এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫

গরিব থেকে ধনী হওয়ার সহজ ৫ টি উপায়

 গরিব থেকে ধনী হওয়ার সহজ ৫ টি উপায়


বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মানুষেরই একটি স্বপ্ন থাকে—বেশি অর্থ উপার্জন করা, আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করা। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, গরিব অবস্থান থেকে ধনী হওয়ার পথ অনেক কঠিন মনে হয়। তবে বাস্তবে কিছু সহজ উপায় অনুসরণ করলে যে কেউ তার জীবন পরিবর্তন করতে পারেন।


এখানে এমন ৫টি উপায় তুলে ধরা হলো, যা গরিব থেকে ধনী হতে সাহায্য করতে পারে।


১. শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করুন

আপনার শিক্ষার স্তর এবং দক্ষতার উন্নতি না করলে আপনি কখনই উচ্চ আয়ের সুযোগ পাবেন না। আজকের যুগে, যারা বিশেষ কোনো দক্ষতায় পারদর্শী, তারা সহজেই বড়ো চাকরি বা ব্যবসা শুরু করতে পারে। নতুন কিছু শিখতে সময় নিন, বিশেষ করে প্রযুক্তি, ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, কোডিং, বা যে কোন সৃজনশীল দক্ষতা আপনার আয়ের সুযোগ বাড়াতে পারে।


২. বাজেট ও সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন

ধনী হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনার আয় এবং খরচের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা। একদিকে আয় বাড়ানো যেমন জরুরি, তেমনি অন্যদিকে খরচের দিকে নজর দেওয়া সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে নিজের বাজেট তৈরি করুন এবং তার মধ্যে সঞ্চয় করার চেষ্টা করুন। মাসের শেষে কিছু পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আপনার ধনসম্পত্তি বাড়াতে পারেন।


৩. বিনিয়োগ করুন

অর্থ সঞ্চয় করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সেই সঞ্চিত অর্থের সঠিক বিনিয়োগও অতি জরুরি। শেয়ার বাজার, রিয়েল এস্টেট, মিউচুয়াল ফান্ড, বা অন্যান্য বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে টাকা রাখলে তা দীর্ঘমেয়াদী লাভজনক হতে পারে। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকলেও, সঠিক পরামর্শের মাধ্যমে আপনি কম ঝুঁকিতে ভালো লাভ অর্জন করতে পারেন।


৪.নতুন ব্যবসা শুরু করুন

আপনার যদি কিছু পুঁজি থাকে, তবে একটি ছোট ব্যবসা শুরু করা খুবই লাভজনক হতে পারে। ব্যবসার ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা ও নতুন ধারণা নিয়ে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, আপনি অনলাইনে কিছু পণ্য বিক্রি করতে পারেন, অথবা নিজস্ব কোনো সেবা প্রদানের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। স্বল্প মূলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করে পরবর্তীতে তা বড় করতে পারবেন।


৫. পরিস্কার লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা তৈরি করুন

গরিব থেকে ধনী হওয়ার পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো একটি পরিস্কার লক্ষ্য নির্ধারণ করা। আপনি কীভাবে ধনী হতে চান, কেমন জীবনযাপন করতে চান—এগুলো চিন্তা করে একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করুন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে কাজ করলে, জীবনের নানা বাঁধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আপনি সফল হতে পারবেন। মনে রাখবেন, ধনী হওয়া কেবলমাত্র অর্থের ব্যাপার নয়, এটি সময়ের সাথে কঠোর পরিশ্রম এবং মনোযোগের ফলস্বরূপ।


গরিব থেকে ধনী হওয়ার কোন ম্যাজিক পদ্ধতি নেই, তবে সঠিক পরিকল্পনা, শিক্ষার গুরুত্ব, সঞ্চয় ও বিনিয়োগের কৌশল এবং নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে আপনি সফল হতে পারেন। আপনার সামনে অনেক সুযোগ রয়েছে, শুধু সেগুলো চিনে নিন এবং সঠিক সময়ে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করুন

বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫

ছুটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 ছুটি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


বালকদিগের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় চট করিয়া একটা নূতন ভাবোদয় হইল, নদীর ধারে একটা প্রকাণ্ড শালকাষ্ঠ মাস্তুলে রূপান্তরিত হইবার প্রতীক্ষায় পড়িয়া ছিল; স্থির হইল, সেটা সকলে মিলিয়া গড়াইয়া লইয়া যাইবে।


যে-ব্যক্তির কাঠ, আবশ্যককালে তাহার যে কতখানি বিস্ময় বিরক্তি এবং অসুবিধা বোধ হইবে, তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমোদন করিল।


কোমর বাঁধিয়া সকলেই যখন মনোযোগের সহিত কার্যে প্রবৃত্ত হইবার উপক্রম করিতেছে, এমন সময়ে ফটিকের কনিষ্ঠ মাখনলাল গম্ভীরভাবে সেই গুঁড়ির উপরে গিয়া বসিল; ছেলেরা তাহার এইরূপ উদার ঔদাসীন্য দেখিয়া কিছু বিমর্ষ হইয়া গেল।


একজন আসিয়া ভয়ে ভয়ে তাহাকে একটু-আধটু ঠেলিল কিন্ত সে তাহাতে কিছুমাত্র বিচলিত হইল না; এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী মানব সকলপ্রকার ক্রীড়ার অসারতা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল।


ফটিক আসিয়া আস্ফালন করিয়া কহিল, 'দেখ্‌, মার খাবি! এইবেলা ওঠ্‌।'


সে তাহাতে আরো একটু নড়িয়াচড়িয়া আসনটি বেশ স্থায়ীরূপে দখল করিয়া লইল।


এরূপ স্থলে সাধারণের নিকট রাজসম্মান রক্ষা করিতে হইলে অবাধ্য ভ্রাতার গণ্ডদেশে অনতিবিলম্বে এক চড় কষাইয়া দেওয়া ফটিকের কর্তব্য ছিল-- সাহস হইল না। কিন্তু এমন একটা ভাব ধারণ করিল, যেন ইচ্ছা করিলেই এখনই উহাকে রীতিমত শাসন করিয়া দিতে পারে কিন্তু করিল না, কারণ পূর্বাপেক্ষা আর-একটা ভালো খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে, তাহাতে আর-একটু বেশি মজা আছে। প্রস্তাব করিল, মাখনকে সুদ্ধ ঐ কাঠ গড়াইতে আরম্ভ করা যাক।


মাখন মনে করিল, ইহাতে তাহার গৌরব আছে; কিন্তু অন্যান্য পার্থিব গৌরবের ন্যায় ইহার আনুষঙ্গিক যে বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাহা তাহার কিংবা আর-কাহারো মনে উদয় হয় নাই।


ছেলেরা কোমর বাঁধিয়া ঠেলিতে আরম্ভ করিল-- 'মারো ঠেলা হেঁইয়ো, সাবাস জোয়ান হেঁইয়ো।' গুঁড়ি একপাক ঘুরিতে না ঘুরিতেই মাখন তাহার গাম্ভীর্য গৌরব এবং তত্ত্বজ্ঞান-সমেত ভূমিসাৎ হইয়া গেল।


