘুমে ঢুলু ঢুলু বউ দুটোর গা বেঁয়ে দরদর ঘাম নামে। এতক্ষণে রীতিমত হাঁপিয়ে উঠেছে ওরা। আচলটা কাঁধের ওপর থেকে নামিয়ে নিয়ে, সামনে হাত রাখার বাঁশের ওপরে গুটিয়ে রেখেছে দুজনে। মাঝে মাঝে তুলে নিয়ে বুক আর গলার ঘাম মুছে নিচ্ছে। ঘামে কাপড়টা চপ চপ করছে ওদের।


সেদিকে খেয়াল নেই মকবুলের। ও ভাবছে অন্য কথা।


বাড়ির ওপরের জমিটাতে লাঙ্গল না দিলে নয়। অথচ হাল যে একটা ধার পাবে সে সম্ভাবনা নেই। লাঙ্গল অবশ্য যা হোক একটা আছে ওর। অভাব হলো গরুর। গরু না হলে লাঙ্গল টানবে কিসে। আচ্ছা, এক কাজ করলে কেমন হয়। মকবুল ভাবলো, বউ দুটোকে লাঙ্গলে জুড়ে দিয়ে, দূর এটা ঠিক হবে না। লোকে গালাগাল দেবে ওকে। বলবে, দেহ বউ দুইড্যা দিয়া লাঙ্গল টানায়। তার চেয়ে এক কাজ করলে কি ভালো হয় না? না। বউদের দিয়েই লাঙ্গল টানাবে সে। দিনে নয়, রাতে। বাইরের কোন লোকে দেখবার কোন ভয় থাকবে না তখন। বউরা অবশ্য আপত্তি করতে পারে। কিন্তু ওসব পরোয়া করে না মকবুল। মুফত বিয়ে করে নি সে। পুরো চার চারটে টাকা মোহরানা দিয়ে এক একটা বিয়ে করেছে। হুঁ।


ভাবছিলো আর সোনারঙ ধানগুলো ঢেঁকির নিচে ঠেলে দিচ্ছিলো মকবুল। হঠাৎ একটা তীব্র আর্তনাদ করে হাতটা চেপে ধরলে সে। অসতর্ক মুহূর্তে ঢেঁকিটা হাতের ওপর এসে পড়েছে ওর। আল্লারে বলে মুখ বিকৃত করলো মকবুল।


টুনি আর আমেনা এতক্ষণে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ঢেঁকির উপর। ঘোর কাটতে ছুটে নেমে এলো ওরা। ওদের কাছে এগিয়ে আসতে দেখে ওদের গায়ের ওপরে থুতু ছিটিয়ে দিল মকবুল, দূর-হ দূর-ই আমার কাছ থাইকা। বলতে গিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত চাপালো মকবুল।


আমেনা বললো, দেহ কারবার, নিজের দোষে নিজে দুঃখ পাইল আর এহন আমাগোরে গালি দেয়। আমরা কি করছি।


তোরা আমার সঙ্গে শতামি করছল। বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললো মকবুল। তোরা দুই সতীনে ইচ্ছা কইরা আমার হাতে ঢেঁকি ফালাইছল। তোরা আমার দুশমন।


হ্যাঁ দুশমনই তো। দুশমন ছাড়া আর কি। কাপড়ের অ্যাঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছলো আমেনা।


টুনি এগিয়ে গেলো ওর ফুলো হাতে একটা ভিজে ন্যাড়া বেঁধে দেয়ার জন্যে। লাফিয়ে তিন হাত পিছিয়ে গেলো মকবুল। দরকার নাই, দরকার নাই। অত সোয়াগের দরকার নাই। বলে একখানা সরু কাঠের টুকরো নিয়ে ওর দিকে ছুঁড়ে মারলো মকবুল।


বিষ উঠছে নাহি বুড়ার? এমন করতাছে ক্যান। চাপা রোষে গজগজ করতে করতে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এলো টুনি। খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়াতে ঠাণ্ডা বাতাসে দেহটা জুড়িয়ে গেলো ওর। হঠাৎ মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। উঠোন থেকে মন্তুর ঘরের দিকে তাকালো ও। একটা পিদিম জ্বলছে সেখানে। একবার চারপাশে দেখে নিয়ে মন্তুর ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো টুনি।


মাচাঙের ওপর থেকে কথা বালিশ নামিয়ে নিয়ে শোবার আয়োজন করছিলো মন্তু।


টুনি দোরগোড়া থেকে বলে, বাহ, বারে।


মন্তু মুখ তুলে তাকায় ওর দিকে। বলে, ক্যান কি অইছে?


টুনি ফিসফিসিয়ে বলে, আজ যাইবা না?


মন্তু অবাক হয়, কই যামু?


টুনি মুখ কালো করে চুপ হয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর বলে, ক্যান ভুইলা গেছ বুঝি?


মন্তুর হঠাৎ মনে পড়ে যায়। বেড়ার সঙ্গে ঝােলান মাছ ধরার জালটার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে, অ- মাছ ধরতে।


যাইবা না? সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে টুনি।


মন্তু হেসে বলে, যা যামু। কিন্তু পরক্ষণে চিন্তিত হয়ে পড়ে সে, বুড়ো যদি টের পায় তাইলে কিন্তুক জানে মাইরা ফালাইবো।


হঠাৎ ফিক করে হেসে দেয় টুনি। মারেরে ডরাও নাকি?


মন্তু সে কথার জবাব না দিয়ে টুনি বলে, ভাত আইছ?


না। তুমি খাইছ?


হুঁ। তুমি গিয়া খাইয়া আস যাও। জলদি কইরা আইসো। বিছানাটা আবার গুটিয়ে রেখে। বেড়ার সঙ্গে ঝােলান জালটা মাটিতে নামিয়ে নেয় মন্তু।


ও ঘর থেকে আমের ডাক শোনা যায়, টুনি বিবি কই গেলা, খাইতে আহ!


আহি, বলে সেখান থেকে চলে যায় টুনি।


আজকাল রাতের বেলা আমেনার ঘরে শোয় মকবুল। টুনি থাকে পাশের ঘরে। আগে, ফাতেমা আর ও দুজনে এক সঙ্গে থাকতো। মাসখানেক হলো ফাতেমা বাপের বাড়ি গেছে। এখন টুনি একা। রাতের বেলা ইচ্ছেমত যেখানে খুশি ঘুরে বেড়ালেও ধরবার উপায় নেই। রাত জেগে মাছ ধরাটা ইদানীং একটা নেশা হয়ে গেছে ওদের। ঘুঘুটে অন্ধকার রাতে গ্রামের এ পুকুর থেকে অন্য পুকুরে জাল মেরে বেড়ায় ওরা। হাতে একটা টুকড়ি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে থাকে টুনি। জালে ওঠা মাছগুলো ওর মধ্যে ভরে রাখে।


পর পুকুরের মাছ ধরতে গিয়ে সমস্ত সময় সজাগ থাকতে হয় ওদের। চারপাশে দৃষ্টি রাখতে হয়। একদিন প্রায় ধরা পড়ে গিয়েছিলো দুজনে। জমীর মুন্সির বড় পুকুরে মাছ ধরতে গিয়েছিলো সেদিন। আকাশে চাঁদ ছিলো কিন্তু চাদনী ছিলো না। কালো মেঘে ছেয়ে ছিলো পুরো আকাশটা।


এক হাঁটু পানিতে নেমে জালটাকে সন্তর্পণে ছুঁড়ে দিয়েছিলো সে। পুকুরের মাঝখানটাতে। শব্দ হয় নি মোটেও। কিন্তু পুকুর পাড় থেকে জোর গলায় আওয়াজ শোনা গেল, কে, কে জাল মারে পুকুরে?


এক হাঁটু পানি থেকে নীরবে এক গলা পানিতে নেমে গেলো মন্তু। টুনি ততক্ষণে একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে।


জমীর মুন্সির হাতের টর্চটা বিদ্যুদ্বেগে ছুটে গেল পুকুরের এপার থেকে ওপারে। মনে মনে বার বার খোদাকে ডাকছিলো মন্তু, খোদা তুমিই সব।


একটু পরে পাড়ের ওপর থেকে টুনির চাপা গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো, এই উইঠা আহ। মুন্সি চইলা গেছে। বলে খিল খিল করে হেসে উঠে সে। ওর হাসির শব্দে রাগে সমস্ত দেহটা জ্বালা করে উঠেছে মন্তুর। এমন সময়ে মানুষ হাসতে পারে?


তারপর থেকে আরো সাবধান হয়ে গেছে মন্তু। গনু মোল্লার কাছ থেকে তিন আনা পয়সা খরচ করে একটা জোরদার তাবিজ নিয়েছে সে। রাতে বিরাতে গাঁয়ের পুকুরে মাছ ধরে বেড়ানো, বিপদ আপদ কখন কি ঘটে কিছুতো বলা যায় না। আগে থেকে সাবধান হয়ে যাওয়া ভালো। সগন শেখের পুকুর পাড়ে এসে, বাজুর ওপরে বাঁধা তাবিজটাকে আর একবার ভাল করে দেখে নিলো মন্তু। তারপর বুনো লতার ঝোপটাকে দুহাতে সরিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নেমে গেলো সে। টুনি পেছন থেকে বললো, বারে, অত জোরে হাঁটলে আমি চলি কি কইরা? মন্তু জালটাকে গুছিয়ে নিতে নিতে বললো, আস্তে আহ, তাড়া কিসের? টুনি বলে বারে, আমার বুঝি ডর ভয় কিছুই নাই। যদি সাপে কামড়ায়? সাপের কথা বলতে না বলতেই হঠাৎ একটা অ্যাঁধি সাপ ফোঁস করে উঠে সরে যায় সামনে থেকে। অ্যাঁতকে উঠে দুহাত পিছিয়ে আসে মন্তু। ভয় কেটে গেলে থুতু করে বুকের মধ্যে একরাশ থুতু ছিটিয়ে দেয় সে। পেছনে টুনির দিকে তাকিয়ে বলে, বুকে থুক দাও তাইলে কিছু অইবো না। কোন রকম বিতর্কে না এসে নীরবে ওর কথা মেনে নেয় টুনি। কপালটা আজ মন্দ ওদের। অনেক পুকুর ঘুরেও কিছু চিংড়ি গুঁড়ো ছাড়া আর কিছু জুটল না। মাছগুলো কেমন যেন সেয়ানা হয়ে গেছে। পুকুরের ধারে কাছে থাকে না। থাকে গিয়ে একেবারে মাঝখানটিতে, এতদূর জাল উড়িয়ে নেয়া যায় না। টুনি বলে থাক, আইজ থাউক, চলো বাড়ি ফিইরা যাই। জালটাকে ধুয়ে নিয়ে মন্তু আস্তে বলে, চলো।


সকালে ঘুম থেকে উঠে ফুলো হাতটা কোলে নিয়ে বসে বসে আবুল আর হালিমার ঝগড়া দেখছিলো মকবুল।


অনেকক্ষণ কি একটা বিষয় নিয়ে তর্ক চলছে ওদের মধ্যে। দাওয়ায় বসে বসে যা মুখে আসছে ওকে বলে যাচ্ছে আবুল। হালিমাও একেবারে চুপ করে নেই। উঠানে একটা লাউয়ের মাচা বাধতে বাঁধতে দুএকটা জবাবও দিচ্ছে সে মাঝে মাঝে।


মকবুল হাতের ব্যথায় মৃদু কাতরাচ্ছিলো আর পিটপিট চোখে তাকাচ্ছিলো ওদের দিকে। হঠাৎ দাওয়া থেকে ছুটে এসে মূহুর্তে হালিমার চুলের গোছাটা চেপে ধরলো আবুল। তারপর কোন চিন্তা না করে সজোরে একটা লাখি বসিয়ে দিলো তলপেটে। উঃ মাগো, বলে পেটটা দুহাতে চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়লো হালিমা। রাগে তখন ফোপাচ্ছে আবুল, আমার ঘরের ভাত ধ্বংস কইরা রাস্তার মানুষের লগে পিরীত। জানে খতম কইরা দিমু না তোরে। কাইটা রাস্তায় ভাসায় ডিমু না। বলে আবার ওর চুলের গোছাতে হাত দিতে যাচ্ছিলো আবুল, বুড়ো মকবুল চিৎকার করে উঠলো, খবরদার আবুইল্যা, তুই যদি বউ-এর গায়ে আরেকবার হাত তুলছস তাইলে ভালো অইবো না কিন্তুক।


আমার ঘরণীর গায়ে আমি হাত তুলি কি যা ইচ্ছা তাই করি, তুমি কইবার কে, অ্যাঁ? পরক্ষণে আবুল জবাব দিলো, তুমি যখন তোমার ঘরণীরে তুলা পেড়া কর তহন কি আমরা বাধা দেই?


অমন কোণঠাসা উত্তরের পর আর কিছু বলার থাকে না মকবুলের। শুধু জুলন্ত দৃষ্টিতে এক নজর ওর দিকে তাকালো মকবুল। আবুল তখন ঘরের ভেতরে টেনে নিয়ে চলেছে হালিমাকে। ভেতরে নিয়ে ঝাঁপি বন্ধ করে মনের সুখে মারবে। ওর ইচ্ছে হয়তো বুঝতে পেরেছিলো হালিমা। তাই মাটি অ্যাঁকড়ে ধরে গোঙাতে লাগলো সে, ওগো তোমার পায়ে পড়ি। আর মাইরো না, মইরা যামু।


চুপ, চুপ, তীব্র গলায় ওকে শাসিয়ে ঝাঁপিটা বন্ধ করে দেয় আবুল। হেঁচকা টানে ওর পরনের হেঁড়া ময়লা শাড়িটা খুলে নিয়ে ঘরের এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সে। তালি দেয়া পুরান ব্লাউজটা অ্যাঁটসাঁট করে বাঁধা ছিলো টেনে সেটাও খুলে ফেলে আবুল। তারপর দু’পায়ে ওর নগ্ন দেহটাকে প্রচণ্ডভাবে মাড়াতে থাকে সে।


বেড়ার সঙ্গে পুরান একটা ছড়ি ঝোলান ছিলো। সেটা এনে হালিমার নরম তুলতুলে কপালে কয়েকটা অ্যাঁচড় টেনে দেয় আবুল। এইবার পিরীত কর। আরো পিরীত কর। রাস্তার মানুষের লগে।


আহারে। এর মাইয়াডারে মাইরা ফালাইস না। ওরে ও পাষাইন্যা, দরজা খোল মারিস আর মারিস না, জাহান্নামে যাইবি, মারিস না। বাইরে থেকে দু’হাতে ঝাঁপিটাকে ঠেলছে ফকিরের মা। অবুল একবার তাকালো সেদিকে কিন্তু ঝাঁপি খুললো না।


বউ মারায় একটা পৈচাশিক আনন্দ পায় আবুল। পান বিডির মত এও যেন একটা নেশা হয়ে গেছে ওর। মেরে মেরে এর আগে দু’দুটো বউকে প্রাণে শেষ করে দিয়েছে সে।


প্রথম বউটা ছিলো এ গাঁয়েরই মেয়ে। আয়েশা। একটু বেঁটে একটু মোটা আর রঙের দিক থেকে শ্যামলা। অপূর্ব সংযম ছিলো মেয়েটির। অপূর্ব শান্তি স্বভাব। কত মেরেছে ওকে আবুল। কোনদিন একটু শব্দও করে নি। পিঠটা বিছিয়ে দিয়ে উপুর হয়ে চুপচাপ বসে থাকতো। কিল, চাপড়, ঘুষি ইচ্ছেমত মারতো আবুল।