খেলার আরম্ভেই এইরূপ আশাতীত ফললাভ করিয়া অন্যান্য বালকেরা বিশেষ হৃষ্ট হইয়া উঠিল, কিন্তু ফটিক কিছু শশব্যস্ত হইল। মাখন তৎক্ষণাৎ ভূমিশয্যা ছাড়িয়া ফটিকের উপরে গিয়া পড়িল, একেবারে অন্ধভাবে মারিতে লাগিল। তাহার নাকে মুখে আঁচড় কাটিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে গৃহাভিমুখে গমন করিল। খেলা ভাঙিয়া গেল।


ফটিক গোটাকতক কাশ উৎপাটন করিয়া লইয়া একটা অর্ধনিমগ্ন নৌকার গলুইয়ের উপরে চড়িয়া বসিয়া চুপচাপ করিয়া কাশের গোড়া চিবাইতে লাগিল।


এমনসময় একটা বিদেশী নৌকা ঘাটে আসিয়া লাগিল। একটি অর্ধবয়সী ভদ্রলোক কাঁচা গোঁফ এবং পাকা চুল লইয়া বাহির হইয়া আসিলেন। বালককে জিজ্ঞাসা করিলেন, 'চক্রবর্তীদের বাড়ি কোথায়।'


বালক ডাঁটা চিবাইতে চিবাইতে কহিল, 'ঐ হোথা।' কিন্তু কোন্‌দিকে যে নির্দেশ করিল কাহারো বুঝিবার সাধ্য রহিল না।


ভদ্রলোকটি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, 'কোথা।'


সে বলিল, 'জানি নে।' বলিয়া পূর্ববৎ তৃণমূল হইতে রসগ্রহণে প্রবৃত্ত হইল। বাবুটি তখন অন্য লোকের সাহায্য অবলম্বন করিয়া চক্রবর্তীদের গৃহের সন্ধানে চলিলেন।


অবিলম্বে বাঘা বাগদি আসিয়া কহিল, 'ফটিকদাদা, মা ডাকছে।'


ফটিক কহিল, 'যাব না।'


বাঘা তাহাকে বলপূর্বক আড়কোলা করিয়া তুলিয়া লইয়া গেল, ফটিক নিষ্ফল আক্রোশে হাত পা ছুঁড়িতে লাগিল।


ফটিককে দেখিবামাত্র তাহার মা অগ্নিমূর্তি হইয়া কহিলেন, 'আবার তুই মাখনকে মেরেছিস!'


ফটিক কহিল, 'না, মারি নি।'


'ফের মিথ্যে কথা বলছিস!'


'কখ্‌খনো মারি নি। মাখনকে জিজ্ঞাসা করো।'


মাখনকে প্রশ্ন করাতে মাখন আপনার পূর্ব নালিশের সমর্থন করিয়া বলিল, 'হাঁ, মেরেছে।'


তখন আর ফটিকের সহ্য হইল না। দ্রুত গিয়া মাখনকে এক সশব্দ চড় কষাইয়া দিয়া কহিল, 'ফের মিথ্যে কথা!'


মা মাখনের পক্ষ লইয়া ফটিককে সবেগে নাড়া দিয়া তাহার পৃষ্ঠে দুটা-তিনটা প্রবল চপেটাঘাত করিলেন। ফটিক মাকে ঠেলিয়া দিল।


মা চীৎকার করিয়া কহিলেন, 'অ্যাঁ, তুই আমার গায়ে হাত তুলিস!'


এমন সময়ে সেই কাঁচাপাকা বাবুটি ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, 'কী হচ্ছে তোমাদের।'


ফটিকের মা বিস্ময়ে আনন্দে অভিভূত হইয়া কহিলেন, 'ওমা, এ যে দাদা, তুমি কবে এলে।' বলিয়া গড় করিয়া প্রণাম করিলেন।


বহুদিন হইল দাদা পশ্চিমে কাজ করিতে গিয়াছিলেন, ইতিমধ্যে ফটিকের মার দুই সন্তান হইয়াছে, তাহারা অনেকটা বাড়িয়া উঠিয়াছে, তাহার স্বামীর মৃত্যু হইয়াছে, কিন্তু একবারও দাদার সাক্ষাৎ পায় নাই। আজ বহুকাল পরে দেশে ফিরিয়া আসিয়া বিশ্বম্ভরবাবু তাঁহার ভগিনীকে দেখিতে আসিয়াছেন।


কিছুদিন খুব সমারোহে গেল। অবশেষে বিদায় লইবার দুই-একদিন পূর্বে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁহার ভগিনীকে ছেলেদের পড়াশুনা এবং মানসিক উন্নতি সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন। উত্তরে ফটিকের অবাধ্য উচ্ছৃঙ্খলতা, পাঠে অমনোযোগ, এবং মাখনের সুশান্ত সুশীলতা ও বিদ্যানুরাগের বিবরণ শুনিলেন।


তাঁহার ভগিনী কহিলেন, 'ফটিক আমার হাড় জ্বালাতন করিয়াছে।'


শুনিয়া বিশ্বম্ভর প্রস্তাব করিলেন, তিনি ফটিককে কলিকাতায় লইয়া গিয়া নিজের কাছে রাখিয়া শিক্ষা দিবেন। বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন।


ফটিককে জিজ্ঞাসা করিলেন, 'কেমন রে ফটিক, মামার সঙ্গে কলকাতায় যাবি?'


ফটিক লাফাইয়া উঠিল বলিল, 'যাব।'


যদিও ফটিককে বিদায় করিতে তাহার মায়ের আপত্তি ছিল না, কারণ তাঁহার মনে সর্বদাই আশঙ্কা ছিল-- কোন্‌দিন সে মাখনকে জলেই ফেলিয়া দেয় কি মাথাই ফাটায় কি কী একটা দুর্ঘটনা ঘটায়, তথাপি ফটিকের বিদায়গ্রহণের জন্য এতাদৃশ আগ্রহ দেখিয়া তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ন হইলেন।


'কবে যাবে', 'কখন্‌ যাবে' করিয়া ফটিক তাহার মামাকে অস্থির করিয়া তুলিল; উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না।


অবশেষে যাত্রাকালে আনন্দের ঔদার্যবশত তাহার ছিপ ঘুড়ি লাটাই সমস্ত মাখনকে পুত্রপৌত্রাদিক্রমে ভোগদখল করিবার পুরা অধিকার দিয়া গেল।


কলিকাতায় মামার বাড়ি পৌঁছিয়া প্রথমত মামির সঙ্গে আলাপ হইল। মামি এই অনাবশ্যক পরিবারবৃদ্ধিতে মনে মনে যে বিশেষ সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, তাহা বলিতে পারি না। তাঁহার নিজের তিনটি ছেলে লইয়া তিনি নিজের নিয়মে ঘরকন্না পাতিয়া বসিয়া আছেন, ইহার মধ্যে সহসা একটি তেরো বৎসরের অপরিচিত অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ছেলে ছাড়িয়া দিলে কিরূপ একটা বিপ্লবের সম্ভাবনা উপস্থিত হয়। বিশ্বম্ভরের এত বয়স হইল, তবু কিছুমাত্র যদি জ্ঞানকাণ্ড আছে।