একটা সামান্য প্রতিবাদ নেই।


প্রতিরোধ নেই।


শুধু আড়ালে নীরবে চোখের পানি ফেলতো মেয়েটা।


তারপর একদিন ভীষণভাবে রক্তবমি শুরু হলো ওর। জমাট বাঁধা কালো কালো রক্ত। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে মারা গেলো আয়েশা।


আয়েশা টিকেছিলো বছর তিনেক। তার পরেরটা কিন্তু ওর চাইতেও কম। মাত্র দুবছর।


অবশ্য জমিলার মাত্র দুবছর টিকে থাকার পেছনে একটা কারণও আছে। ও মেয়েটা ছিলো একটা বাচাল গোছের আর একটু রুক্ষ মেজাজের। সহজে আবুলের কিল চাপড়গুলো গ্রহণ করতে রাজি হতো না সে। মারতে এলে কোমরে অ্যাঁচল বেঁধে রুখে দাঁড়াতো।


হাজার হোক মেয়েতো। পুরুষের সঙ্গে পারবে কেন? বাধা দিতে গিয়ে পরিণামে আরো বেশি মার খেতো জমিলা। ও যখন মারা গেল আর ওর মৃত দেহটা যখন গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করছিলো সবাই তখন ওর সাদা ধবধবে পিঠের ওপর সাপের মত অ্যাঁকাবাকা ফুলে ওঠা রেখাগুলো দেখে শিউরে উঠেছিলো অনেকে। ওরে পাষাইন্যারে এমন দুধের মত মাইয়াটারে শেষ করলি তুই।


আয়েশা মারা যাবার পর অবশ্য ভীষণ কেঁদেছিলো আবুল। গড়িয়ে গড়িয়ে কেঁদেছিলো সারা উঠোনে। পাড়াপড়শীদের বলেছিলে, আহা বড় ভালো বউ আছিলো আয়েশা। আমি পাষাইন্যা তার কদর বুঝলাম না। আহারে এমন বউ আর পামু না জীবনে।


আয়েশার শোকে তিনদিন এক ফোঁটা দানাপানিও মুখে পোরে নি আবুল। তিন রাত কাটিয়েছে ওর কবরের পাশে বসে আর শুয়ে। পাড়াপড়শীরা ভেবেছিলো ওর চরিত্রে বুঝি পরিবর্তন এলো এবার। এবার ভালো দেখে একটা বিয়ে শাদি করিয়ে দিলে সুখে শান্তিতে ঘর-সংসার করবে আবুল।


কিন্তু জমিলার সঙ্গেও সেই একই ব্যবহার করেছে আবুল। একই পরিণাম ঘটেছে জমিলার জীবনেও।


দ্বিতীয় বউ-এর মৃত্যুতে আবুলের গড়াগড়ি দিয়ে কান্নার কোন মূল্য দেয় নি পড়শীরা। মুখে বিরক্তি এনে বলেছে, আর অত ঢঙ করিস না আবুইল্যা। তোর ঢঙ দেইখলে গা জ্বালা করে।


আমার বউ-এর দুঃখে আমি কাঁদি, তোমাগো গো জ্বালা করে ক্যান? ওদের কথা শুনে ক্ষেপে উঠে আবুল। কপালে এক মুঠো ধুলো ছুঁইয়া সহসা একটা প্রতিজ্ঞা করে বসে সে, এই তৌবা করলাম বিয়া শাদি আর করমু না খোদা, আমারে আর বিয়ার মুখ দেখাইও না। খোদা, আমার শত্রুরা আরামে থাহুক। বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে আবুল।


পড়শীরা গালে হাত দিয়ে বলেছে, ইয়া আল্লা, এই কেমনতর কথা। বউ মারলি তুই, সেই কথা বইলা কি শতামি করলাম নাকি আমরা। সাচা কথা কইলেই তো মানুষ শত্রু হয়।


ঠিক কইছ বঁইচির মা, সাচা কথা কইলেই এমন হয়। তা, আমাগো কইবারও বা দরকার কি। ওর বউরে মারুক কি কাটুক কি নদীতে ভাসায়া দিক, আমাগো কি আছে তাতে।


সেদিন থেকে আবুলের সাতে পাঁচে আর কেউ নেই ওরা।


আজকাল হালিমাকে যখন প্রহর অন্তর একবার করে মারে আবুল তখন কেউ কিছু বলে। চুপ করে থাকে। মাঝে মাঝে বুড়ো মকবুল এক-আধটু বাধা দেবার চেষ্টা করে। আবুইল্যা তোর কি মানুষের পরান না, এমন কইরা যে মারছ বউডারে তোর মনে একটুও চোট লাগে না আবুইল্যা? বউদের অবশ্য মকবুলও মারে। তাই বলে আবুলের মত অত নির্দয় হওয়াটা মোটেই পছন্দ করে না সে। মারবি তো মার; একটুখানি সইয়া মার। অপরাধের গুরুত্ব দেইখা সেই পরিমাণ মার। এ হলো মকবুলের নিজস্ব অভিমত। অপরাধ, এমন কোন সাংঘাতিক করে নি হালিমা। পাশের বাড়ির নুরুর সঙ্গে কি একটা কথা বলতে গিয়ে হেসেছিলো জোরে। দূর থেকে সেটা দেখে গা জ্বালা করে উঠেছে আবুলের। একটা গভীর সন্দেহে ভরে উঠেছে মন।


এমন মন খোলা হাসিতো আবুলের সঙ্গে কোনদিন হাসে নি হালিমা।


বেহুঁশ হালিমাকে ভেতরে ফেলে রেখে আবুল যখন বাইরে বেরিয়ে এলো তখন সর্বাঙ্গে ঘামের স্রোত নেমেছে ওর। পরনের লুঙ্গি দিয়ে গায়ের ঘামটা মুছে নিয়ে দাওয়ার ওপর দম ধরে অনেকক্ষণ বিশ্রাম নিলো আবুল। মাটির কোটাকে নেড়েচেড়ে কি যেন দেখলো, তারপর কলকেটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে।


রশীদের বউ সালেহা উঠোনে বসে চাটাই বুনছিলো। আবুলকে এদিকে আসতে দেখে মুখ টিপে হেসে বললো, বউ-এর পিরীত বুঝি আর সইলো না মিয়ার।


আর সইব, বহুত সইছি। মুখ বিকৃত করে পুরনো কথাটাই আবার বলে গেলো আবুল, আমার ঘরের ভাত খাইয়া রাস্তার মানুষের সঙ্গে পিরীত। তুমি কও ভাবী, এইডা কি সহ্য করন যায়।


হ্যাঁ তাতো খাঁটি কথাই কইছ। সালেহা ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ঘরনী যদি মনের মত না হয় তাইলে কি তারে নিয়ে আর সুখে ঘর করন যায়? আর ভাবী দুনিয়াদারী আর ভাল লাগে না। ইচ্ছা করে দুই চোখ যেই দিকে যায় চইল্যা যাই। বলে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে আবুল। তারপর সালেহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, চুলায় আগুন আছে? একটু আগুন দাও।


আর আস্কারা কি এমনে কম পাইছে। চারদিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে চাপা স্বরে সালেহা বললো, নূরুর সঙ্গে কি আজকা কথা কইছে? ওতো রোজ রোজ কথা কয়।


কি? চোখ জোড়া আবার ধপ করে জ্বলে উঠলো আবুলের। আমারে এতদিন কও নাই ক্যান?


সালেহা বললো, কি দরকার বাপু আমাগো মিছামিছি শত্রু বইনা। কইম গেলে তো অনেক কথাই কইতে অয়। তাকি আর একদিনে শেষ করা যায়।


কি কথা কও ভাবী। খোদার কসম ঠিক কইরা কও। তামাক খাওয়াটা একবারে ভুলে গেলো আবুল।


সালেহা আস্তে করে বললো, যাই কও বাপু কারো বদনাম করার অভ্যাসই আমার নাই। কিন্তুক কই কি এই বউডা তোমার বড় ভালো হয় নাই। আমরা তো আয়শারেও দেখছি, জমিলারেও দেখছি। ওরাতো আমাগো হাতের ওপর দিয়েই গেছে। চরিত্রে ওগো তুলনা আছিলো না। কিন্তু হালিমার স্বভাব চরিত্র বাপু আমার বড় ভালো লাগে না। বলতে গিয়ে বার কয়েক কাশলো সালেহা। কাশটা গিলে নিয়ে আবার সে বললো, ইয়ে মানে, বাইরের মানুষের সঙ্গে হাসাহাসি আর ঢলাঢলি। একটুহানি লজ্জা শরমও তো থাকা চাই। কথা শেষে আবুলের রক্তলাল চোখ জোড়া দিকে দৃষ্টি পড়তে রীতিমত ভয় পেয়ে গেলো সাহেলা। একটু ধমকের সুরে বললো, দেইখো বাপু, তুমি মাইয়াডারে মারতা শুরু কইরো না। এমনিতেই বহুত মারছ। এতে যদি শিক্ষা না হয় তাইলে আর জন্মেও হইবো না। সালেহার কথাটা শেষ হবার আগেই সেখান থেলে চলে গেছে আবুল। কল্‌কেটা নিয়া যেতে ভুলে গেছে সে। একটু পরে আবার হালিমার কান্নার শব্দ শোনা গেলো ঘর থেকে। আবুল আবার মারছে তাকে।


চলবে,,,,,

হাজার বছর ধরে __ জহির রায়হান,,,,,,,,,, poyet and poyem ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 হাজার বছর ধরে

__ জহির রায়হান


এক


মস্ত বড় অজগরের মত সড়কটা একেবেঁকে চলে গেছে বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে।


মোঘলাই সড়ক।


লোকে বলে, মোঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেবের হাতে ধরা পড়বার ভয়ে শাহ সুজা যখন আরাকান পালিয়ে যাচ্ছিলো তখন যাবার পথে কয়েক হাজার মজুর খাটিয়ে তৈরি করে গিয়েছিলো এই সড়ক।


দুপাশে তার অসংখ্য বটগাছ। অসংখ্য শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে সগর্বে দাড়িয়ে রয়েছে সেই দীর্ঘকাল ধরে। ওরা এই সড়কের চিরন্তন প্রহরী।


কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম।


চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা।


মাঝে মাঝে ধান ক্ষেত সরে গেছে দূরে। দুধারে শুধু অফুরন্ত জলাভূমি। অথৈ পানি। শেওলা আর বাদাবনের ফাঁকে ফাঁকে মাথা দুলিয়ে নাচে অগুণিত শাপলার ফুল।


ভোর হতে আশেপাশের গায়ের ছেলে-বুড়োরা ছুটে আসে এখানে। এক বুক পানিতে নেমে শাপলা তোলে ওরা। হৈ-হুল্লোর আর মারামারি করে কুৎসিত গালাগাল দেয় একে অন্যকে। বাজারে দর আছে শাপলার। এক অ্যাঁটি চার পয়সা করে।


কিন্তু এমনো অনেকে এখানে শাপলা তুলতে আসে, বাজারে বিক্রি করে পয়সা রোজগার করা যাদের ইচ্ছে নয়।


মন্তু আর টুনি ওদেরই দলে।


ওরা আসে ধলপহরের আগে যখন পূর্ব আকাশে শুকতারা ওঠে। তার ঈষৎ আলোয় পথ চিনে নিয়ে চুপি চুপি আসে ওরা। রাতে শিশির ভেজা ঘাসের বিছানা মাড়িয়ে ওরা আসে ধীরে ধীরে। টুনি ডাঙ্গায় দাঁড়িয়ে থাকে।


মন্তু নেমে যায় পানিতে।


তারপর, অনেকগুলো শাপলা তুলে নিয়ে, অন্য সবাই এসে পড়ার অনেক আগে সেখান থেকে সরে পড়ে ওরা।


পরীর দীঘির পাড়ে দুজনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। শাপলার গায়ে লেগে থাকা অ্যাঁশগুলো বেছে পরিষ্কার করে।


মন্তু বলে, বুড়ো যদি জানে তোমারে আমারে মাইরা লাফাইবো।


টুনি বলে, ইস, বুড়ার নাক কাইটা দিমু না।


নাক কাইটলে বুড়ো যদি মইরা যায়?


মইরলে তো বাঁচি। বলে ফিক করে হেসে দেয় টুনি, বলে, পাখির মত উইড়া আমি বাপের বাড়ি চইলা যামু। বলে আবার হাসে সে, সে হাসি আশ্চর্য এক সুর তুলে পরীর দীঘির চার পাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়।


এ দীঘি এককালে এখানে ছিলো না।


আশেপাশের গায়ের ছেলে-বুড়োদের প্রশ্ন করলে তারা মুখে মুখে বলে দেয় এ দীঘির ইতিহাস। কেউ চোখে দেখে নি, সবাই শুনেছে। কেউ শুনেছে তার বাবার কাছ থেকে। তার বাবা জেনেছে তার দাদার কাছ থেকে। আর তার দাদা শুনেছে তারও দাদার কাছ থেকে।

আকাশ থেকে খন্তা কোদাল আর মাটি ফেলবার ঝুড়ি নিয়ে এলো ওরা।


বৈশাখী পূর্ণিমার রাত।


রুপালি জোছনার স্নিগ্ধ আলোয় ভরেছিলো এই সীমাহীন প্রান্তর। দক্ষিণের মৃদু বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছিলো পরীদের হাসির শব্দে।


কথায় গানে আর কাজে।


রাত ভোর হবার আগে দীঘি কাটা হয়ে গেল।


পাতাল থেকে কলকল শব্দে পানি ওঠে ভরে গেল দীঘি।


সেই দীঘি।


তাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গ্রাম। এক নয়, অনেক।


গভীর রাতে ধপাস ধপাস ঢেঁকির শব্দে গমগম করে গ্রামগুলো।


জোড়া বউকে ঢেঁকির উপরে তুলে দিয়ে রাত জেগে ধান ডানে বুড়ো মকবুল। পিদিমের শিখাটা ঢেঁকির তালে তালে মৃদু কাপে।


মকবুল ধমকে উঠে বউদের, কি, গায়ে শক্তি নাই? এত আস্তে ক্যান। আরো জোরে চাপ দাও না। এমনভাবে গর্জে উঠে মকবুল, যেন ক্ষেতে লাঙ্গল ঠেলতে গিয়ে রোগী। লিলিকে গরু জোড়াকে ধমকাচ্ছে সে। হুঁ, হট হট। আরো জোরে। আরো জোরে। ধমক খেয়ে ঢেঁকিতে আরো জোরে চাপ দেয় ওরা। টুনি আর আমেনা। পাশের বাড়ি থেকে আম্বিয়ার গান শোনা যায়। স্বপ্নে আইলো রাজার কুমার, স্বপ্নে গেলো চইলারে। দুধের মত সুন্দর কুমার কিছু না গেল বইলারে।


ঢেঁকিতে চড়লেই গান গাওয়ার সখ চাপে আম্বিয়ার। সতেরো আঠারো বছর বয়স হয়েছে, কিন্তু এখনো বিয়ে হয় নি ওর। অ্যাঁটসাঁট দেহের খাঁচে খাঁচে দুরন্ত যৌবন, আট-হাতি শাড়ির বাঁধন ভেঙ্গে ফেটে পড়তে চায়। চেহারায় মাধুর্য আছে। চোখ জোড়া বড় বেশি তীক্ষ্ণ। ঢেঁকিতে চড়লে, টেকিকে আর সুখ দেয় না ও। এত দ্রুত তালে ধান ভানতে থাকে, মনে হয় টেকিটাই বুঝি ফেটে চৌচির হয়ে যাবে।