বিশেষত, তেরো-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। শোভাও নাই, কোনো কাজেও লাগে না। স্নেহও উদ্রেক করে না, তাহার সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নহে। তাহার মুখে আধে-আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগল্‌ভতা। হঠাৎ কাপড়চোপড়ের পরিমাণ রক্ষা না করিয়া বেমানানরূপে বাড়িয়া উঠে; লোকে সেটা তাহার একটা কুশ্রী স্পর্ধাস্বরূপ জ্ঞান করে। তাহার শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা সহসা চলিয়া যায়, লোকে সেজন্য তাহাকে মনে মনে অপরাধ না দিয়া থাকিতে পারে না। শৈশব এবং যৌবনের অনেক দোষ মাপ করা যায়, কিন্তু এই সময়ের কোনো স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটিও যেন অসহ্য বোধ হয়।


সেও সর্বদা মনে মনে বুঝিতে পারে, পৃথিবীর কোথাও সে ঠিক খাপ খাইতেছে না; এইজন্য আপনার অস্তিত্ব সম্বন্ধে সর্বদা লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী হইয়া থাকে। অথচ এই বয়সেই স্নেহের জন্য কিঞ্চিৎ অতিরিক্ত কাতরতা মনে জন্মায়। এই সময়ে যদি সে কোনো সহৃদয় ব্যক্তির নিকট হইতে স্নেহ কিংবা সখ্য লাভ করিতে পারে, তবে তাহার নিকট আত্মবিক্রীত হইয়া থাকে। কিন্তু তাহাকে স্নেহ করিতে কেহ সাহস করে না, কারণ সেটা সাধারণে প্রশ্রয় বলিয়া মনে করে। সুতরাং তাহার চেহারা এবং ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হইয়া যায়।


অতএব, এমন অবস্থায় মাতৃভবন ছাড়া আর-কোনা অপরিচিত স্থান বালকের পক্ষে নরক। চারি দিকের স্নেহশূন্য বিরাগ তাহাকে পদে পদে কাঁটার মতো বিঁধে। এই বয়সে সাধারণত নারীজাতিকে কোনো-এক শ্রেষ্ঠ স্বর্গলোকের দুর্লভ জীব বলিয়া মনে ধারণা হইতে আরম্ভ হয়, অতএব তাঁহাদের নিকট হইতে উপেক্ষা অত্যন্ত দুঃসহ বোধ হয়।


মামির স্নেহহীন চক্ষে সে যে একটা দুর্গ্রহের মতো প্রতিভাত হইতেছে, এইটে ফটিকের সবচেয়ে বাজিত। মামি যদি দৈবাৎ তাহাকে কোনো-একটা কাজ করিতে বলিতেন, তাহা হইলে সে মনের আনন্দে যতটা আবশ্যক তার চেয়ে বেশি কাজ করিয়া ফেলিত-- অবশেষে মামি যখন তাহার উৎসাহ দমন করিয়া বলিতেন, 'ঢের হয়েছে, ঢের হয়েছে। ওতে আর তোমায় হাত দিতে হবে না। এখন তুমি নিজের কাজে মন দাওগে। একটু পড়োগে যাও।' -- তখন তাহার মানসিক উন্নতির প্রতি মামির এতটা যত্নবাহুল্য তাহার অত্যন্ত নিষ্ঠুর অবিচার বলিয়া মনে হইত।


ঘরের মধ্যে এইরূপ অনাদর, ইহার পর আবার হাঁফ ছাড়িবার জায়গা ছিল না। দেয়ালের মধ্যে আটকা পড়িয়া কেবলই তাহার সেই গ্রামের কথা মনে পড়িত।


প্রকাণ্ড একটা ধাউস ঘুড়ি লইয়া বোঁ বোঁ শব্দে উড়াইয়া বেড়াইবার সেই মাঠ, 'তাইরে নাইরে নাইরে না' করিয়া উচ্চৈঃস্বরে স্বরচিত রাগিণী আলাপ করিয়া অকর্মণ্যভাবে ঘুরিয়া বেড়াইবার সেই নদীতীর, দিনের মধ্যে যখন-তখন ঝাঁপ দিয়া পড়িয়া সাঁতার কাটিবার সেই সংকীর্ণ স্রোতস্বিনী, সেই-সব দলবল, উপদ্রব, স্বাধীনতা এবং সর্বোপরি সেই অত্যাচারিণী অবিচারিণী মা অহর্নিশি তাহার নিরুপায় চিত্তকে আকর্ষণ করিত।


জন্তুর মতো একপ্রকার অবুঝ ভালোবাসা-- কেবল একটা কাছে যাইবার অন্ধ ইচ্ছা, কেবল একটা না দেখিয়া অব্যক্ত ব্যাকুলতা, গোধূলিসময়ের মাতৃহীন বৎসের মতো কেবল একটা আন্তরিক 'মা মা' ক্রন্দন-- সেই লজ্জিত শঙ্কিত শীর্ণ দীর্ঘ অসুন্দর বালকের অন্তরে কেবলই আলোড়িত হইত।


স্কুলে এতবড়ো নির্বোধ এবং অমনোযোগী বালক আর ছিল না। একটা কথা জিজ্ঞাসা করিলে সে হাঁ করিয়া চাহিয়া থাকিত। মাস্টার যখন মার আরম্ভ করিত তখন ভারক্লান্ত গর্দভের মতো নীরবে সহ্য করিত। ছেলেদের যখন খেলিবার ছুটি হইত, তখন জানালার কাছে দাঁড়াইয়া দূরের বাড়িগুলার ছাদ নিরীক্ষণ করিত; যখন সেই দ্বিপ্রহর-রৌদ্রে কোনো-একটা ছাদে দুটি-একটি ছেলেমেয়ে কিছু-একটা খেলার ছলে ক্ষণেকের জন্য দেখা দিয়া যাইত, তখন তাহার চিত্ত অধীর হইয়া উঠিত।


একদিন অনেক প্রতিজ্ঞা করিয়া অনেক সাহসে মামাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, 'মামা, মার কাছে কবে যাব।' মামা বলিয়াছিলেন, 'স্কুলের ছুটি হোক।' কার্তিক মাসে পূজার ছুটি, সে এখনো ঢের দেরি।


একদিন ফটিক তাহার স্কুলের বই হারাইয়া ফেলিল। একে তো সহজেই পড়া তৈরি হয় না, তাহার পর বই হারাইয়া একেবারে নাচার হইয়া পড়িল। মাস্টার প্রতিদিন তাহাকে অত্যন্ত মারধোর অপমান করিতে আরম্ভ করিলেন। স্কুলে তাহার এমন অবস্থা হইল যে, তাহার মামাতো ভাইরা তাহার সহিত সম্বন্ধ স্বীকার করিতে লজ্জা বোধ করিত। ইহার কোনো অপমানে তাহারা অন্যান্য বালকের চেয়েও যেন বলপূর্বক বেশি করিয়া আমোদ প্রকাশ করিত।


অসহ্য বোধ হওয়াতে একদিন ফটিক তাহার মামির কাছে নিতান্ত অপরাধীর মতো গিয়া কহিল, 'বই হারিয়ে ফেলেছি।'


মামি অধরের দুই প্রান্তে বিরক্তির রেখা অঙ্কিত করিয়া বলিলেন, 'বেশ করেছ, আমি তোমাকে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারি নে।'