ধান ভানা শেষ হলে গায়ে দর দর ঘাম নামে ওর। একটা চাটাইয়ের ওপর লম্বা হয়ে শুয়ে জোরে শ্বাস নেয় আম্বিয়া।।


ঢেঁকির পাশে বসে এই মুহূর্তে বারবার আম্বিয়ার কথা মনে পড়ছিলো বুড়ো মকবুলের। দাঁত মুখ খিচে বউদের আবার ধমক মারলো, ও শুনছনি, আম্বিয়া কেমন ধপাস ধপাস কইরা ধান বাইনতাছে। আর তোরা, কিছু না কিছু না, বলে বার কয়েক মাটিতে থুতু ফেললো মকবুল। বাঁ হাতে কপালের ঘামগুলো মুছে নিল সে।


দাওয়ার ওপাশে পিদিম হাতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব দেখছিলো ফকিরের মা। সেখান থেকে বললো, আহা, মকবুল! বউগুলোরে বুঝি এই রাতের বেলাও আর শান্তি দিবি না তুই। সারাদিন তো খাটাইছস, এহন দুপুর রাইতেও, বলে টুনি আর আমেনার জন্য আফসােস করতে করতে নিজের ঘরে চলে গেল ও।


এ বাড়িতে মোট আট ঘর লোকের বাস।


সামনে নুয়ে পড়া ছোট ছোট ঘরগুলো একটার সঙ্গে একটা লাগানো। বাঁশের তৈরি। বেড়ার ভাঙ্গা অংশগুলো তালপাতা দিয়ে মোড়ান । চালার স্থানে স্থানে খরকুটো উঠে ফুটো হয়ে গেছে। দিনের সূর্য আর রাতের চাঁদ এসে একবার করে সে ফুটো দিয়ে উঁকি মেরে যায় ঘরের ভেতরে। আম, কাঁঠাল, পাটি পাতা আর বেতাক বনে ঘেরা বাড়ির চারপাশ। মাঝে মাঝে ছোট বড় অনেকগুলো সুপুরি আর নারকেল গাছ লাগানো হয়েছে অনেক আগে । দু’একটা খেজুর গাছও ছড়িয়ে রয়েছে এখানে সেখানে। ছোট পুকুর। পুকুরে শিং কই আর মাগুর মাছের কমতি নেই। দিনরাত শব্দ করে ঘাই দেয় ওরা। পানিটাকে সারাক্ষণ ঘোলাটে করে রাখে। সামনে মাঝারি উঠোন। শীত কিংবা গ্রীষ্মে শুকিয়ে একরাশ ধুলো জমে। বর্ষায় এক হাঁটু কাদা। কাদার ওপর ছোট ছোট ব্যাঙ এসে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়। হাঁস কি মোরগ দেখলেই তাড়া করে ওদের। ধরে ধরে মারে। পুবের সারে উত্তরের ঘরটা মকবুলের। বাড়ির অন্য সবার চেয়ে ওর অবস্থাটা কিছু ভালো।


মকবুল তিন বিয়ে করেছেন। তিন বউই বেঁচে আছে ওর।


বড় বউ আমেনা। কালো মোটা আর বেঁটে। বয়স প্রায় ত্রিশের কোঠায় পৌঁছেছে এবার। খুব ঘন ঘন কথা বলে। কথা বলার সময় পোকায় খাওয়া দাঁতের ফাঁক দিয়ে থুতু ছিটিয়ে সামনের লোকগুলোকে ভিজিয়ে দেয়। পারিবারিক কলহ বাধলে তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবার হুমকি দেখায়।


মেজ ফাতেমা। দেখতে রোগা, হ্যাংলা আর লম্বা। বছরে তিন মাস পেটের অসুখে ভোগে। ছ’মাস বাপের বাড়িতে কাটায়। বয়সের হিসেবটা সে নিজেও জানে না। কেউ পনেরো বললেও সায় দেয় না। পঁচিশ বললেও মেনে নেয়।


সবার ছোট টুনি। গায়ের রং কালো। ছিপছিপে দেহ। আয়ত চোখ। বয়স তার তেরচৌদ্দর মাঝামাঝি। সংসার কাকে বলে সে বোঝে না। সমবয়সী কারো সঙ্গে দেখা হলে সব কিছু ভুলে গিয়ে মনের সুখে গল্প জুড়ে দেয়। আর হাসে। হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি দেয় টুনি।


বুড়ো মকবুলের পরিবারে আরো একজন আছে।


নাম তার হীরন। ও তার বড় মেয়ে। বড় বউ-এর সন্তান। এবার দশ ছেড়ে এগারোয় পড়লো সে। এখন থেকে মকবুল ওর বিয়ের জন্যে উঠে-পড়ে লেগেছে। দুএক জায়গায় এর মধ্যে সম্বন্ধও পাঠিয়েছে সে। বড়, মেজ আর ছোট এই তিন বউ নিয়ে মকবুলের সংসার। তিন বউকে বসিয়ে খাওয়ানোর মত জমিজমা নেই ওর। আসলে বউদের আয় দিয়ে চলে ও। বড় দুই বউ দিব্যি আয় করে। বাজার থেকে পাতা কিনে এনে দিয়েই খালাস মকবুল। দুই বউ মিলে একদিনে তিন চারটে চাটাই বুনে শেষ করে। মাঝে মাঝে টুনিও বসে পড়ে ওদের সঙ্গে কাজ করে। চাটাইগুলো বাজারে বিক্রি করে লাভের অংশ দিয়ে পেঁয়াজ, লঙ্কা, পান-সুপুরি কেনে মকবুল।


 


ফসলের দিনে সবাই যখন গরু দিয়ে ধান মাড়ায় তখন তিন বউকে লাগিয়ে ধান মাড়ানোর কাজটা সেরে ফেলে ও। বর্ষা পেরিয়ে গেলে বাড়ির উপরে যে ছোট জমিটা রয়েছে তাতে তিন বউকে কোদাল হাতে নামিয়ে দেয় মকবুল। নিজেও সঙ্গে থাকে। মাটি কুপিয়ে কুমড়ো আর সিমের গাছ লাগায়। দুবেলা জল ঢেলে গাছগুলোকে তাজা রাখে। সুখ আছে আবার সুখ নেইও মকবুলের জীবনে। তিন বউ যখন ঝগড়া বাঁধিয়ে চুল ছেঁড়ার লড়াই শুরু করে তখন বড় বিস্বাদ লাগে ওর। হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে তিনজনকে সমানে মারে সে। কাউকে ছাড়াছাড়ি নেই।


মকবুলের পাশের ঘরটা ফকিরের মার.


তার পাশেরটা আবুলের।


তার পাশে থাকে রশিদ।


পাশাপাশি তিনটে ঘর।


সবার দক্ষিণে যে ঘরটা সবার চেয়ে ছোট, ওটায় থাকে মন্তু। একা মানুষ। বাবা মা ভাইরোন কেউ নেই। বাবাকে হারিয়েছে ও জন্মের মাসখানেক আগে। মাকে, দশ বছর বয়সে। লোকে বলে, মণু নাকি বড় একগুয়ে আর বদমেজাজী। স্বভাবটা ঠিক জানোয়ারের মত।


টুনি বলে, অমন মাটির মানুষ নাকি এ জন্মে আর দেখেনি সে।


আহা অমনটি আর হয় না।


ওপাশে আর কোন ঘর নেই।


পশ্চিমের সারে, দক্ষিণের ঘরটা মনুর।


তার পাশে থাকে সুরত আলী।


খুব জোর নব্বই বছর হবে।


সেই তেরশ সনের বন্যা।


অমন বন্যা দুচার জন্যে কেউ দেখেনি।


মাঠ ভাসলো, ঘাট ভাসলো, ভাসলো বাড়ির উঠান।


ঘর আসলো বাড়ি ভাসলো, ভালো কাজীর কুশান।


কিছু বাদ নেই। ঘরবাড়ি গোয়াল গরু সব। এমন কি মানুষও ভাসলো। জ্যান্ত মানুষ। মরা মানুষ।


তাল গাছের ডগায় ঝােলান বাবুই পাখির বাসায়ও কিছুকালের জন্য পরম নিশ্চিন্তে ঘর বেঁধেছিলো পুঁটি মাছের ঝাঁক।


রহমতগঞ্জ কুলাউড়া নিজামপুর ভেসে সব একাকার হলো।


বুড়ো কাসেম শিকদার ছিলো কুলাউড়ার বাসিন্দা।


বুড়ো আর বুড়ি। ছেলেপিলে ছিলো না ওদের। মাটির নিচে তে রাখা টাকা ভরা কলসিটা বুকে জড়িয়ে ধরে বানের জলে ভাসান দিলো বুড়ো আর বুড়ি।


কলা গাছের ভেলায় চারদিন চার রাত। খাওয়া নেই, দাওয়া নেই। একেবারে উপোস।


তেষ্টায় বুকের ছাতি ফেটে যাবার উপক্রম। ভেলা ভাসছে আর ভাসছে।


অবশেষে এসে ঠেকল এই দীঘির পাড়ে।


লাল পরীর নীল পরী আর সবুজ পরীর দীঘি।


ছোটখাটো একটা পাহাড়ের মত উঁচু যার পাড়।


গ্রামটা পছন্দ হয়ে গেল কাশেম শিকদারের।


কলসী থেকে টাকা বের করে দুচার বিযে জমি কিনে ফেললো সে। গোড়াপত্তন হলো এ বাড়ির।


বাড়ির চারপাশে আম কঁঠাল সুপুরি আর নারকেলের গাছ লাগালে কাশেম শিকদার। পুকুর কাটলো। ভিটে বাঁধলো। পছন্দ মত ঘর তুললো বড় করে। কিন্তু মনে কোন শান্তি পেলো না সে। ছেলেগুলে নেই। মারা গেলে কে দেখবে এত বড় বাড়ি।


মাঝে মাঝে চিন্তায় এত বিভোর হয়ে যেত যে খাওয়া-দাওয়ার কথা মনে থাকতো না। তার। বুড়ি ছমিরণ বিবি লক্ষ্য করতেন সব। বুঝতেন কোন স্বামীর মনে সুখ নেই, চোখে ঘুম নেই, আহারে রুচি নেই। মনে মনে তিনিও দুঃখ পেতেন।


তারপর, একদিন জলভরা চোখে স্বামীর পাশে এসে দাঁড়ালেন ছমিরণ বিবি।


আস্তে করে বললেন, তুমি আর এক নিকা কর। বলতে গিয়ে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। তাঁর। দুগণ্ড বেয়ে অবিরাম পানি গড়িয়ে পড়ছিলো।


তবু স্বামীকে নিজ হাতে সাজিয়ে দিলেন ছমিরণ বিবি। হাতে মেহেদি দিলেন। মাথায় পাগড়ি পরালেন। ঘরটা লেপে মুছে নিয়ে নিজ হাতে বিছানা পাতলেন স্বামী আর তার নতুন বিয়ে করা বউ-এর জন্য। আদর করে হাত ধরে এনে শোয়ালেন তাদের।


নতুন বউ-এর কাঁচা হলুদ ঝলসানো দেহের দিকে তাকাতে সাহস পেলেন না ছমিরণ বিবি। ছটে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন। ছুরির তীক্ষ্ণ ফলা দিয়ে কে যেন তখন কলজেটা কুটিকুটি করে কাটছিল তাঁর। নিজেকে আর বেঁধে রাখতে পারলেন না তিনি। পুকুর পাড়ে ধুতরা ফুলের সমারোহ। গুনে শুনে চারটে ফুল হাতে নিলেন। তারপর ধীরে ধীরে সেগুলো মুখে পুরে দিয়ে নীরবে ঘুমিয়ে পড়লেন। দীঘির পাড়ে উঁচু ঢিপির মত তার কবরটা আজো চোখে পড়ে সবার আগে।


চলবে---------

সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

সন্তান বড় হলে বিছানা আলাদা করা অবশ্য কর্তব্য! কেন করবেন,,, ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 সন্তান বড় হলে বিছানা আলাদা করা অবশ্য কর্তব্য! কেন করবেন?


রিবা (ছদ্ম নাম)। বয়স সাত। ওয়ানে পড়ে। ধবধবে ফর্সা। মাথা ভর্তি কোকড়ানো চুল। টলটলে চোখ। মনে হয় একটু ছুঁয়ে দিলেই ব্যস। চোখের মায়া আবীর হয়ে হাতে লেগে যাবে। প্রজাপতির রঙের মতো।


মায়ের সাথে ডাক্তারের চেম্বারে এসেছে। প্রসাবে জ্বালা পোড়া। তল পেটে ব্যথা। মায়ের ভাষ্য, ম্যাডাম, পিসাব করনের সময় খালি কান্দে আর লাফায়। পেট চেপে খিচ্চা বইসা থাকে।


পরীক্ষা করে দেখতে চাইলে, প্যান্ট খুলে রিবার মা যা দেখালো তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, বললেই ভালো। সরাসরি জিজ্ঞেস করলে মা বলবে, কী যে কন, ছোট মানুষ। মনেমনে দু-একটা গালি ও যে দিবে না, বলা যায় না।


ডাক্তারদের এ এক জীবন! কত কী যে দেখতে হয়! ঘুরিয়ে প্যচিয়ে জিজ্ঞেস করি, বাড়িতে কে কে আছে?


ওর বাপ আর আমি।


আর কেউ না?


না স্যার । তবে পাশেই ভাসুরের বাসা।


ও কার সাথে খেলাধুলা করে?


আমার ভাশুরের পোলার সাথে। বয়স এগারো বারো। সিক্সে পড়ে। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি ঝাঁপাঝাপি। ভিডিও গেমস, ইউটিউব নাকি কি কয় এসব নিয়া থাকে। সারা বাড়িতে আর বাচ্চাকাচ্চা নাই তো। অরা অরাই খেলে। আমিও তেমন খেয়াল করি না। আহারে বাচ্চারা!


বাড়িতেই তো থাকে সারাদিন। হয় দাদির ঘর, নয় চাচির ঘর। আসলে মাইয়া আমার এই একটাই। মিছা কইয়া লাভ নাই। চাচা চাচিও আদর করে। খুব। মিতুল (ছদ্ম নাম) তো বইন বলতে অজ্ঞান।


কখনো জিজ্ঞেস করেছেন, কি খেলা খেলে?


না ম্যডাম। কী খেলব আর, চোর পলান্তি। পুতুল খেলা। এই সব আরকি। জিগানোর কী আছে?


আছে, এখন জিজ্ঞেস করেন তো।


রিবা, মিতুল ভাইয়ার সাথে কি খেলাধুলা করো বলো তো মা?


বউ জামাই খেলি।


বউ জামাই খেলা কী করে খেলো?


মেয়ে যা বর্ণনা দিলো, শুনে মা মুর্ছা যান আরকি! ছোট বাচ্চার আর দোষ কি? বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়। এটা সবাই জানে। বড়রা অবিবেচকের মতো কাজ করবে আর বাচ্চাকাচ্চা দেখে শুনে চুপ করে বসে থাকবে, এটা ভাবার কারণ নেই। আসলেই নেই।


ওহ, ভালো কথা। রিবা মিতুল কাকে অনুসরণ করল? বাবা মাকে? টিভি সিনেমাকে? নাকি ইউটিউবকে? কাউকে না কাউকে তো অবশ্যই।


রিবা, এ ধরনের খেলা তো ভালো না মা। এটা পঁচা কাজ। কথা শেষ করতে দেয় না পাকনি বুড়িটা। টাসটাস করে মুখের ওপর বলে ওঠে, বাবা মা খেলে যে! তাহলে বাবা-মা কি পঁচা?


কী উত্তর দেবে রিবার মা? উত্তর দেয়ার কি মুখ থাকে? মহিলা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। যেনো পায়ের তলায় কোন মাটি নেই। বেচারা!


রিবার মাকে প্রশ্ন করি, আপনারা কি স্বামী-স্ত্রী রিবাকে নিয়ে এক বিছানায় ঘুমান?


হ ম্যাডাম। ছোট বাচ্চা। ওর বাপে কয়, কী বুঝব? ও ঘুমালেই তো কাদা। লোকটার খাই বেশি। বাচ্চা ঘুমালো কি ঘুমালো না। তর সয় না। আমি আগেই কইসিলাম। হাহাকার থই থই কান্না হয়ে ঝরে পড়ে। আহারে!


দেখুন, আমরা বাচ্চাদের যতটা নির্বোধ মনে করি, আসলে ততটা নির্বোধ ওরা না। বরং একটু বেশিই বুদ্ধি রাখে ওরা। শুধু আমরা বড়রাই এ কথাটা মানতে চাই না। আমাদের দিয়ে ওদের হিসেব করি। কিন্তু ওরা হিসেবে বাবা মা'দের চেয়ে পাকা। যে কাজটা বাবা মা করে, সে কাজটা খারাপ কিভাবে হয়? কাজেই বাবা মা, বাবা মা খেলা তারা খেলতেই পারে। তাদের তো দোষ দেয়া যায় না। একটু ভেবে বলুন তো, যায় কি?


আসলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর সন্তানদের বিছানা আলাদা হওয়াই বাঞ্চনীয়। সবার পক্ষে হয়তো, সন্তানদের জন্য আলাদা আলাদা রুম দেয়া সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে অন্তত বিছানাটা আলাদা করা যায়। বাবা মায়ের বিছানাটা কাপড় দিয়ে পার্টিশন দেয়া যায়। মশারির মতো। আর নিতান্তই যদি সম্ভব না হয়, শিশু সম্বলিত সংসারে দম্পতিদের অবশ্যই সর্বোত্তম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কী সেটা আমি জানিনা। আর সবার ঘরে নিশ্চয় একরকম ফর্মূলা চলবে না। নিজের ঘর অনুযায়ী নিজেদের ফর্মূলা তৈরী করুন প্রিয় অভিভাবক।


আমরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ঘুরতে যাই। মজার মজার খাবার খাই। দামী দামী গেজেট দেই। নতুন নতুন ট্রেন্ডি জামা কাপড় পরাই। কিন্তু সবচেয়ে দামী যে লেসন সেটাই দেই না। হেলথ এডুকেশন, সেক্স এডুকেশন। কত্ত জরুরি যে এসব জীবনমুখী শিক্ষা। কী আজব আমরা! কবে বুঝব এর গুরুত্ব? আর কত ভুলবার্তা দেহ মনে নিয়ে বড় হবে আমাদের শিশুরা?


বাচ্চাদের কি কি করা উচিৎ আর কি কি না সেটা বলুন। ছোটদের কাজ, বড়দের কাজ কি কি জানান। ধীরে ধীরে নিজের শরীর সম্বন্ধে শিক্ষা দিন। নারী পুরুষের যৌন জীবন সম্বন্ধে শিক্ষা দিন। ধীরে ধীরে, সহজ করে। কাজের লোক কিংবা ক্যানভাসারের কাছে ভুল জানার চেয়ে, বাবা মার কাছে জানা ভালো নয় কি?


প্রিয় অভিভাবকগন, সন্তানের কথা বিশ্বাস করুন। সন্তানের বন্ধু হোন। ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করুন এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করুন। মনে রাখা ভালো, লালনপালন করাই কিন্তু শেষ কথা না। সন্তানকে সুরক্ষিত রাখাও বাবা মার পবিত্র দায়িত্ব। আসুন ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করি। ওদের জীবনটা আরেকটু সহজ করি।

ধন্যবাদ সবাইকে🥀🤍


 ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং নিয়মিত গল্প পেতে আইডিতে  ফলো করে  সাথে থাকার অনুরোধ রইলো)

শেষ গল্পের- ডায়েরি

কপি

পেস্ট 

মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩

প্রতিটা মেয়ের গল্পটা পড়া উচিত জেসমিন আক্তার নেহা ফেইসবুক থেকে কপি করা

 কেয়া আর আমি অন্তরঙ্গ অবস্থায় খাটের ওপর আছি এমন সময় দোলা ভাবী আমাদের রুমে ঢুকেই আমাদের এই অবস্থায় দেখে থমকে গেল। 


আমি জলদি করে কেয়াকে আমার ওপর থেকে ঠেলে সরিয়ে গায়ে কম্বল জড়িয়ে নিলাম, কেয়াও দোলা ভাবীকে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। 


আমি দোলা ভাবীকে বললাম– ভাবী কিছু বলবেন? 


দোলা ভাবী থতমত খেয়ে বললো– না মানে ইয়ে আরকি... এই সময়ে এসে পড়াটা ঠিক হয়নি।


বললাম সমস্যা নেই ভাবী, আর দরজা লক করা হয়নি সেটাও খেয়াল করিনি।


দোলা ভাবী লজ্জায় লাল হয়ে আছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো– তোমরাও পারো, এখন কি এসবের সময়?


আমি মুচকি হেসে বললাম– এসবের আবার নির্দিষ্ট সময় হয় নাকি ভাবী, যখন ইচ্ছে দিতে নিতে হয়। ভালোবাসা বিনিময়ের কোনো সময় হয়না।


দোলা ভাবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো– এরকম যদি সবাই বুঝতো।


দোলা ভাবী দেখতে সুশ্রী, লম্বা সুন্দরী, সংসারে কোনকিছুর অভাব না থাকলেও সবসময় কেমন মনমরা হয়ে থাকে। বিশেষ প্রয়োজনে কেয়ার কাছে আসে মাঝেমধ্যে তাছাড়া তেমন ঘরের বাহির হয়না।


আচ্ছা তোমরা তোমাদের সময় উপভোগ করো আমি যাচ্ছি এবার, বলে দোলা ভাবী চলে গেল। 


কেয়া উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আসতেই কেয়ার হাত ধরে টেনে বিছানায় ফেলে কেয়ার ঠোঁটে আলতো করে কামড় দিয়ে বললাম– সারাক্ষণ শুধু আদর আর আদর, অন্য কিছুর হুস থাকেনা তাইনা?


এবার কেয়া উল্টে আমার ওপর উঠে বললো– এরকম একটা সুইট জামাইর আদর পেলে হুশ তো উড়ে যাবেই।


কেয়ার মুখ চেপে ধরে বুকের মাঝখানে একটা চুমু খেয়ে বললাম– চুপ একদম, আদর করতে দাও।


তারপর কম্বলের ভেতর ডুব মেরে কেয়ার সারা শরীরে আদর দিতে লাগলাম আর কেয়াও উপভোগ করতে লাগলো খুব।


আমরা পালিয়ে এসে বিয়ে করেছি, বাসা নিয়ে আছি দুজন, আপাতত আমার কাজবাজ নেই তাই সারাক্ষণ কেয়াকে সময় দিতে পারছি অফুরন্ত। পরিবার ছেড়ে এসে কেয়ার মনে যে কষ্ট সেটা ভুলিয়ে রাখার জন্যই কেয়াকে খুব আদরে রাখি সারাক্ষণ।


আমাদের ইচ্ছে একটা বেবি নেয়ার, বেবি হলে হয়তো সবাই মেনে নিবে আমাদের। 


প্রতিবারই শারীরিক মেলামেশার পরে আমরা আনন্দিত হই যে এবার বুঝি কেয়া বেবি কনসিভ করবে, কিন্তু পরে টেস্টের রিপোর্ট আসে নেগেটিভ।


আমি কেয়াকে বলি সমস্যা নেই বউ, রুমে তো আমরা দুজনেই, যতক্ষণ বেবি না হচ্ছে মিশন চলবে আনলিমিটেড।


কেয়া মিষ্টি হেসে বলে– দুষ্ট বর একটা। 


আমি জিভ দিয়ে কেয়ার গাল চেটে বলি– মিষ্টি বউ একটা। 


কেয়া মুচকি মুচকি হাসে।


আমাদের দুজনের রাত দিন আনন্দে কাটে ভীষণ, আমরা একে অপরকে পেয়ে সুখী। 


আমি কাজের খোঁজে বাইরে গেলে কেয়া দোলা ভাবীর কাছে যায় বা দোলা ভাবী কেয়ার কাছে আসে। যেহেতু দোলা ভাবী আমাদের সামনের ফ্ল্যাটে থাকে। আমার বয়স তেইশ আর কেয়ার আঠারো, দোলা ভাবীর ছাব্বিশ সাতাশ হবে। তিনি আমাদের সিনিয়র হলেও কেয়ার সাথে নাকি বন্ধুর মতো কথাবার্তা বলে, হাসে খেলে। আমার সাথেও মাঝেমধ্যে একটু আধটু মশকারি করে।


আজকে আমাদের অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ভাবী চলে যাবার পরে আমরা আবারও শারীরিক মেলামেশা শেষে ফ্রেশ হই, আমি চলে যাই অফিসে আর কেয়া বাসায় একা।


ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়ে আবারও ভাবীর সাথে দেখা কেয়ার, কেয়ার হাতে ভেজা কাপড় দেখে ভাবি মশকারি করে বললো– কি গো, সারাক্ষণ লেগেই থাকা হয় বুঝি দুজনের। 


কেয়া মুচকি হেসে বললো– লেগে না থেকে উপায় কি ভাবি, জামাই যদি এত্তো রোমান্টিক হয়।


ভাবী এগিয়ে এসে বললো– তাই নাকি?


কেয়া বললো– একদম তাই ভাবী, ও যেমন রোমান্টিক, তেমন আমার পাগল। আমাকে ভর্তা বানিয়ে খেয়ে ফেলতে পারলে মনে হয় তাই করতো, হা হা হা। 


দোলা ভাবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো– প্রথম প্রথম ওরকম সবাই থাকে বুঝলি? ধীরে ধীরে ভালোবাসা পানসে হয়ে যায়। 


কেয়া বললো– যে ওরকম হবার সে হবেই, তাই বলে সবাই তো এক নয় ভাবী।


ভাবী বললো– তোকে অনেক আদর করে তাইনা। 


কেয়া বললো– হ্যা খুব, রাতে আমাকে জড়িয়ে না ধরলে ওর নাকি ঘুমই আসেনা। কত যে পাগলামি। জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ঘুমাবে, পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে গলায় পিঠে আদর করবে। ঘুমের মধ্যেই কিনা শুরু করে দেয় হা হা হা, ওর আদরের চাপে আমি ভর্তা হয়ে যাই। 


কেয়ার কথা শুনে দোলা ভাবী হো হো করে হেসে ওঠে।


কেয়া আবার বললো– আমার পিরিয়ড চলাকালে খুব সায়েস্তা হয়, তখন তো আর কাছে আসতে পারেনা হা হা, তাছাড়া একটা দিনও কাছে না এসে মেলামেশা না করে থাকতে পারেনা। কি একটা জ্বালা। 


ভাবী বললো– আজীবন তোদের জীবন হাসি আনন্দে এমন ভরপুর থাকুক।


আমি বাসায় ফেরার পরে কেয়া আমার কাছে সবকিছু বললো। আমি বললাম এতকিছু শেয়ার করতে নেই পাগলী।


এরপর থেকে ভাবী প্রায়ই বাসায় আসে, আমাদের গল্প হয় আড্ডা হয়। আর ভাবীর চাহনিতে কেমন একটা রহস্য প্রকাশ পায়।


বেশ কিছুদিন পরে কেয়ার পিরিয়ড শুরু হয়। ভাবীকে দেখলাম কেয়াকে গরম পানি করে দিতে, কেয়ার যত্ন নিতে। দেখে ভালোই লাগলো। 


বিকেলে ভাবী এসে বললো– আজকে আমাদের বাসায় তোমাদের দাওয়াত কিন্তু, আমি নিজের হাতে বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়াবো আজ তোমাদের। 


সন্ধ্যায় আমি কেয়া গিয়ে ভাবীর বাসায় উপস্থিত। আড্ডা হলো, আড্ডা শেষে খাওয়াদাওয়া। ভাবীর স্বামী মানে ভাই আজ সম্ভবত বাসায় নেই। 


খাওয়াদাওয়া শেষে আমরা বাসায় ফিরলাম। আজ খুব জলদি কেন যেন ঘুম পাচ্ছে। কেয়া শোবার কিছুক্ষণ পরেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমিও কখন ঘুমিয়ে পড়লাম টের পাইনি। 


রাতে কারো অস্বাভাবিক স্পর্শে ঘুম ভাঙতেই চোখ মেলে লাফিয়ে উঠলাম...


চলবে...


গল্পঃ ভুল। প্রথম পর্ব

প্রতিটা মেয়ের গল্পটা পড়া উচিত জেসমিন আক্তার নেহা ফেইসবুক থেকে কপি করা 

সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৩

দাব্বাতুল_আরদ: কেয়ামতের অন্যতম বড় আলামত,,,,, ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 ♦#দাব্বাতুল_আরদ: কেয়ামতের অন্যতম বড় আলামত


এই আখেরী জামানায় কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে জমিন থেকে দাব্বাতুল আরদ নামক এক অদ্ভুত জন্তু বের হবে। জন্তুটি মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এটি হবে কেয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম সর্বশেষ ভয়াবহ আলামত। 

পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়ার পর তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে এটি বের হবে। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায় যে, পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার কিছুক্ষণ পরই জমিন থেকে এই অদ্ভুত জানোয়ারটি বের হবে। তাওবার দরজা যে একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে- এ কথাটিকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করার জন্য সে মুমিনদেরকে কাফির থেকে নির্দিষ্ট চিন্হের মাধ্যমে আলাদা করে ফেলবে। মু‘মিনের কপালে লিখে দেবে ‘মুমিন’ এবং কাফিরের কপালে লিখে দেবে ‘কাফির’। এ ব্যাপারে কোরআন থেকে যা জানা যায়-


পবিত্র কোরআনুল কারিমে সূরা আন নামলের ৮২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,


وَإِذَا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنَا لَهُمْ دَابَّةً مِّنَ الْأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ


‘যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না।’ (সূরা: নামল, আয়াত: ৮২)।


প্রাণীটির কাজ কি হবে এবং কি বিষয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে-এ ব্যাপারে আল্লামা আলূসী বলেন, আয়াতে উল্লেখিত কোরআনের বাণীটিই হবে তার কথা।


অর্থাৎ- أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ 


এই বাক্যটি সে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে শুনাবে। মর্ম এই যে, আজকের পূর্বে অনেক মানুষই মহান আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করেনি। বিশেষ করে কেয়ামতের আলামত ও তা সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে এমনকি আমার আগমনের বিষয়েও অনেক মানুষ বিশ্বাসকরত না। এখন সে সময় এস গেছে এবং আমিও বের হয়ে এসেছি।