ফটিক আর-কিছু না বলিয়া চলিয়া আসিল-- সে যে পরের পয়সা নষ্ট করিতেছে, এই মনে করিয়া তাহার মায়ের উপর অত্যন্ত অভিমান উপস্থিত হইল; নিজের হীনতা এবং দৈন্য তাহাকে মাটির সহিত মিশাইয়া ফেলিল।


স্কুল হইতে ফিরিয়া সেই রাত্রে তাহার মাথাব্যথা করিতে লাগিল এবং গা সির্‌সির্‌ করিয়া আসিল। বুঝিতে পারিল তাহার জ্বর আসিতেছে। বুঝিতে পারিল ব্যামো বাধাইলে তাহার মামির প্রতি অত্যন্ত অনর্থক উপদ্রব করা হইবে। মামি এই ব্যামোটাকে যে কিরূপ একটা অকারণ অনাবশ্যক জ্বালাতনের স্বরূপ দেখিবে, তাহা সে স্পষ্ট উপলব্ধি করিতে পারিল। রোগের সময় এই অকর্মণ্য অদ্ভুত নির্বোধ বালক পৃথিবীতে নিজের মা ছাড়া আর-কাহারো কাছে সেবা পাইতে পারে, এরূপ প্রত্যাশা করিতে তাহার লজ্জা বোধ হইতে লাগিল।


পরদিন প্রাতঃকালে ফটিককে আর দেখা গেল না। চতুর্দিকে প্রতিবেশীদের ঘরে খোঁজ করিয়া তাহার কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না।


সেদিনে আবার রাত্রি হইতে মুষলধারে শ্রাবণের বৃষ্টি পড়িতেছে। সুতরাং তাহার খোঁজ করিতে লোকজনকে অনর্থক অনেক ভিজিতে হইল। অবশেষে কোথাও না পাইয়া বিশ্বম্ভরবাবু পুলিসে খবর দিলেন।


সমস্ত দিনের পর সন্ধ্যার সময় একটা গাড়ি আসিয়া বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়ির সম্মুখে দাঁড়াইল। তখনো ঝুপ্‌ ঝুপ্‌ করিয়া অবিশ্রাম বৃষ্টি পড়িতেছে, রাস্তায় একহাঁটু জল দাঁড়াইয়া গিয়াছে।


দুইজন পুলিসের লোক গাড়ি হইতে ফটিককে ধরাধরি করিয়া নামাইয়া বিশ্বম্ভর-বাবুর নিকট উপস্থিত করিল। তাহার আপাদমস্তক ভিজা, সর্বাঙ্গে কাদা, মুখ চক্ষু লোহিতবর্ণ, থরথর করিয়া কাঁপিতেছে। বিশ্বম্ভরবাবু প্রায় কোলে করিয়া তাহাকে অন্তঃপুরে লইয়া গেলেন।


মামি তাহাকে দেখিয়াই বলিয়া উঠিলেন, 'কেন বাপু, পরের ছেলেকে নিয়ে কেন এ কর্মভোগ। দাও ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দাও।'


বাস্তবিক, সমস্তদিন দুশ্চিন্তায় তাঁহার ভালোরূপ আহারাদি হয় নাই এবং নিজের ছেলেদের সহিতও নাহক অনেক খিট্‌মিট্‌ করিয়াছেন।


ফটিক কাঁদিয়া উঠিয়া কহিল, 'আমি মার কাছে যাচ্ছিলুম, আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।'


বালকের জ্বর অত্যন্ত বাড়িয়া উঠিল। সমস্ত রাত্রি প্রলাপ বকিতে লাগিল। বিশ্বম্ভরবাবু চিকিৎসক লইয়া আসিলেন।


ফটিক তাহার রক্তবর্ণ চক্ষু একবার উন্মীলিত করিয়া কড়িকাঠের দিকে হতবুদ্ধিভাবে তাকাইয়া কহিল, 'মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি।'


বিশ্বম্ভরবাবু রুমালে চোখ মুছিয়া সস্নেহে ফটিকের শীর্ণ তপ্ত হাতখানি হাতের উপর তুলিয়া লইয়া তাহার কাছে আসিয়া বসিলেন।


ফটিক আবার বিড় বিড় করিয়া বকিতে লাগিল, বলিল, 'মা, আমাকে মারিস্‌ নে, মা। সত্যি বলছি, আমি কোনো দোষ করি নি।'


পরদিন দিনের বেলা কিছুক্ষণের জন্য সচেতন হইয়া ফটিক কাহার প্রত্যাশায় ফ্যাল্‌ফ্যাল্‌ করিয়া ঘরের চারি দিকে চাহিল। নিরাশ হইয়া আবার নীরবে দেয়ালের দিকে মুখ করিয়া পাশ ফিরিয়া শুইল।


বিশ্বম্ভরবাবু তাহার মনের ভাব বুঝিয়া তাহার কানের কাছে মুখ নত করিয়া মৃদুস্বরে কহিলেন, 'ফটিক, তোর মাকে আনতে পাঠিয়েছি।'


তাহার পরদিনও কাটিয়া গেল। ডাক্তার চিন্তিত বিমর্ষ মুখে জানাইলেন, অবস্থা বড়োই খারাপ।


বিশ্বম্ভরবাবু স্তিমিতপ্রদীপে রোগশয্যায় বসিয়া প্রতিমুহূর্তেই ফটিকের মাতার জন্য প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন।


ফটিক খালাসিদের মতো সুর করিয়া করিয়া বলিতে লাগিল, 'এক বাঁও মেলে না। দো বাঁও মেলে--এ--এ না।' কলিকাতায় আসিবার সময় কতকটা রাস্তা স্টীমারে আসিতে হইয়াছিল, খালাসিরা কাছি ফেলিয়া সুর করিয়া জল মাপিত; ফটিক প্রলাপে তাহাদেরই অনুকরণে করুণস্বরে জল মাপিতেছে এবং যে অকূল সমুদ্রে যাত্রা করিতেছে, বালক রশি ফেলিয়া কোথাও তাহার তল পাইতেছে না।


এমন সময়ে ফটিকের মাতা ঝড়ের মতো ঘরে প্রবেশ করিয়াই উচ্চকলরবে শোক করিতে লাগিলেন। বিশ্বম্ভর বহুকষ্টে তাঁহার শোকোচ্ছ্বাস নিবৃত্ত করিল, তিনি শয্যার উপর আছাড় খাইয়া পড়িয়া উচ্চৈঃস্বরে ডাকিলেন, 'ফটিক, সোনা, মানিক আমার।'


ফটিক যেন অতি সহজেই তাহার উত্তর দিয়া কহিল, 'অ্যাঁ।'


মা আবার ডাকিলেন, 'ওরে ফটিক, বাপধন রে।'


ফটিক আস্তে আস্তে পাশ ফিরিয়া কাহাকেও লক্ষ্য না করিয়া মৃদুস্বরে কহিল, 'মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।'

এই অভিজ্ঞতা রাশিয়ান ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার 'ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি'র। তাঁর কাছে শেষ একটি মিনিট এক অসহ্য অনন্তকাল হয়ে উঠেছিল।