♦#দাব্বাতুল_আরদের_পরিচয়ঃ


আরবিতে ‘দাব্বাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে জন্তু বা প্রাণী, যা জমিনে পা ফেলে চলাচল করে। আর ‘আরদ’ অর্থ হচ্ছে ভূমি, ভূপৃষ্ঠ বা ভূগর্ভ। কেয়ামতের আগে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে অদ্ভুত ধরনের একটি প্রাণী বের হবে এবং পুরো পৃথিবীতে বিচরণ করবে। এটিকে কেয়ামতের বড় আলামতের একটি গণ্য করা হয়। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওই সময় আসার আগ পর্যন্ত কেয়ামত কায়েম হবে না, যতদিন না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের ঘটনা সংঘটিত হবে। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের ঘটনা ঘটার পর মানুষ দাব্বাতুল আরদ দেখতে পাবে।’ (বুখারি : ৪৬৩৬; মুসলিম : ১৫৭)। 


‘দাব্বাতুল আরদ’ প্রাণীটির নাম নয় বরং অদ্ভুত প্রাণীটির প্রসঙ্গে কোরআনে ব্যবহৃত শব্দ, যার অর্থ ‘ভূগর্ভস্থ প্রাণী’। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি প্রাণী বের করব। সে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে।’ (সুরা নামল : ৮২)


ইবনু কাসীর বলেন, আখেরী জামানায় মানুষ যখন নানা পাপাচারে লিপ্ত হবে, মহান আল্লাহর আদেশ পালন বর্জন করবে এবং দ্বীনকে পরিবর্তন করবে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের সামনে এই জন্তুটি বের করবেন।’ (তাফসীরে ইবনু কাসীর-৩/৩৫১)।


ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জন্তুটি মানুষের মতই কথা বলবে।’(পূর্বোক্ত উৎস)।


♦#দাব্বাতুল_আরদের_আকৃতিঃ


‘দাব্বাতুল আরদ’ বা অদ্ভুত প্রাণীটির আকৃতি প্রসঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন হাদিসে আলোচনা এসেছে। সেসব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এর ভেতর অনেক প্রাণীর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকবে। অদ্ভুত এই প্রাণী কিছুটা উটের মতো হবে। পা হবে চারটি। মাথা হবে ষাঁড়ের মতো। চোখ হবে শূকরের মতো। কান হবে হাতির মতো। নাক হবে উটপাখির মতো। বুক হবে সিংহের মতো। রঙ হবে নেকড়ের মতো। কপাল হবে ভেড়ার মতো। ঘন পশমবিশিষ্ট হবে। মানুষের মতো চেহারা হবে। (ফাতহুল কাদির: ৪/১৫২; আদ-দুররুল মানসুর : ৬/৩৭৮)। সে পুরো পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করবে এবং সব মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তাদের ওপর নির্দেশ পতিত হবে (পূর্ব দিক থেকে সূর্য না উঠে পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া) তখন আমি তাদের জন্য দাব্বাতুল আরদ বের করব। সে সবার সঙ্গে কথা বলবে। সে সবার কাছে গিয়ে বলবে, 'লোকেরা আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না।’ (সুরা নামল : ৮২)।

আরও বিভিন্ন হাদিসে এসেছে, সে মানুষকে তাকওয়া, তাওয়াক্কুল, আল্লাহর ভয় প্রভৃতি বিভিন্ন সদুপদেশ দিতে থাকবে। 


♦#দাব্বাতুল_আরদের_কাজঃ


সূর্য পশ্চিমে উদিত হওয়ার পর ঈমান আনয়ন ও তাওবা কবুলের দরজা যে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে, এ বিষয়টি চূড়ান্ত করতে সে মুমিনদেরকে কাফের থেকে নির্দিষ্ট চিহ্নের মাধ্যমে আলাদা করে ফেলবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দাব্বাতুল আরদ‌ বের হবে। তার সঙ্গে থাকবে মুসা (আ.)-এর লাঠি এবং সুলায়মান (আ.)-এর আংটি। ঈমানদারদের কপালে মুসা (আ.)-এর লাঠি দিয়ে নুরানি দাগ টেনে দিবে। ফলে তাদের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আর কাফেরদের নাকে সুলায়মান (আ.)-এর আংটি দিয়ে দাগ লাগাবে। ফলে তাদের চেহারা অনুজ্জ্বল হয়ে পড়বে। তখন অবস্থা এমন হবে যে, কোনো খাবারের টেবিল ও দস্তরখানায় কয়েকজন মানুষ বসলে প্রত্যেকেই একে অপরের ঈমান ও কুফুরির বিষয়টি স্পষ্ট দেখতে পাবে।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৭৯২৪)। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘দাব্বাতুল আরদ বের হবে এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দিবে। তারপরও মানুষ পৃথিবীতে জীবনযাপন করবে। প্রাণীটি সকল মানুষের নাকেই দাগ লাগিয়ে দিবে। এমনকি উট ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছ? সে বলবে, 'আমি এটি নাকে দাগ লাগানো অমুক ব্যক্তির কাছ থেকে ক্রয় করেছি।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৩২২)।

দাব্বাতুল আরদের কাজ শেষ হওয়ার পর অদৃশ্য হয়ে যাবে। 


♦#দাব্বাতুল_আরদ_বের_হওয়ার_সময়কালঃ


কেয়ামতের বড় বড় কয়েকটি আলামত ঘটে যাওয়ার পর এক বছর জিলহজ মাসের কোরবানির ঈদের দিবাগত রাত এত দীর্ঘ হতে থাকবে যে, সফররত ব্যক্তিরা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়বে, শিশু-বাচ্চারা ঘুমাতে ঘুমাতে ক্লান্ত হয়ে জেগে উঠবে, গবাদি পশুরা চরণভূমিতে বের হতে ছটফট শুরু করবে, লোকেরা ভয়ে ও আতঙ্কে চিৎকার করে কান্নাকাটি ও দোয়া-তওবা করতে থাকবে।

কপি

পেস্ট

শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

অনু গল্প ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 বিয়ের দিন বউ এর বড় বোন কে দেখে রীতিমত বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম, এতো আমারই প্রাক্তন।


স্কুলে পড়াকালীন সময়ে লিলির সাথে ২ বছর সম্পর্ক ছিলো, কিন্তু ছাত্রজীবনেই তার বিয়ে হয়ে যায়।


এর পর আর যোগাযোগ হয়নি।


এত বছর পর এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি।


না পারলাম কাউকে কিছু বলতে, না পারছিলাম সহ্য করতে, ইচ্ছে করছিলো বিয়ের আসর থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাই।


কিন্তু তা আর হলো না। বিয়েটা হয়েই গেলো।


বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে টা করেই ফেললাম, কিন্তু কে জানতো এমন একটা বিব্রতকর পরিবেশে পরতে হবে।


বিয়ে করে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরছি, আর চিন্তা করছি।


বউকে কি সব আগেই বলে দিবো, নাকি গোপন রাখবো বুঝতেই পারছি না।


অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম, যাকে নিয়ে জীবন পার করবো তার কাছে এতো বড় সত্যি গোপন করা ঠিক হবে না।


কিন্তু বলে দিলে যদি দুই বোনের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়।


বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হওয়াতে বিয়ের আগে আমার বউ মানে মিলির সাথে ভালোভাবে কথা বলারও সুযোগ হয়ে উঠেনি।


আর সত্যি বলতে মেয়েটা এতো বেশিই সুন্দর এতো বেশি মায়াবতী যে আমি প্রথম দেখেই আর না বলতে পারিনি।


মিলিকে আমার ঘরে রেখে গেলো , আমি রীতিমতো ঘামতে শুরু করলাম।


কিছু বলার আগেই মিলি আমাকে বলে উঠলো


- আবির সাহেব এই দিকে আসুন কথা আছে।


আমি চুপচাপ গেলাম


- আবির সাহেব আপনি আজ থেকে আমার বর, আমি আপনার স্ত্রী। আজ থেকে আমাকে জীবন সঙ্গীর পাশাপাশি ভালো বন্ধু ভাববেন।


- ঠিকাছে।


- আচ্ছা আপনি কি কথা কম বলেন, আমার কিন্তু কথা বলতে বেশ ভালো লাগে।


- আসলে মিলি আমি কিছু বলতে চাই


- জানি কি বলবেন, বিয়ের আগে প্রেম ছিলো এক্স ছিলো, এসব তো।


- হুম


- ওসব বলতে হবে না সব বাদ, আজ থেকে আমিই আপনার সব।


বুঝলেন?


- হুম, কিন্তু


- একদম চুপ, অতীত বাদ


আমিই বর্তমান আমিই ভবিষ্যত।


বউ এর বকবকের চোটে আর কিছুই বলতে পারলাম না।


এদিকে বিয়ের পরদিন শ্বশুড় বাড়ি যেতেই লিলি আমাকে ঘাপটি মেরে ধরলো।


- শালা আমারে না পাইয়া শোধ নেবার জন্য আমমার বইন রে বিয়ে করছিস।


- এসব কি বলো, আমি জানতাম না ও যে তোমার বোন।


- আমার বোনরে কষ্ট দিলে তোর কপালে খারাপ আছে।


- আচ্ছা আপা


- আপা বললি কেন


- বউ এর বড় বোনরে কি ডাকবো


- মশকরা করবি না, বাসার সবাই জানে তুই আর আমি যে একই স্কুলে একই ক্লাসে ছিলাম।


- জানলো কিভাবে


- আমি জানাইছি


- আল্লাহ প্রেমের কথাও বলে দিছো নাকি


- না ঐটা বলিনাই, তবে বেশি সেয়ানা গিরি করলে বইলা দিবো


- সংসারটা যেনো টিকে দোয়া কইরেন


ঐদিন যে শ্বশুড় বাড়ি থেকে আসছি আর যাই নাই। চুপিচুপি গল্প পড়েন আবার চুপি চুপি চলে যান। পে ইজে একটা ফ লোও দেন না আর গল্পেও ভালো খারাপ কোনো মন্তব্য করেন না। এ কেমন নির্মমতা?একটা ফ লো চাইছি আর কিছুনা


মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম বউ রে এমন ভালোবাসবো আর সুখি রাখবো যে লিলি দেখবে আর জ্বলবে আর আফসোস করবে।


যেই প্রতিজ্ঞা সেই কাজ।


আজ বিয়ের ৩ বছর হলো, ঘর আলো করে ফুটফুটে এক রাজকন্যা এলো।


৩ জন অনেক ভালো আছি আল্লাহর রহমতে।


বউকে আমি সবই বলে দিছিলাম, বউ আমার এতো সহজে মেনে নিবে ভাবিনি।


কিন্তু সমস্যা হলো ঝগড়া হলেই ক্ষেপানোর জন্য বলে বর না হয়ে দুলাভাই হলেই ভালো করতে!


কথা শুনে ভ্যাবলা কা/ন্তের মতো চেয়েই থাকি।


সমাপ্ত


অনুগল্প


কপি 

পেস্ট

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ উপলক্ষে কুরআন ও সুন্নার আলোকে মিলাদুন্নবী ﷺ অনুষ্ঠানের অস্তিত্বের ধারাবাহিক দলীল। ছারছিনা ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 .          পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ উপলক্ষে

কুরআন ও সুন্নার আলোকে মিলাদুন্নবী ﷺ অনুষ্ঠানের 

                অস্তিত্বের ধারাবাহিক দলীল। 

                          পর্ব নং {০১}

===================================

                نحمده ونصل على رسوله الكريم اما بعد :-

                          قال تعالى: ورفعنالك ذكرك  .

              শাব্দিক ও পারিভাষিক বিশ্লেষণ

 -----------------------------------------------------------------

 আলোচনা লিখার আগে মিলাদুন্নবীর শাব্দিক আলোচনা করবো । ميلاد + نبي , দুটি শব্দ একত্রে মিলে মিলাদুন্নবী বলা হয় । সমাজে ‘মিলাদ’ এর তিনটি শব্দ প্রচলিত আছে মিলাদ, মাওলিদ ও মাওলূদ । ‘মিলাদ’ অর্থ জন্মের সময়, ‘মাওলিদ’ অর্থ জন্মের স্থান, ‘মাওলূদ’ অর্থ সদ্যপ্রসূত সন্তান । আর ‘নবী’ শব্দ দ্বারা বুঝায় হুজুর (সঃ) কে । শাব্দিক অর্থে ‘মিলাদুন নবী’ বলতে হুযুর (সঃ) এর বিলাদত শরীফ বা জন্মবৃত্তান্তকে বুঝানো হয়ে থাকে । মিলাদ তথা স্থান বা কালবাচক বিশেষ্য । যেমন মীছাক, মীকাত, মীয়’আদ ইত্যাদি শব্দগুলো একইভাবে ইসমে যরফ তথা স্থান বা কালবাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় । বিভিন্ন অভিধানে মীলাদ শব্দটির অর্থ কিভাবে লিখা হয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করছি-


• আল্লামা ইবনে মানযুর আল আফরীকি (মৃতঃ ৭১১ হিঃ) লিখেছেনঃ

অর্থাৎ লোকটির মিলাদঃ যে সময় সে জন্মগ্রহন করেছে সে সময়ের নাম ।


• গিয়াছুল লুগাতে লিখিত আছেঃ 

মিলাদ শব্দটির মীম অক্ষর যের বিশিষ্ট যার অর্থঃ জন্মকাল ।


• মুন্তাখাব অভিধানে লিখিত আছেঃ

নবজাতক শিশু,জন্মকালীন ঘটনা,জন্মের সময়কাল ।


• ইংরেজী ও আরবী ডিকসনারীতে আছে

‘মিলাদ’ অর্থঃ birth (process of being born, coming into the world) অর্থাৎ পৃথিবীতে আগমনের সময় ।


* ফায়েদাঃ


আমরা দেখলাম মিলাদুন্নবী অর্থঃ হুজুর (সঃ) এর জন্মের সময় বা জন্মকালীন ঘটনা । আমরা বিভিন্ন অভিধান খুঁজে দেখলাম যে, মিলাদ শব্দটি কে কোন অভিধানবেত্তা ইসমে আ’লাহু তথা যন্ত্রবাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহার করেন নাই । যারা এমনটি বলেন, মূলতঃ তা নবীর সাথে বেয়াদবী বৈ কিছুই নয় ।


# মিলাদের পারিভাষিক অর্থ:-


১) আল্লামা মোল্লা আলী আল ক্বারী (রহঃ) তার বিখ্যাত কিতাব “আল মাওরিদুর রাবী” তে বলেন


মিলাদ বলতে নবীর জন্মবৃত্তান্ত তার মুজিযাসমূহ ও সিরাতের আলোচনার জন্য একত্রিত হওয়া, আর যথাযথ প্রশন্সাসহ তার প্রতি দরুদ ও সালাম পড়া । জীবিত ও মৃতের জন্য দোয়া, অতঃপর তাবাররুক (খাবার) আয়োজন করে মানুষের অন্তরে নবীর জন্মে আনন্দিত হওয়া ।


২) মিলাদুন্নবী অর্থ হচ্ছেঃ-

 

রাসুলে মাকবুল ﷺএর জীবনকালের ঘটনাবলী, সানা সিফাত, মাতৃগর্ভে অবস্থানকালীন অলৌকিক ঘটনাবলী, তার বংশ পরিচয়য়, হালিমা (রাঃ) এর ঘরে প্রতিপালিত হওয়ার ঘটনা আলোচনার নামই মিলাদ ।

           

                  { মুহাম্মাদ ওমর ফারুক }

                              বাগেরহাট । 

                ----------------------------------------

                         (১৭/০৯/২০২৩ইং। )  

                              চলবে +

ছারছিনা  ফেইসবুক থেকে নেওয়া 

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

নিশি রাতের কল ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 নিশি রাতের কল 

পর্ব ১


রাত প্রায় ১ টা আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা অদ্ভুত রকমের নাম্বার থেকে কল আসলো। নাম্বারটা ছিলো +০৭৫১৮। ভাবলাম হয়তো সিম কোম্পানী থেকে কলটা এসেছে। ফ্রিতে কোন গান শোনায় কিনা। কলটা ধরতেই বেশ অবাক হয়ে যাই। ঐ পাশ থেকে একটা মেয়ের কাঁদো কাঁদো কন্ঠ। মেয়েটা আমাকে বললো:


-হ্যালো! আপনি কী  সাকিল হাসান ?