 মৃত্যুর জন্য তাঁর হাতে সময় ছিল মাত্র পাঁচ মিনিট। ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখে দাঁড়িয়ে এই পাঁচ মিনিট সময়কেই সে নিখুঁতভাবে ভাগ করে নিলো। প্রথম দুই মিনিট খরচ করা হবে তাঁর সাথেই ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড়ানো বন্ধুদের কাছে থেকে বিদায় নিতে। পরের দুই মিনিট সে ভাববে নিজের সমগ্র জীবন নিয়ে। আর অবশিষ্ট এক মিনিট শেষবারের মতো দেখে নেবে এই প্রিয় পৃথিবীকে।


কিন্তু ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে সেই পাঁচ মিনিটই তাঁর কাছে মনে হচ্ছিল অন্ততকাল। সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে, নিজের জীবনের সব উল্লেখযোগ্য স্মৃতি রোমন্থন করেও পৃথিবী দেখার শেষ এক মিনিট সে কিছুতেই শেষ করতে পারছিল না। সময় এতোটাই ধীর গতিতে আগাচ্ছিল যে, যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে সে বলে উঠেছিল- ‘আমাকে তাড়াতাড়ি গুলি করো! আর সহ্য হচ্ছে না!’


এই অভিজ্ঞতা রাশিয়ান ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার 'ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি'র। তাঁর কাছে শেষ একটি মিনিট এক অসহ্য অনন্তকাল হয়ে উঠেছিল।


সেইন্ট পিটার্সবার্গ, ১৮৪৯ সাল। আট মাস ধরে তিনি জেলে বসে অপেক্ষা করেছিলেন ফায়ারিং স্কোয়ারের সামনে দাঁড়ানোর আশঙ্কা নিয়ে। প্রথম দিকে তিনি আশায় ছিলেন, ঘটনাটা বোধহয় ঘটবে না। পরবর্তীতে তিনি মনস্থির করে নেন, যখন হবে তখন দেখা হবে। শেষের দিকে তিনি চাইছিলেন ঘটনাটা এখনই ঘটে যাক, যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল। কারণ মৃত্যুর থেকেও মৃত্যুর এই প্রতীক্ষা আরও অসহ্য।


অবশেষে যন্ত্রণামুক্তি। একদিন সকালে হঠাৎই অন্যান্য সহবন্দীদের সঙ্গে তাকেও শেকলে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হল সেমোনোভস্ক চত্ত্বরে,নেভার কিনারায়।


কমান্ডারের কণ্ঠে বাজল প্রথম নির্দেশ। বন্দুকধারী সেপাইরা মৃত্যুপথযাত্রীদের চোখ বেঁধে দিল। দ্বিতীয় নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে সবগুলো বন্দুক থেকে 'কক' করার ক্লিক-ক্ল্যাক শব্দ ভেসে এল। তৃতীয় নির্দেশ এল। 'লক্ষ্য স্থির করো'। শেষবারের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা, গোঙ্গানি, ফুঁপিয়ে কান্না...। তারপর সব চুপচাপ।


নীরবতা।


আরও নীরবতা। মনে হচ্ছিল যে এই নৈশব্দ আর ফুরোবেই না। শেষে তাদের বলা হল, রাশিয়ার মাহান সর্বশক্তিমান জার, পরম করুণাময় তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।


১৮৪৮ সালের কোনো একটা সময় থেকে তিনি বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী পেত্রাশেভস্কির প্রগতিশীল পাঠচক্রে যাতায়াত শুরু করেন। পরে পেত্রাশেভ্ স্কির জনৈক সহযোগী পরিচালিত গোপন বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান করে নিষিদ্ধ সাহিত্য ছাপিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজে উৎসাহিত হয়ে পড়েন। এক বছর এই কাজ করার পর ১৮৪৯ সালের এপ্রিল মাসে পেত্রাশেভ্ স্কির পাঠচক্রের অন্য ২১ জন সদস্যের সঙ্গে ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি গ্রেপ্তার হন। বিচারাধীন বন্দি হিসেবে তাঁকে পিটার-পল কারাদুর্গের নির্জন ঘরে আট মাস বন্দি করে রাখা হয়। বিচারে অন্যদের সাথে তাঁকেও প্রাণদন্ডে দন্ডিত করা হয়।


১৮৪৯ সালের ২২ ডিসেম্বর। হাড়কাঁপানো শীতের ভোরে দস্তয়েভস্কিকে অন্যান্যদের সঙ্গে বধ্যভূমিতে উপস্থিত করা হয়। কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মন্ত্র পাঠ করিয়ে তাঁকে বন্দুকের সামনে দাঁড় করানো হয়। জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে মাত্র কয়েক মুহূর্তের ব্যবধান। এই সময় জার প্রথম নিকোলাইয়ের দূত ঘোড়া ছুটিয়ে হাজির হয় ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে। জারের নির্দেশে সমস্ত বুদ্ধিজীবী রাজদ্রোহীদের মৃত্যুদন্ড রদ করে সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হয়। দস্তয়েভস্কিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাইবেরিয়ার বন্দি শিবিরে। সেইদিন সন্ধ্যায় দাদা মিখাইলকে লেখা চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন,


"আমি হতাশ হইনি, ভেঙে পড়িনি। জীবন সর্বত্রই জীবন, বাইরের নয়, আমাদের নিজেদের ভিতরের জীবন। আমার আশেপাশে মানুষজন থাকবে, মানুষের মাঝখানে মানুষ হয়ে থাকা, যত বড়ো সংকটই দেখা দিক না কেন, চিরকাল মানুষ হয়ে থাকা, হতাশ না হওয়া, ভেঙে না-পড়া -- এই হল জীবন, এই হল জীবনের লক্ষ্য।"


পরবর্তী কালে সমস্ত লেখায় তাঁর এই জীবন অভিজ্ঞতা গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। চার বছর নির্বাসন দন্ড ভোগ করার পর ১৮৫৪ সালে দস্তয়েভস্কিকে পাঠানো হয় বাধ্যতামূলক সৈনিকের চাকরিতে। ১৮৫৯ সালে তাঁর সৈনিক জীবন শেষ হয়। আবার তিনি সেন্ট পিটার্স বার্গে পাকাপাকিভাবে বসবাসের অনুমতি পান।


'ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি'কে সাধারণত সর্বকালের সেরা ঔপন্যাসিকদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাহিত্যিক আধুনিকতাবাদ, অস্তিত্ববাদ, মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা, ধর্মতত্ত্ব এবং সাহিত্য সমালোচনা তার ধারণা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। দস্তয়েভস্কি'র রচনাগুলিকে প্রায়শই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বলা হয়, কারণ তিনি রাশিয়ার বিপ্লবীরা ক্ষমতায় এলে কেমন আচরণ করবে তা এত নির্ভুলভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। যা পরবর্তীতে দেখা যায়। সেই সময়ে তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে তার কার্যকলাপের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন।


তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে,


'দি হাউজ অফ দি ডেড' (The House of the Dead), প্রকাশকাল ১৮৬০। 'এ ন্যাস্টি স্টোরি'(A Nasty Story), প্রকাশকাল ১৮৬২। 'নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড' (Notes from Underground), প্রকাশকাল ১৮৬৪। 'ক্রাইম এ্যান্ড পানিসমেন্ট' (Crime and Punishment), প্রকাশকাল ১৮৬৬। 'দি গ্যাম্বলার' (The Gambler), প্রকাশকাল ১৮৬৭। 'দি ইডিয়ট' (The Idiot), প্রকাশকাল ১৮৬৯। 'দি র ইউথ' (The Raw Youth), প্রকাশকাল ১৮৭৫। 'দি ব্রাদারস কারামাজভ' (The Brother Karamazov), প্রকাশকাল ১৮৮০। 'এ রাইটার্স ডায়েরী' (A Writer's Diary), প্রকাশকাল ১৮৭৩-১৮৮১, দুইখন্ডে প্রকাশিত।


ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি লেখক হওয়ার আগে ছিলেন একজন প্রকৌশলী। তিনি যা আয় করতেন তার সব অর্থই উড়িয়ে দিতেন জুয়া খেলে। বলা হয়ে থাকে জুয়া খেলে সর্বশান্ত হয়ে তিনি সাহিত্য রচনায় হাত দিয়েছেন।


জুয়ায় বার বার হেরে গেলেও সাহিত্য রচনায় বহু বাজি তিনি জিতে নিয়েছিলেন। যদিও নানা রকম শারীরিক অসুস্থতা অথবা অর্থকষ্ট তাঁকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিত প্রতিনিয়ত। অবশেষে ১৮৮১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে।

মূলঃ এদোয়ার্দো গালিয়ানো ( Children of the days )

রাত ৮ টা ৩০ মিনিটের সংবাদ। তারিখ: ০৯-০৪-২০২৫ খ্রি:।

 রাত ৮ টা ৩০ মিনিটের সংবাদ।

তারিখ: ০৯-০৪-২০২৫ খ্রি:।


আজকের শিরোনাম:


বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন উদ্বোধন করে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের  বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা।


দেশের স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে ব্রিটেনের আরও সহযোগিতা চাইলেন অধ্যাপক ডক্টর মুহম্মদ ইউনূস।


আসন্ন বাংলা নববর্ষ উদযাপনে বিশ্ব শান্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে -জানালেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। 


আগামীকাল শুরু হচ্ছে এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা - অংশ নেবে ১৯ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী।


আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত চার আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ  আইসিটি’র - তদন্ত শেষ করতে হবে দুই মাসের মধ্যে।


শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বিরুদ্ধে মুজিববর্ষ উদযাপনের নামে চার হাজার কোটি টাকা অপচয়ের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।


গাজা একটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।


আগামীকাল লাহোরে আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

সকাল ৭টার সংবাদ  তারিখ : ০৯-০৪-২০২৪ খ্রি:

 সকাল ৭টার সংবাদ 

তারিখ : ০৯-০৪-২০২৪ খ্রি:


আজকের সংবাদ শিরোনাম:


বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের বিশেষ উদ্যোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করবে দক্ষিণ কোরিয়া - প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে জানালো দেশটির বিনিয়োগকারীরা।


নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে কারখানা স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে একটি সুইডিশ কোম্পানির সমঝোতা স্মারক সই।


চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে কোনও নিরাপত্তা হুমকি নেই - জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।


বিএফডিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার - বললেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা। 


শীগগিরই বাংলাদেশে অবস্থানরত সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার নাম যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করবে মিয়ানমার।


আগামী ২৯শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে হজ্ব ফ্লাইট - জানালেন ধর্ম উপদেষ্টা।


গাজাকে হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্র অভিহিত করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব - ইসরাইলী প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে তৎপর হতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর।


ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের তিনটি খেলা আজ বিভিন্ন ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে।

বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫

বই: সমতার আড়ালে সমকামিতা মিশন

 মানব সভ্যতা যে উল্টো পথে যাত্রা শুরু করেছে, তার একটি অকাট্য প্রমাণ হলো এলজিবিটি তথা সমকামিতাবাদকে বৈশ্বিক এজেন্ডা হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়া। বিশ্বব্যাপী নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আমূল পরিবর্তন ঘটলেও আমরা এর গভীরতা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারছি না, এমনকি স্পষ্ট ধারণাও গড়ে ওঠেনি।


এলজিবিটি সম্পর্কে কিছু বিচ্ছিন্ন ও আংশিক তথ্য-উপাত্ত কেউ কেউ জানেন, তবে তা অনেকটাই “অন্ধের হাতি দেখা” গল্পের মতো। একজন অন্ধ ব্যক্তি হাতির শুঁড় ধরে সেটিকে মোটা দড়ি বলে মনে করতে পারেন, আবার আরেকজন পা ধরে সেটিকে গাছের কাণ্ড বলে ভাবতে পারেন। এলজিবিটি মতবাদের পুরো বিষয়টিকে সুনিপুণভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই শক্তিশালী রেফারেন্সসমৃদ্ধ বইটিতে।


বইটিতে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে, যেমন: সমকামী আচরণ কি আসলেই অধিকারের বিষয়? যদি সমকামিতাকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তবে দেশের সিস্টেম (পলিসি, আইন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য) কীভাবে পরিবর্তিত হয়? সমকামী আচরণের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কি রয়েছে? কেন এবং কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, এনজিও এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে এটি বৈশ্বিক এজেন্ডায় পরিণত হলো? সমকামিতা-বান্ধব বিশ্ব গড়তে কারা অর্থায়ন করছে? পরিবার ও সমাজবিরোধী এবং স্বাস্থ্যগত ক্ষতিকর প্রভাব সত্ত্বেও এই আন্দোলন প্রচারের পেছনের মূল অনুপ্রেরণা কী? বাংলাদেশে সমকামী অধিকার আন্দোলনের সূচনা কবে, কারা এর নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং এ পর্যন্ত এর কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে?


বইটিতে রেফারেন্স হিসেবে প্রকাশিত জার্নাল নিবন্ধগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি রেফারেন্সের স্ক্রিনশট ও প্রতিবেদনের শিরোনাম (বাংলা ও ইংরেজি) দেওয়া হয়েছে, যা গুগল সার্চের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ইংরেজিতে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে চ্যাটজিপিটি বা গুগল সার্চের মাধ্যমে আরও বিস্তারিত জানা যায়। প্রমাণের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও QR কোডের মাধ্যমে বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে, যা স্মার্টফোন দিয়ে স্ক্যান করে সরাসরি ইউটিউব লিংকে ভিজিট করা যাবে। এছাড়াও, কিছু গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্সের (পিডিএফ কপি) QR কোড যুক্ত গুগল ড্রাইভ লিংক দেওয়া রয়েছে।


বই: সমতার আড়ালে সমকামিতা মিশন

লেখক : ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন

প্রকাশনী : সিয়ান পাবলিকেশন

পৃষ্ঠা : ৫৫০ 

কভার : হার্ড কভার

মুদ্রিত মূল্য: ৭৫০ 

অফারে বিক্রয়মূল্য: ৪৯০ (সীমিত সময়ের জন্য) 