-হ্যাঁ বলুন। আপনি কে?

-আপনি আমায় চিনবেন না। আমার একটা সাহায্য চাই আপনার কাছ থেকে।

-এতো রাতে!! কি সাহায্য?

-সাহায্যটা কাল সকালে করলেও চলবে।

-আচ্ছা আগেতো বলুন কি সাহায্য।

-বলছি। হয়তো আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেন না বা ভাববেন মজা করছি। 

আমার নাম জান্নাতুন অরিন । আমি সুলতান নগরে থাকি। রোজ সকালে পাশের এলাকায় একটা টিউশনি পড়াতে যাই। রোজকার মতো আজকে সকালেও টিউশনি শেষ করে বাড়িতে ফিরছিলাম। রাস্তাটা বেশ ফাকা ছিলো। হঠাৎ কিছু অপরিচিত ছেলেদের দেখলাম রাস্তায় মাতলামো করছিলো। আমি তাদের দেখে ভয় পেয়ে যাই । আমি ভয়ে ভয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তাদের মধ্য থেকে একটা ছেলে আমার সামনে এসে দাড়ায়। আমি কিছু বলার আগেই ছেলেটা আমার মুখ চেপে ধরে। বাকি ছেলেগুলো আমাকে জোর করে ধরে একটা গাড়িতে তোলে। তারা আমার মুখ আমার ওরনা দিয়ে বেঁধে

দেয়। আমি চাইলেও চিৎকার করতে পারছিলাম না। আমি নিজেও জানতাম না তারা আমাকে কোথায় আর কেনো নিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর তারা আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে জোর করে একটা পুরাতন জমিদার বাড়িতে নিয়ে যায়। জমিদার বাড়িটা আমি আগে থেকেই চিন্তাম তবে এর আগে কখনো এখানে আসা হয়নি। ওরা ৫ জন ছিলো।


এতক্ষনে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তারা আমাকে কেনো ধরে এনেছে। তারা আমাকে একটা ঘরের ভেতর নিয়ে যায় এবং নরপশুর মতো আমার উপর ঝাপিয়ে পরে এবং জোর করে একের পর এক আমাকে রেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি যখন একজনকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি তখন তাদের মধ্যে একজন একটা ছুরি এনে আমার গলায় চালিয়ে দেয়। আমি সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পরে যাই এবং কিছুক্ষন পরে মারা যাই। এরপর তারা আমার লাশটাকে জমিদার বাড়ির পাশেই একটা ঝোপে ফেলে চলে যায়।

-কী বললেন? আপনি মারা গেছেন!! আর আপনার লাশ ঝোপে ফেলে গেছে তারা? এতো রাতে আপনি কল দিয়ে আমার সাথে মজা করছেন? আপনি যদি মারা গিয়ে থাকেন তাহলে আমার সাথে কথা বলছেন কিভাবে!!?


-সেটা আমি আপনাকে পরে বলবো। প্লিজ আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমার লাশটা ঝোপে পরে রয়েছে। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার বাবা আমাকে অনেক খুচ্ছে। সে থানায়ো জিডি করেছে। তারা পুরো এলাকা আমায় খুজে পাগল হয়ে যাচ্ছে। আপনি প্লিজ একবার আমার বাবার কাছে গিয়ে বলুন যে আমার লাশটা জমিদার বাড়ির ঝোপে পরে রয়েছে। তারা যাতে দ্রুত আমার লাশটাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।

-আপনি আসলেই একজন সাইকো। এতোরাত্রে আমার সাথে মজা নিচ্ছেন? ফোন রাখুন!


এই বলেই রেগে কলটা কেটে দিলাম। ভাবলাম এতোরাতে এই ধরনের মজার কোন মানেই হয় না?! মেয়েটা কী উল্টাপাল্টা কথা বলছিলো। মেয়েটা মারা গেলে আবার আমার সাথে কথা বলছে কিভাবে!


কিন্তু মেয়েটা কে ছিলো!? আর আমার নামই বা জানলো কিভাবে?!! তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু এতো সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে কোন মেয়ে কেনো আমার সাথে মজা করবে এটাও বুঝলাম না। এরপর ভেবেই নিলাম হয়তো পরিচিত কোন বন্ধু মজা করেছে। তাই এটা নিয়ে আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম।


পরের দিনটা পুরোটাই স্বাভাবিক ভাবে কাটিয়ে দিলাম। দিনে একবারো কলটার কথা মনেও পড়েনি। আবার রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় ১ টা বেজে গেলো। হঠাৎ আবার সেই +০৭৫১৮ নাম্বার থেকে কল আসলো। প্রথম বারে ধরলাম না। পরে আবার আরেকটা কল আসলো একই নাম্বার থেকে। এইবার অনেকটা রেগেই কলটা ধরলাম। আর বললাম:

-কী সমস্যা আপনার? আজকে আবার কল দিয়েছেন কেনো?!


-আপনাকে না বললাম আমাকে একটু সাহায্য করতে। আপনি আজকে দিনে আমার বাবার কাছে কেনো জাননি?? আর আমার কথা কেনো বলেননি? জানেন আজ আমি মারা গেছি দুইদিন হয়ে গেলো। দুই দিন ঝোপটাতে কতো কষ্টে পরে রয়েছি। আমার বাবাও আমায় খুজতে খুজতে অনেক অসুস্হ্য হয়ে পড়েছেন। প্লিজ একবার অন্তত আমার বাবার কাছে গিয়ে সব কথা তাকে খুলে বলুন।

-আপনি এতো মানুষ থাকতে আমার সাথে কেনো মজা নিচ্ছেন? প্লিজ এসব বন্ধ করুন।

-দেখুন আমি মজা করছি না। আপনি অন্তত একবার আমার বাড়িতেতো গিয়ে দেখুন। সব বুঝতে পারবেন। আমার বাড়ি আপনার বাড়ি থেকে খুব একটা দুরে না। সুলতান নগর বাজারের নিকটে ১০৭ নাম্বার বাড়িটাই আমার প্লিজ একটু সাহায্য করুন।


এরপর আমি কলটা কেটে দিলাম। মেয়েটার কথাগুলো বিশ্বাস করার মতো না। কিন্তু মেয়েটা এমনভাবে আমার সাথে কথাগুলো বলেছিলো যে আমার মনে হলো মেয়েটা মিথ্যা কথা বলছে না। আর মেয়েটা আমার নামও জানে। অর্থাৎ আমাকে চিনে।


আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আমার কী করা উচিত। মেয়েটা এমন সব কথা বলেছিলো যে এটা কারো সাথে শেয়ার করলে, সেও আমায় পাগল ভাববে।


তবে আমি এতোটা বুঝতে পারছিলাম যে একটা মেয়ে এইসব ব্যাপার নিয়ে অন্তত আমার সাথে মজা করবে না।


সবার প্রথমে তাহলে কাল আমাকে সুলতান নগরের ১০৭ নাম্বার বাড়িটাতে যেতে হবে। তারপরেই সব কিছু বুঝতে পারবো। আর যদি কেউ মজা করে থাকে তাহলেও হয়তো তার বাড়ি ঐখানেই রয়েছে।


সুলতান নগর আমাদের এলাকা থেকে খুব একটা দুরে না। তাই পরের দিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠেই সুলতান নগরের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম। সুলতান নগরে পৌছানোর পর সেখানকার মানুষদের কাছে ঠিকানা জেনে ঠিক ১০৭ নাম্বার বাড়িটার সামনে গেলাম।


বাড়িতে পৌছে দেখলাম বাড়িটাতে বেশ ভীর। এরপর একজন লোকের কাছে ভীরের কারন জানতে চাইলাম। লোকটা আমাকে যাহ বললো আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম। লোকটা বললো:

-গত দুই দিন ধরে এই বাড়ির মেয়েটাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়েটা দুইদিন আগে পাশের এলাকায় টিউশনি করাতে গিয়েছিলো এরপর থেকে আর বাড়ি ফিরেনি। পুলিশ সহ এলাকাবাসী ২দিন ধরে পুরো কয়েকটা এলাকা খুজেও মেয়েটাকে পায়নি। সেই টেনশনে মেয়েটার বাবা অনেক অসুস্হ্য হয়ে পড়েছে ।


মেয়েটা আমাকে ফোনে যা যা বলেছিলো তা যে এইভাবে সত্যি হবে ভাবতে পারিনি।


এরপর আমি লোকটার কাছে মেয়েটার নাম জানতে চাই। লোকটা বললো:

-জান্নাতুন অরিন।


এরপর আর আমার কিছুই বলার ছিলো না। আমি অবাক হয়ে বাড়িটার সামনে দাড়িয়ে ছিলাম। তার মানে মেয়েটা কল করে যাহ বলেছিলো সব সত্যি। কিন্তু একজন মেয়ে মারা জাওয়ার পর কিভাবে ফোনে কথা বলতে পারে তা আমার মাথায় আসছিলো না।


মেয়েটার বাকি কথাগুলোও যদি সত্যি হয় তাহলে মেয়েটার লাশ এখন জমিদার বাড়ির ঝোপে পরে রয়েছে। আর এই কথাটা শুধু আমি জানি। আমি ভাবছিলাম মেয়েটার বাবাকে বা পুলিশকে কিভাবে বলবো যে মেয়েটার লাশ জমিদার বাড়ির ঝোপে পরে রয়েছে।


কারন তাদের যদি বলি যে মেয়েটার লাশ ঐ ঝোপে পরে রয়েছে তাহলে তারা আমার কাছ থেকে জানতে চাইবেন যে এটা আমি কী করে জানলাম। আর আমি যদি বলি যে মেয়েটা মারা জাওয়ার পর আমাকে কল দিয়ে এইকথা গুলো বলেছে তাহলে তারা আমার কথা বিশ্বাসতো করবেই না উল্টা আমাকে আরো সন্দেহ করবে। তাই ভাবলাম তাদের কিছু বলার আগে প্রথমে সেই জমিদার বাড়ির ঝোপে গিয়ে দেখি কোন লাশ পাই কিনা।

তবে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিল যে আমি ঝোপে লাশটা পাবো না।


এরপর আমি একজন লোকের কাছ থেকে জমিদার বাড়িটার ঠিকানা জেনে জমিদার বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর সেই পুরোনো জমিদার বাড়িতে পৌছালাম। দেখলাম আসলেই বাড়িটা বেশ নির্জন একটা জায়গায়। এখানে মানুষ খুব একটা আসা-জাওয়া করে না। মেয়েটার কথা মতো আমি বাড়িটার আশেপাশে ঝোপ খুজে বেড়াচ্ছিলাম। প্রথমে কোন ঝোপ না দেখলেও কিছুক্ষণ পর বেশ কিছুটা দুরে একটা ঝোপ দেখতে পেলাম। ঝোপটা দেখেই ভয়ে ভয়ে ধীরে ধীরে ঝোপটার দিকে এগোতে লাগলাম। এরপর ঝোপটাতে তাকিয়ে যাহ দেখলাম আমি পুরো ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। মেয়েটা যাহ বলেছিলো তাই ঠিক হলো। ঝোপে একটা মেয়ের অর্ধনগ্ন অবস্থায় লাশ পরেছিলো। লাশটা থেকে বেশ দূরগন্ধও বের হচ্ছিলো।


আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই ভয়ে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে জমিদার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলাম। এরপর আশেপাশের লোকদের চিৎকার করে ডাকলাম। তারা আসলে তাদেরকে বলি যে ঐ বাড়ির ঝোপটায় একটা মেয়ের লাশ পরে রয়েছে। তারাও অবাক হয়ে দৌড়ে যায় ঝোপটার কাছে এবং লাশটা দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায়।


আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার সাথে কি হচ্ছে। মেয়েটা যাহ বলেছিলো ঠিক তাই হলো। তার মানে মেয়েটা মিথ্যা বলেনি। সে আসলেই মারা জাওয়ার পর আমাকে কল দিয়েছিলো। আমি ভয়ে চুপচাপ মাটিতে বসে পড়লাম। একটু পর এলাকার লোকেরা পুলিশকে কল করলো এবং পুলিশ আসলো।


পুলিশ এসেই লাশটাকে দেখে চিনতে পারলো যে এই মেয়েটাই ২ দিন আগে সুলতান নগর থেকে নিখোজ হয়েছিলো। এরপর তারা মেয়েটার বাবাকে কল করে এখানে আসতে বলে। পুলিশ সবার কাছ থেকে জানতে পারে যে সবার আগে লাশটা আমিই দেখেছিলাম। তাই তারা আমাকে প্রশ্ন করে যে আমি কিভাবে এখানে আসলাম আর লাশটাকে দেখলাম! আমি আসল কারণটা তাদের বলতে পারছিলাম না। কারন তারা আমার কথা বিশ্বাস করবে না। তাই তাদের বললাম যে আমি এখানে এমনি হাটাহাটি করতে করতে চলে এসেছিলাম আর লাশটাকে দেখতে পাই। তারা আমার কথা বিশ্বাসো করে নেয়। এরপর একজন মহিলা কন্সটেবল এসে পুলিশ অফিসারকে বলে:


-স্যার লাশটাকে দেখে মনে হচ্ছে গনধর্ষণ করা হয়েছিলো এবং পরে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। আনুমানিক মেয়েটা দুই দিন আগে মারা গেছে।


এরমানে এখন আমি নিশ্চিত যে মোবাইলে কল করে কেউ আমার সাথে মজা করেনি। মেয়েটা যা যা বলেছিলো তার পুরোটাই সত্যি।


এরপর আমি পুলিশ অফিসারের কাছে অনুমতি নিয়ে বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে ফিরতে ফিরতে প্রায় অনেক রাত হয়ে যায়।


আমি নিজের ঘরেই চুপচাপ বসে ভাবছিলাম যে একটা মৃত মেয়ে কিভাবে কল দিয়ে তার মৃত্যুর কথা বলতে পারে। আর পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে মেয়েটা আমাকেই বা কেনো কল দিলো। মেয়েটাতো তার বাবাকেও সরাসরি কল দিয়ে সব বলতে পারতো।


এগুলো ভাবতে ভাবতে আবার মোবাইলের স্ক্রীনে সেই অদ্ভুদ নাম্বারটা ভেসে উঠলো, "+০৭৫১৮"। ভয়ে পেয়ে গেলাম মেয়েটা আজ আবার আমাকে কেনো কল দিয়েছে।


চলবে........

কপি

পেস্ট

বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

নায়ক ফেরদৌস অভিনিত ছবি

🌸🌸ফের‌দৌস অভিনীত সি‌নেমার তালিকাঃ-

================❤️❤️=================

১।বু‌কের ভিতর আগুন(শাবনূর)

২।‌প্রে‌মের জ্বালা(শাবনূর)

৩।ব‌স্তির মে‌য়ে(শাবনূর)

৪।এই মন চায় যে(শাবনূর)

৫।সবার উপ‌রে প্রেম(শাবনূর,কাজল)

৬।প্রা‌ণের মানুষ(শাবনূর)

৭।আমার স্বপ্ন তু‌মি(শাবনূর)

৮।ব্যা‌চেলর(শাবনূর,অ‌পি ক‌রিম)

৯।দুই নয়‌নের আলো(শাবনূর)

১০।ব‌লোনা ভা‌লোবা‌সি(শাবনূর,পূ‌র্ণিমা)

১১।বউ বন্ধক(শাবনূর)

১২।যত প্রেম তত জ্বালা(শাবনূর)

১৩।তু‌মি বড় ভাগ্যবতী(শাবনূর,শানু)

১৪।বউ শ্বাশুড়ীর যুদ্ধ(শাবনূর,শানু)

১৫।ফু‌লের মত বউ(শাবনূর)

১৬।র‌ঙিন ঘর জামাই(শাবনূর)

১৭।ঘ‌রের লক্ষ্মী(শাবনূর)

১৮।‌জি‌দ্দি বউ(শাবনূর)

১৯।জ‌মেলা সুন্দরী(শাবনূর)

২০।‌বিয়াইন সাব(শাবনূর)

২১।‌গোলাপী এখন বিলা‌তে(শাবনূর)

২২।কাল সকা‌লে(শাবনূর)

২৩।‌দোস্ত আমার(শাবনূর)

২৪।জীবন সীমা‌ন্তে(শাবনূর)

২৫।ভালবাসার যুদ্ধ(শাবনূর)

২৬।‌খেয়া ঘা‌টের মা‌ঝি(শাবনূর)

২৭।‌কিছু আশা কিছু ভালবাসা(শাবনূর,‌মৌসু‌মি)

২৮।পৃ‌থিবী আমা‌রে চায় না(কা‌ঞ্চি)

২৯।পর‌দেশী বাবু(রচনা ব্যানার্জী)

৩০।হঠাৎ বৃষ্টি(‌প্রিয়াঙ্কা,জুন মা‌লিয়া,শ্রী‌লেখা)

৩১।চু‌পি চু‌পি(‌প্রিয়াঙ্কা)

৩২।টক ঝাল মি‌ষ্টি(‌প্রিয়াঙ্কা,ভারত)

৩৩।‌মি‌ট্টি(‌হিন্দী)

৩৪।চু‌ড়িওয়ালা(মধু‌মিতা)

৩৫।‌মিস ডায়না(‌মৌসু‌মি)

৩৬।রাজ গোলাম(একা)

৩৭।আমার প্র‌তিজ্ঞা(তামান্না)

৩৮।মধু পূ‌র্ণিমা(পূ‌র্ণিমা)

৩৯।‌বিপ্লবী জনতা(পূ‌র্ণিমা)

৪০।দুর্ধর্ষ সম্রাট(পূ‌র্ণিমা)

৪১।সন্তান যখন শত্রু(পূ‌র্ণিমা)

৪২।রাক্ষুসী(‌রো‌জিনা,পূ‌র্ণিমা)

৪৩।জীবন চা‌বি(পূ‌র্ণিমা)

৪৪।খায়রুন সুন্দরী(‌মৌসু‌মি)

৪৫।বাংলার বউ(‌মৌসু‌মি)

৪৬।দজ্জাল শ্বাশুড়ী(‌মৌসু‌মি,ই‌রিন জামান)

৪৭।‌সোনার ময়না পা‌খি(‌মৌসু‌মি,ই‌রিন জামান)

৪৮।‌ছোট বোন(শাবনূর,‌শিমলা)

৪৯।‌মে‌হের নিগার(‌মৌসু‌মি,ই‌রিন জামান)

৫০।কখ‌নো মেঘ কখ‌নো বৃ‌ষ্টি(‌মৌসু‌মি)

৫১।রুপান্তর(শ‌া‌কিবা)

৫২।স্বপ্নপূরণ(‌মৌসু‌মি)

৫৩।ময়নাম‌তির সংসার(‌মৌসু‌মি)

৫৪।এক বুক জ্বালা(‌মৌসু‌মি)

৫৫।সন্ত্রাসী বন্ধু(তামান্না)

৫৬।‌কেন ভালবাসলাম(রত্না)

৫৭।তু‌মি শুধু আমার(‌কেয়া,রত্না)

৫৮।তু‌মি কি সেই(‌কেয়া,রত্না)

৫৯।বউ হ‌বো(‌নেহা)

৬০।ওস্তাদ(ঋতুপর্ণা,ভারত)

৬১।প্রা‌ণের স্বামী(রচনা,ভারত)

৬২।শু‌য়োরানী দু‌য়োরানী(ঋতুপর্না,ভারত)

৬৩।দাদা ঠাকুর(অ‌র্পিতা,ভারত)

৬৪।‌প্রেমশ‌ক্তি(অর্পিতা,ভারত)

৬৫।মাস্টারমশাই(রচনা,ভারত)

৬৬।অকৃতজ্ঞ(ঋতুপর্ণা,ভারত)

৬৭।আমা‌দের সংসার(শ্রী‌লেখা,ভারত)

৬৮।ফুল আর পাথ‌র(ঋতুপর্না,ভারত)

৬৯।প্র‌তি‌হিংসা(ঋতুপর্ণা,ভারত)

৭০।দাদু নাম্বার ওয়ান(রচনা,ভারত)

৭১।কারাগার(প‌পি)

৭২।ওপা‌রে আকাশ(প‌পি)

৭৩।গঙ্গাযাত্রা(প‌পি)

৭৪।না বোলনা(সুমনা সোমা)

৭৫।এক কাপ চা(‌মৌসু‌মি,ঋতুপর্না)

৭৬।পরম‌প্রিয়(‌শিমলা)

৭৭।তুই য‌দি আমার হইতি রে(‌মৌসু‌মি)

৭৮।কামব্যাক(ঋতুপর্না,ভারত)

৭৯।আমার ভা‌লোলাগা আমার ভালবাসা(ঋতুপর্না,ভারত)

৮০।মর্য‌াদা(ঋতুপর্না,ভারত)

৮১।শুভ বিবাহ(অপু,‌নিপুন)

৮২।ধ্রুবতারা

৮৩।চন্দ্রকথা(শাওন)

৮৪।আমার আছে জল(‌মিম)

৮৫।চার অক্ষ‌রের ভালবাসা(প‌পি)

৮৬।স্বামীহারা সুন্দরী(প‌পি)

৮৭।লাট্টু কসাই(শাহনূর)

৮৮।বিন্দুর ছে‌লে(‌মৌসু‌মি)

৮৯।ক্ষু‌দে যোদ্ধা(প‌পি)

৯০।স্বামী নি‌য়ে যুদ্ধ(শাবনূর,আন্না)

৯১।আহা(সাথী)

৯২।আয়না(সোহানা সাবা)

৯৩।ন‌ন্দিত নর‌কে(সুমনা সোমা)

৯৪।বধূবরণ(‌মৌসু‌মি)

৯৫।আ‌রো একবার(ঋতুপর্না,ভারত)

৯৬।তু‌মি য‌দি আমার হ‌তে(ঋতুপর্ণা,ভারত)

৯৭।আয়না‌তে(ঋতুপর্না,ভারত)

৯৮।মহানগর(ভারত)

৯৯।রূপকথার সাঁঝবা‌তিরা(ভারত)

১০০।স্ব‌প্নের ফে‌রিওয়ালা(ভারত)

১০১।এই অর‌ণ্যে(ভারত)

১০২।পটাদার কী‌র্তি(ঋতুপর্না,ভারত)

১০৩।ফাইটার(ল‌কেট,ভারত)

১০৪।কৃষ্ণপক্ষ(ক্যা‌মিও)

১০৫।‌প্রিয়া তু‌মি সুখী হও(শায়লা সা‌বি)

১০৬।৬৯ পাতলা খান লেন(‌মৌটুসী)

১০৭।‌দিলতো পাগল(শাবনূর)

১০৮।এরই নাম ভালবাসা(‌রে‌সি)

১০৯।‌খোকাবাবু(ল‌কেট,ভারত)

১১০।আত্মদান(‌নিপুন)

১১১।অবুঝ বউ(‌প্রিয়াংকা)

১১২।বাদশা দ্য ডন(সুষমা সরকার)

১১৩।‌গে‌রিলা(জয়া আহসান)

১১৪।পুত্র(জয়া)

১১৫।ই‌য়ে‌তি অভিযান

১১৬।‌গোলাপজান(‌মৌসু‌মি)

১১৭।বৃ‌ষ্টি ভেজা আকাশ(‌মৌসু‌মি)

১১৮।কুসুম কুসুম প্রেম(‌মৌসু‌মি)

১১৯।‌চিটার নাম্বার ওয়ান(চুম‌কি)

১২০।ও‌রে সাম্পানওয়ালা(‌মৌসু‌মি)

১২১।মন জা‌নেনা ম‌নের ঠিকানা(‌মৌসু‌মি)

১২২।এ চো‌খে শুধু তু‌মি(শাবনূর)

১২৩।দুঃ‌খিনী জোহরা(শাবনূর)

১২৪।রানী কু‌ঠির বা‌কি ইতিহাস(প‌পি)

১২৫।জবাব‌দি‌হি(ম‌নিকা)

১২৬।বাবা আমার বাবা(‌মৌসু‌মি)

১২৭।মা‌য়ের স্বপ্ন(প‌পি)

১২৮।হরিচাঁদ ঠাকুর(পা‌পিয়া,ভারত)

১২৯।ঝ‌ড়ো হাওয়া(ভারত)

১৩০।খাঁচা(ঋতুপর্না,ভারত)

১৩১।মন যা‌কে চায়(ঋতুপর্না,ভারত)

১৩২।জনম জন‌মের সাথী(ঋতুপর্না,ভারত)

১৩৩।সাগর কিনা‌রে(ঋতুপর্না,ভারত)

১৩৪।হার জিৎ(রচনা,ভারত)

১৩৫।‌বি‌য়ের লগ্ন/মা‌য়ের মত ভাবী(রচনা)

১৩৬।এনকাউন্টার(ভারত)

১৩৭।আকর্ষণ(ঋতুপর্না,ভারত)

১৩৮।সমা‌ধি(ভারত)

১৩৯।‌শোভ‌নের স্বাধীনতা(‌নিপুন)

১৪০।‌ছে‌ড়ে যাস না(রূপসা,ভারত)

১৪১।স্বর্গ থে‌কে নরক(‌নিপুন)

১৪২।৫২ থে‌কে ৭১(নিপুন)

১৪৩।দুই বেয়াই‌য়ের কী‌র্তি(প‌পি)

১৪৪।হঠাৎ দেখা(ঋ‌দ্ধিমা ঘোষ,ভারত)

১৪৫।‌কে আমি(ক্যা‌মিও)

১৪৬।জা‌গো(‌বিন্দু)

১৪৭।পাস‌পোর্ট(ভারত)

১৪৮।ফাইনাল মিশন(ভারত)

১৪৯।কা‌লের পুতুল

১৫০।কবীর(ক্যা‌মিও)

১৫১।‌কি‌স্তির জ্বালা

১৫২।বৃহন্নলা(‌সোহানা সাবা)

১৫৩।‌মেঘকন্যা

১৫৪।প‌বিত্র ভালোবাসা

১৫৫।লিডার

১৫৬। ১৯৭১ সেই সব দিন

১৫৭। সুজন মাঝি

১৫৮। পোস্টমাস্টার ৭১

বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আমার স্ত্রীকে আমার আর ভালো লাগে না, ফেইসবুক থেকে নেওয়া

 "আমার স্ত্রীকে আমার আর ভালো লাগে না,এর ব্যাখ্যা কি ডক্টর?তাকে এখন আর আমার পছন্দ না।সাইকোলজির মতে এর ব্যাখ্যা জানতে চাই।

অপর পাশে বসা ভদ্রলোকের কথা শুনে বিস্মিত হইনি মোটেই।এরকম উদ্ভট ঘটনা নিয়ে প্রায়ই লোক আসে আমার কাছে।আমি মুচকি হেসে চশমা ঠিক করলাম।বললাম,

চা খাবেন নাকি কফি?

কিছু খেতে চাই না।আমি আমার সমস্যা নিয়ে সিরিয়াস ডক্টর।এর পার্মানেন্ট সলুউশন দরকার।

আমি চা অর্ডার করলাম।বললাম আপনি আপনার প্রবলেম টা ক্লিয়ারলি বলুন।কেন ভালো লাগে না,কবে থেকে ভালো লাগে না এ টু জেড।

লোকটি কলার ঠিক করলো।চায়ে চুমুক দিয় বলতে শুরু করলো,

আমার স্ত্রী এর সাথে আমার প্রেমের বিয়ে!তখন তার বয়স ছিল উনিশ।ভার্সিটি লাইফের প্রেম আমাদের।সেসময় সে প্রচন্ড সুন্দর ছিল।তার রুপে মুগ্ধ হয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেই।তাকে রাজি করাতে প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছে আমায়।সে এতটাই সুন্দর ছিল যে আমার বন্ধুরাও তার রুপে বিমোহিত হতো।গত চার বছর আগে আমি তাকে পালিয়ে এনে বিয়ে করি।কারন তার মা বাবা আমার সাথে অনন্যার বিয়ে দিবে না।তাদের একটাই সমস্যা ছিল যে আমার মাসিক আয় তখন কম,যা এখন একটু বেড়েছে!তাছাড়া অনন্যা তার মা বাবার এক মাত্র মেয়ে তাই বড়লোক ছেলে খুঁজছিল,সেক্ষেত্রে আমি মধ্যবিত্ত।অনন্যা নিজেও আমায় খুব ভালোবাসতো, কেয়ার করতো।ইদানিং সে সবসময় খিটখিট করে।অফিস থেকে ফিরলেই এটা ওটা নিয়ে ঝগড়া সৃষ্টি করে।আগের মতো আমার খেয়াল রাখা তো দূর আমার কোনকিছুই তার মনে থাকে না।তার চেহারায় এখন লাবন্যতা নেই,শরীরের গঠন ভালো নেই,আগে যেমন সুন্দর ছিল এখন তেমনটা নেই,যেন সে ত্রিশ বছরের কোন দূর্বল নারী।তার চোখে মুখে এখন আর কোন মুগ্ধতা খুঁজে পাই না।মনে হয় সে প্রেমিকা হিসেবেই ঠিক ছিল।বিয়ের দু বছরের মাথায় তার প্রতি আমার আকর্ষন কমে যায় আর এখন সেই আকর্ষণ নেই বললেই চলে। আমি জানি আমার মন মানসিকতা কে আপনি দায়ী করবেন কিন্তু অনন্যার পরিবর্তনের কারনে আমি আতঙ্কিত।

আমি হাত বাড়িয়ে ভদ্রলোক অর্থাৎ আয়মান নামক লোকটিকে থামালাম।জিজ্ঞেস করলাম,

আপনার বাসায় কে কে আছেন?

প্রত্যুত্তরে সে বললো,

মা-বাবা,আর আমার ছেলে,অনন্যা,আমি আর আমার এক বোন।তবে বছরের বেশিরভাগ সময় দাদা দাদী এসে আমাদের বাড়িতে থাকেন।

আমি বললাম,

আপনার মাসিক আয় কত?

ত্রিশ হাজার ।

অনন্যা কে বিয়ে করার সময় কত ছিল?

চৌদ্দ হাজার ।

আপনার আম্মুকে কত টাকা দেন,বা পরিবারের জন্য কত টাকা ব্যয় হয়?

বাড়ি ভাড়া,বাজার-সদাই,কারেন্ট বিল,গ্যাস বিল সহ প্রায় সব টাকাই মাকে দিতে হয়।কিছু টাকা রাখি তাতে আমার আর বাচ্চা আরহান এর হয়ে যায়।

আপনার বোনকে কত টাকা দেন হাত খরচ হিসেবে?

ও যখন যেটা চায় তাই এনে দেয়া হয়।হাত খরচ মা ইহ দেন যখন লাগে।একমাত্র বোন বলে সে আদরে মানুষ হয়েছে।

আপনার বাড়ির কাজ কে করে?

অনন্যা সব সামলায়।দাদী বয়স্ক মানুষ,বোনের কলেজ প্রাইভেট আছে তাই তার কাজ শুধু পড়াশোনা।মায়ের শরীর ভালো থাকে না তাই সব দায়িত্ব অনন্যার হাতে।অনন্যা ও সব দায়িত্ব হাসিমুখেই নিয়েছে।

আপনার কি অন্য কাউকে পছন্দ?

না ডক্টর সেরকম নয়।আমি অনুতপ্ত এটা ভেবে যে কেন অনন্যাকে আমার আর পছন্দ নয়,কেন এখন তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করি না।আগের মতো ভালোবাসা পেলে হয়তো তাকে ভালো লাগতো কিন্তু তার ব্যবহার আর কর্মকান্ড অসহনীয়।আমি তাকে সত্যিই ভালোবাসি কিন্তু তার রুক্ষতার জন্য মন মালিন্য হচ্ছে।

বন্ধু-বান্ধব কতজন আছে আপনার?

অনেক জন।

তাদের সময় দেন কিভাবে?

অফিস থেকে এসে আড্ডা দিই বাইরে।নইলে ছুটির দিন ঘুরে ফিরে।ভার্সিটি লাইফে এরাই সাহায্য করেছিল অনন্যার হাত ধরতে।

আপনার স্ত্রীকে হাত খরচ কত দেন?

এইবার আয়মান সাহেব ইসস্ত হলেন।বললেন,

ডক্টর আমার সমস্যা আমার স্ত্রীকে নিয়ে।আপনি আমার পরিবারকে টানছেন কেন,বন্ধুদের টানছেন কেন??আর ওর হাত খরচের কোন প্রয়োজন হয় না কারন ও বাইরে বের হয় না তেমন।আর টুকটাক যা লাগে আমিই এনে দিই।কিন্তু আপনার এইসব জেনে আদৌ কোন লাভ হবে?আমার সমস্যা তো অন্য কোথাও।

একটা প্রবলেম সলভ্ড করতে অনেকগুলো বিষয় জানতে হয় দেখা যায় সেগুলোই সমস্যার সমাধান।আপনি যদি বুঝতে পারতেন সমস্যাটা কোথায় তাহলে আমার কাছে কি আসতেন?নইলে আমি কি সাইনস্টিস হতে পারতাম?

আপনার সন্তান কেমন ধরনের?মানে শান্ত না দুষ্টু?

ছেলেটা প্রচন্ড দুষ্টু।দু বছর বয়সী ছেলেটা সবাইকে নাজেহাল করে দেয়।আমি সারাদিন অফিসে থাকি।এইসব কথা অনন্যাই আমায় বলে।আর আমি বাড়িতে থাকলে বাচ্চা দুষ্টুমি করে যা বাড়াবাড়ি রকমের নয়।এটা ওটা ভাঙ্গাভাঙ্গি তার স্বভাব।

অনন্যার পড়ালেখা?

বিয়ের পর আর মা পড়তে দেননি।সংসার সামলানো দায় হয়ে পড়েছে তাই।এছাড়া পাড়া প্রতিবেশীরাও কটু কথা বলে।

আমি হাসলাম একটু,আয়মান সাহেব অবাক হলেন।আমি বললাম,

মিস্টার আয়মান আপনি একজন ভালো প্রেমিক হলেও ভালো স্বামী নন।এটা কি আপনি জানেন?

কি সব বলছেন?তার সব দায়িত্ব নিয়েছি,একটা পরিবার দিয়েছি,ভালোওবেসেছি।ইদানিং ওর পরিবর্তনের জন্যই এত মনোমালিন্য।

আমি আয়মান সাহেব কে বললাম,

অনন্যা যখন আপনার প্রেমিকা ছিল তখন সে সুন্দর করে সেজেগুজে আপনার সাথে দেখা করতো।কোন কালার ড্রেস পড়বে,কোন কালার ইয়ারিং পরবে ভাবতে ভাবতেই তার বহুত সময় লাগতো।আপনার সাথে সে সবসময় স্থির শান্ত হয়ে কথা বলতো কারন আপনি তার প্রেমিক।

অনন্যা তার মা বাবার এক মাত্র মেয়ে।বাবা মায়ের আদরে আদরে মানুষ হয়েছে সে।আপনাকে বিয়ে করে সে কি পেয়েছি বলুন তো?আচ্ছা আপনি লাস্ট কবে অনন্যা কে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছিলেন মনে আছে?আচ্ছা লাস্ট কবে সে আপনার কাছে কিছু চেয়েছে মনে আছে?মিস্টার আয়মান আপনি অনন্যাকে আপনার বউ এর চেয়ে বেশি বাড়ির বউ ভেবেছেন।আদরে বেড়ে ওঠা মেয়েটা আপনার চৌদ্দ হাজার টাকা বেতনেও আপনার পাশে থেকেছে,আপনার হাত ধরেছে।কঠিন সময়ে সে কিন্তু আপনাকে ছাড়েনি। সে মা-বাবাকে ভূলে আপনার সাথে চলে এসেছে,আর আপনি তাকে রানী করে না রেখে বাড়ির ঝি হিসেবে ট্রিট করছেন।

আয়মান সাহেব বেশ চটে গেলেন।বললেন,

কি বলতে চান আপনি?ঘরের কাজ করলেই সে ঝি হয়ে যায়?বিয়ে মানে শুধু স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন নয় পরিবারের মাঝেও বন্ধন।

মিস্টার আয়মান গত দু বছর আগে আপনার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে।বাচ্চা প্রসবের যে পেইন তা আপনারা বুঝবেন না।সেসময় শরীর দূর্বলের পাশাপাশি সুইং কাটা ছেঁড়ার কষ্ট সহ্য করেছে সে,আপনি তার পাশে ছিলেন কতক্ষন?অনন্যা আলালের ঘরের দুলালি হয়ে আপনার বাড়ির সব কাজ,বাবা মায়ের সেবা,আপনার দাদা-দাদীর সেবা,বোনের সেবা,আপনার সেবা করে গেছে।এত এত কাজ করার পর তার কি মন চাইবে অফিস থেকে ফেরার পর আপনার সাথে মিষ্টি করে কথা বলতে?সেজেগুজে বসে থাকতে?

আপনি আপনার বোনকে কোন কাজ করতে দেন না কারন সে আপনার বোন। অথচ বাচ্চা সামলানোর পাশাপাশি কিভাবে অনন্যা সংসার সামলেছে আল্লাহ্ তায়ালাই জানে।

আচ্ছা আপনি তো বললেন অনন্যা আপনার সাথে ভালো করে কথা বলে না,আপনি বলুন তো আপনি লাস্ট কবে তার প্রশংসা করেছেন?রান্নার হাতের তারিফ করেছেন?তার দিকে ভালো করে তাকিয়েছেন,এটা ওটা করতে সাহায্য করেছেন?

আয়মান চুপ থাকলো।বললাম,

শুধু শারীরিক সম্পর্ক করলেই স্বামী হওয়া যায় না।স্ত্রী শুধু সবার খেদমত করবে আর আপনার চাহিদা মেটাবে এমন নয়।কবে আপনি তাকে নিয়ে ঘুরেছেন?তার সাথে মন খুলে কথা বলেছেন মনে পড়ে?আপনি তার চেহারায় লাবণ্য নেই তাই দুঃখ প্রকাশ করছেন,কিন্তু কেন নেই খোঁজ নিয়েছেন?ছুটির দিন বাচ্চাকে নিজে রেখে কখনো বলেছেন অনন্যা ঘুমাও,না ঘুমিয়ে চোখের নিচে কালি পড়েছে তোমার?যেই মেয়েটা হাত কেটে গেলে বাড়ি মাথায় তুলেছে সেই মেয়েটা রাত দিন খেটে যাচ্ছে অথচ আপনি ভাবছেন তার রুপ নেই কেন?আপনার স্ত্রী অনন্যা ভালো একটা শাড়ি পড়ে না,মাথা আচরানোর সময় পায় না,রাতে না ঘুমিয়ে শরীর বসে গেছে।এত কিছুর পর সৌন্দর্য থাকবে আপনি ভাবেন কিভাবে?

আয়মান চুপ রইলেন।খেয়াল করলাম তার চোখ চিকচিক করছে।আমি ঠান্ডা চায়ে চুমুক দিলাম গলা ভেজানোর জন্য ।সেসময় আমার ফোনে কল এলো।ওপাশের মানুষটা আমার ভিষণ চেনা।আমার ঘরের মানুষ,আপন মানুষ।কল ধরে লাউড স্পিকারে দিলাম,

হ্যালো?

হ্যাঁ বলুন।

কি করছো?

রোগী দেখছি।

আজ তাড়াতাড়ি আসবে কেমন?আমিও ছুটি নিয়েছি।চিত্রাপাড়ের ওখানে মেলা বসেছে আমরা ঘুরতে যাবো কিন্তু।আর তুমি সাদা রঙের শাড়ি পড়বে কেমন?তোমায় শূভ্রপরী লাগবে।আর চুলে গাজরা দিতে ভুলো না।

আমি হাসলাম।বললাম,

আসবো একটু পরেই।আপনিও পাঞ্জাবী পড়বেন।

মেঘু শুনো,

হ্যাঁ বলুন

ভালোবাসি।অপেক্ষায় রইলাম।

ফোনটা কেটে আমি আয়মান সাহেবের দিকে তাকালাম ।উনি আমার আর আমার স্বামী মাহদির কথোপকথন শুনছেন।বললেন,

আমি খুব লজ্জিত ম্যাম।আমি এখন কি করতে পারি?যে অন্যায় করেছি তা কি ক্ষমার যোগ্য?

আপনি অনন্যাকে সময় দিন।ছুটির দিন বন্ধুদের সাথে না ঘুরে অনন্যার সাথে সময় কাটান।তাকে কিছু হাত খরচ দিবেন যা দিয়ে সে নিজের বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে পারবে।অনন্যার যত্ন নিন,পারলে বাসায় একজন সাহায্যকারী রাখুন।অনন্যার সাথে মন খুলে কথা বলুন দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।অনন্যা পছন্দ করে এমন কিছু করুন,তার পাশে থাকুন।পারলে দুজনে হাওয়া বদল করে আসুন।অনন্যার মনের রাগ,অভিমান,অভিযোগ প্রকাশ করার অধিকার দিন।আয়মান সাহেব,স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মধুর,শান্তির।এতে হারাম নেই,বাঁধা নেই।বিশ্বাস,সম্মান ভালোবাসা একটি সম্পর্কে জরুরী।কেবল সৌন্দর্যের মায়ায় পড়লে চলে না

ব্যক্তিত্ব,এবং মানুষটার অন্তরের প্রেমে পড়ুন।দুজনের প্রতি দুজনের সম্মান বজায় রাখুন।একবার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেলে তা ঠিক হবে না।মনে রাখবেন ভাঙা আয়না জোড়া লাগলেও দাগ রেখে যায়,গায়ে কাঁটা বিধে গেলে তা বের করলেও ক্ষত রয়ে যায়।

আয়মান সাহেব শুনলো।তারাহুরো করে উঠে গেল অনন্যার কাছে।আমিও বের হলাম কেবিন থেকে,মাহদি বোধহয় অপেক্ষা করছে।

আয়মান বাড়ি গিয়ে বেল বাজালো।অনন্যা শাড়িতে হাত মুছে দরজা খুলে বাচ্চাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আয়মান হাতের গাজরা টা অনন্যার দিকে বাড়িয়ে দিল।অনন্যা বিস্মিত চোখে তাকালো,গত কয়েকমাসে এসব সে দেখেনি।

আয়মান বললো,

অনু চলো কোথাও ঘুরতে যাই।কতদিন হলো বলোতো আমরা ঘুরতে যাই না।

অনন্যা খুশি হলো বোধহয়,অভিমান চড়া হলো।ব্যক্তিত্ব টেনে আনলো,পরক্ষণেই বললো,

বাসায় অনেক কাজ।কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়।তুমি বন্ধুদের সাথে যাও। তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,আমায় নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে।

কাজের লোক আসবে কাল থেকে।আজ থেকে আমি তোমার সেবা করবো অনু।যা করেছি ভুলে যাও,আমায় ক্ষমা করে দাও।আমি তোমায় অবহেলা করেছি,তোমার যত্ন নেইনি,আমি স্বামী হিসেবে ব্যর্থ।আমি লজ্জিত অনু,আর এমনটা হবে না।আমি আদর্শ স্বামী হবো কথা দিচ্ছি।

অনন্যা কাঁদলো,এটা বোধ হয় সুখের কান্না,নিজের জীবনের পাওয়া আনন্দ সে আবার পেল।অনন্যা কে ধরে আয়মান বাইরে নিয়ে এসে বললো,

কাল থেকে এক সাহায্যকারী আসবে,সেই বাড়ির সব কাজ করবে আর তার সাথে মায়া(আয়মানের বোন)টুকটাক কাজ করে দিবে,আমার বাচ্চাকে সামলাবে।আর আম্মু তুমি দাদির সেবা করবে।অনন্যাকে এইবার নিজের মতো করে বাঁচতে দাও,নিজের স্বাধীনতায় বাঁচতে দাও।মা বাবা ত্যাগ করে মেয়েটি অনেক কষ্ট পেয়েছে।ওকে একটু নিজের মেয়ে ভাবো।

এর দু মাস পরে আয়মানের সাথে আমার দেখা।হুট তোলা রিকশা চড়ে দুজনে কোথাও যাচ্ছিল।অনন্যা মেয়েটি দেখতে সত্যিই চমৎকার।তার এই সৌন্দর্য ঢাকা পড়েছিল যত্নের অভাবে।এইতো ফাল্গুনের শাড়িতে মেয়েটিকে কি অপূর্বই না লাগছিল।আমি তাকিয়ে ছিলাম দুজনের দিকে।

আয়মানের কাছ থেকে সব শুনলাম।সবকিছু ঠিক হবার গল্প শোনালো।দুজনই ধন্যবাদ দিলো আমায় ।আমি দোয়া করে দিলাম।স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এতই ঠুনকো নাকি?

~ সমাপ্ত!

ফেইসবুক থেকে 

কপি

পেস্ট

সৌন্দর্যের দেবী ক্লিওপেট্রাআত্মহনন করেন, একটি বিষাক্ত সাপ তুলে নিয়েছিলেন হাতে, আর সেই মুহূর্তে সাপ ছোবল মারে তাঁর বুকে।

 সৌন্দর্যের দেবী ক্লিওপেট্রাআত্মহনন করেন, একটি বিষাক্ত সাপ তুলে নিয়েছিলেন হাতে, আর সেই মুহূর্তে সাপ ছোবল মারে তাঁর বুকে। ক্লিওপেট্রা ....মিশ...