আজই অর্ডার করতে আমাদেরকে ম্যাসেজ করুন।

ক্যালিফোর্নিয়া বেয়ারিং রেশিও (CBR) টেস্ট এর বিস্তারিতঃ

 ক্যালিফোর্নিয়া বেয়ারিং রেশিও (CBR) টেস্ট এর বিস্তারিতঃ

====================================

ক্যালিফোর্নিয়া বেয়ারিং রেশিও (CBR) টেস্ট হল মাটির শক্তি এবং রাস্তা নির্মাণে ভিত্তি স্তরের লোড বহন করার ক্ষমতা নির্ধারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এটি প্রধানত সড়ক নির্মাণ ও রেলওয়ের সাবগ্রেড উপাদানের উপযুক্ততা মূল্যায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়। নিচে এই পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলোঃ


CBR টেস্টের উদ্দেশ্যঃ

মাটির লোড-বহন করার ক্ষমতা নির্ধারণ করা।

রাস্তার সাবগ্রেড, সাববেস, এবং বেস লেয়ারের নকশা নিশ্চিত করা।

উপকরণের স্তরের মান এবং কার্যকারিতা যাচাই করা।


CBR টেস্টের প্রক্রিয়াঃ

১. স্যাম্পল প্রস্তুতকরণ

মাটি শুকিয়ে সঠিক আর্দ্রতা মিশিয়ে (Proctor compaction test অনুযায়ী) নমুনা প্রস্তুত করা হয়।

প্রস্তুতকৃত নমুনা একটি সিলিন্ডার টেস্ট মোল্ডে রাখা হয়।

নমুনাটি নির্ধারিত আর্দ্রতায় এবং ঘনত্বে কমপ্যাক্ট করা হয়।


২. প্লাঞ্জার প্রবেশ করানোর পদ্ধতি

একটি ধাতব প্লাঞ্জার (diameter: 50 mm) মাটির উপর প্রয়োগ করা হয়।

প্লাঞ্জার ১.২৫ mm প্রতি মিনিটের হারে মাটিতে ঢুকতে থাকে।

বিভিন্ন প্রবেশতার স্তরে (penetration level) লোড পরিমাপ করা হয়। সাধারণত ২.৫ mm এবং ৫ mm স্তরে লোড নেওয়া হয়।


৩. লোডের মান পরিমাপ

প্লাঞ্জার প্রবেশ করার সময় লোড একটি ডায়াল গেজের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।

লোডের মান গ্রাফ আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়।


CBR এর গণনা পদ্ধতিঃ

CBR এর মান নির্ণয় করার জন্য নিচের সূত্রটি ব্যবহার করা হয়:


CBR (%) = (মাপা লোড (Test Load)/ স্ট্যান্ডার্ড লোড (Standard Load) × 100


স্ট্যান্ডার্ড লোডঃ

২.৫ mm প্রবেশতার জন্য: ১৩৭০ কেজি।

৫ mm প্রবেশতার জন্য: ২০৫৫ কেজি।


উদাহরণঃ

যদি ২.৫ mm প্রবেশতার সময় লোড হয় ৪০০ কেজি, তাহলে


CBR = ( 400/1370) × 100 = 29.2 %


CBR টেস্টের ধরণ

ল্যাবরেটরি টেস্ট:

মাটি মোল্ডে কমপ্যাক্ট করে পরীক্ষা করা হয়।


ফিল্ড টেস্ট:

সরাসরি প্রকল্প এলাকায় পরীক্ষা করা হয়।

CBR টেস্টের ব্যবহার ও মানদণ্ড

CBR > 80%: চমৎকার মানের উপাদান (বেস লেয়ার)।

CBR 20%-80%: মাঝারি মানের মাটি বা সাববেস।

CBR < 20%: দুর্বল মানের মাটি, যা উন্নয়ন প্রয়োজন।


CBR টেস্টের সুবিধাঃ

সহজ এবং নির্ভরযোগ্য।

রাস্তা ও রেলপথের নকশায় সঠিক ডেটা প্রদান করে।

বিভিন্ন স্তরের মাটির উপযোগিতা দ্রুত নির্ণয় করে।


CBR টেস্টের সীমাবদ্ধতাঃ

শুধুমাত্র লোড-বহন ক্ষমতা নির্ধারণ করে, রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নয়।

আর্দ্রতা এবং ঘনত্ব পরিবর্তনের সাথে ফলাফল পরিবর্তিত হতে পারে।


#cbr #test #engineering #naeemcivilnote #construction #RCC #roadsafety

কিছু গোপন সত্য যা ধনী লোকেরা আপনাকে জানতে দিতে চায় না…

 ♦কিছু গোপন সত্য যা ধনী লোকেরা আপনাকে জানতে দিতে চায় না…

আমরা এমন এক দুনিয়ায় বাস করি, যেখানে নিয়ম-কানুনগুলো ধনীরা তৈরি করে, আর সেটা চলে তাদের স্বার্থে। মিডিয়া, শিক্ষাব্যবস্থা, এমনকি আর্থিক পরামর্শগুলোও এমনভাবে গড়া, যাতে আপনি সীমাবদ্ধ থাকেন এবং ধনীরা আরও এগিয়ে যায়। কিন্তু এখন সময় এসেছে সেই পর্দা সরানোর। জেনে নিন এমন ১২টি কঠিন সত্য, যা ধনীরা চান না আপনি জানুন:


১. কঠোর পরিশ্রম নয়, কৌশলই মূল:

ধনীরা অন্যের সময়, ট্যালেন্ট এবং অর্থ ব্যবহার করে ব্যবসা দাঁড় করায়। চাকরির পরিশ্রমে আপনি কেবল অন্যের স্বপ্ন পূরণ করেন, নিজের নয়।


২. অর্থ খারাপ নয়, এটা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার:

আপনাকে বলা হয় ‘অর্থ লোভের জন্ম দেয়’, অথচ ধনীরা জানে—সঠিকভাবে ব্যবহৃত অর্থ ক্ষমতা এনে দেয়। তারা এটিকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসেবে দেখে।


৩. সঞ্চয় নয়, বিনিয়োগে ভবিষ্যৎ:

ব্যাংকে টাকা রেখে আপনি হারান মূল্য (ইনফ্লেশনের কারণে)। ধনীরা স্টার্টআপ, রিয়েল এস্টেট, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সম্পদ বাড়ায়।


৪. শিক্ষা নয়, সিস্টেম গেম:

প্রথাগত শিক্ষা আপনাকে কর্মচারী বানায়। ধনীরা ফাইনান্স, ট্যাক্স, লিগ্যাল স্ট্রাকচার শিখে নিজের জন্য সিস্টেম বানায়, যেখানে অর্থ তাদের জন্য কাজ করে।


৫. কর ফাঁকি নয়, কর পরিকল্পনা:

ধনীরা কর আইনের ফাঁকফোকর জানে, কর কমানোর বৈধ পদ্ধতি জানে। তারা কর দেয় কম, কারণ তারা ইনকামের বদলে অ্যাসেট ও কোম্পানির মালিক।


৬. ঋণ ভয় নয়, একটি শক্তিশালী অস্ত্র:

তারা ভালো ও খারাপ ঋণের পার্থক্য জানে। খারাপ ঋণ আপনাকে নিঃস্ব করে, ভালো ঋণ দিয়ে তারা সম্পদ কেনে যা আবার আয় এনে দেয়।


৭. ভোগ নয়, সম্পদে বিনিয়োগ:

ধনীরা টাকা খরচ করে এমন জিনিসে যা ভবিষ্যতে আয় দেয়—যেমন প্রপার্টি, শেয়ার, ব্যবসা। আপনি যখন iPhone কিনেন, তারা সেই কোম্পানির শেয়ার কেনে।


৮. প্রতিভা নয়, নেটওয়ার্কই শক্তি:

সফল মানুষেরা একে অপরকে টেনে তোলে। ধনীরা জানে—"Your network is your net worth"। তারা সেই পরিবেশে থাকে যেখানে সুযোগ তৈরি হয়।


৯. সময় নয়, স্বাধীনতা মূল লক্ষ্য:

তারা নিজের সময় বিক্রি করে না, বরং অন্যের সময় কিনে নেয় (কর্মী, সিস্টেম, অটোমেশন)। এভাবেই তারা ফ্রিডম পায়।


১০. বাজার নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণ:

ধনীরা ভেতরের খবর, ডেটা, অ্যালগরিদম ব্যবহার করে শেয়ার বাজারে প্রভাব ফেলে। তারা ‘গেম’ খেলে, আপনি খেলেন ‘নিয়ম’ মেনে।


১১. ব্যর্থতা নয়, শেখার ধাপ:

ধনীরা ব্যর্থতায় ভয় পায় না, বরং তা থেকে শেখে। কিন্তু সমাজ আপনাকে শেখায় ব্যর্থতা মানেই শেষ, যাতে আপনি কখনও শুরু না করেন।


১২. অজ্ঞতা নয়, জ্ঞানই শক্তি:

ধনীরা চায় আপনি ফাইনান্স, ইনভেস্টমেন্ট ও বিজনেস সম্পর্কে কম জানেন। কারণ জ্ঞানই মুক্তির পথ—এবং তারা চায় আপনি কন্ট্রোলে থাকুন।


আপনার করণীয় কী?


✅ আর্থিক শিক্ষা নিন – ফাইনান্স, ইনভেস্টমেন্ট, ট্যাক্স ও ব্যবসা শিখুন।

✅ অ্যাসেট তৈরি করুন, লায়াবিলিটি নয় – যা আয় আনে, তাতে বিনিয়োগ করুন।

✅ নেটওয়ার্ক তৈরি করুন – সফলদের সঙ্গে মিশুন, শেখার চেষ্টা করুন।

✅ ঝুঁকি নিন, কিন্তু হিসেব করে – রিস্ক নেওয়াই সফলতার রাস্তা, কিন্তু সেটা যেন ব্লাইন্ড না হয়।

✅ সময়কে প্রাধান্য দিন – ফোকাসড থাকুন, মূল্যহীন জিনিসে সময় ব্যয় করবেন না।


শেষ কথা:

আপনি যদি গরীব পরিবারেও জন্ম নিয়ে থাকেন, তবুও এই সত্যগুলো জানলে এবং কাজে লাগালে আপনি অর্থ, সময় এবং জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবেন। ধনীরা এই জ্ঞান গোপন রাখে কারণ তারা জানে—জ্ঞানই মুক্তির চাবিকাঠি।


এখনই সময় নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার।

কাঠবডি দোতলা লঞ্চ। 

 কাঠবডি দোতলা লঞ্চ। 


ঢাকা বরিশাল যোগাযোগ ব্যবস্থায় সময়ের অনিয়মিতর কারনেই বাষ্পচালিত ইস্টিমারের উপর একসময় যাত্রী সাধারনরা আস্তা হারিয়ে ফেলছিলো। দোতলা কাঠবডি লঞ্চের আবির্ভাব ঘটতে থাকে পঞ্চাশের মাঝামাঝি থেকে ষাটের দশকে। লঞ্চ গুলো ঢাকার উদ্দেশ্যে বিকেল পাচটায় বরিশাল পদ্মাবতী ঘাট থেকে রওনা হতো।  কিছু লঞ্চ চাঁদপুর পট্টি মুন্সিগঞ্জ ঘাট দিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যবসায়িদের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে শুরু করেছিলো। ডাব পান মাছ তরকারির চকবাজারের তৈজসপত্র কাপড় চুড়ি ফিতা আলতা ইত্যাদির পাইকারি খুচরায় বেশ ভালোই লাভবান হতে ছিলো বরিশাল।  সুবাদে বেশ কিছু ঢাকা মুনশিগঞ্জ বিক্রমপুর নারায়নগঞ্জের ইত্যাদি আঞ্চলের মানুষ বরিশালে স্থানীয় হতে শুরু করেছিলো। 

এক কথায় বলা যায়, বরিশাল চকবাজার আর ঢাকা চকবাজারের সেতু বন্ধনই ছিলো দোতলা কাঠবডি লঞ্চ। 

বিউটি অব বিক্রমপুর, ইলিয়টগঞ্জ, মারী, বসুন্ধরা, সৈয়দ,  সাহারুন্নেছা, মেহেরুন্নেছা ইত্যাদি ছিলো উল্লেখযোগ্য। ষাটের দশকে দুআনার গরুর গোস আর দুআনার ভাত, ডাল ফ্রী। ভাড়া আটআনা বারো আনা। প্রথম শ্রেণির কেবিনে নারকেলের সোবলার গদি আর শক্ত একটা বালিস কোনরকম একজন শুয়া যেত। দোতলার পিছনে ২য় শ্রেণি, ঐ একই কায়দার। ভাড়া প্রথম শ্রেণি কেবিন ১০০ টাকা সিট হলে ২য় শ্রেণি ১০০ প্রতি টি সিট। পাতার হাটের গান্ধী বাবুর বিউটি অব পাতারহাট নামে একটি কাঠবডি দোতলা লঞ্চ চলতো। বিউটি সিনেমা হলের মালিক কামাল চৌধুরী, বরিশাল চকবাজারের মোহন মিয়াদের "সাকু" ভোলার আলতাফ মিয়াদের সঞ্চিতা, পল্টনের মেট্রোপলিটান হোটেল মালিকদের " রাজহাংস"  কালাম চেয়ারম্যান, এরা বরিশালের বাসিন্দা না হলেও কাঠবডি লঞ্চ দিয়ে এরা বরিশালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কন্ট্রাক্টর পৌরচেয়ারম্যান গোলাম মাওলা  বরগুনা পাথরঘাঠা বাগেরহাট ইত্যাদি প্রতান্ত আঞ্চল কে একতলা লঞ্চ দিয়ে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত যোগাযোগের মধ্যে রেখেছিলেন। তার একটা ডে সার্ভিস ছিলো শুরভী, রেজভি। সেই এম এল বরিশাল থেকে ১২ টায় ছেড়ে হিজলা মুলাদি সহ বহু লোকাল ঘাট ধরে সদরঘাটে পৌছতো পরের দিন প্রতুষে। চিড়া নারকেলের কথা কিন্তু ভুলে যাইনি, মনে আছে তো।


© মনোয়ার রহমান

তরুণদের মধ্যে হার্ট এটাক বাড়ছে। হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমানোর গবেষণায় প্রমাণিত ৭টি উপায়ঃ

 তরুণদের মধ্যে হার্ট এটাক বাড়ছে। হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমানোর গবেষণায় প্রমাণিত ৭টি উপায়ঃ


✅ ১. ধূমপান বন্ধ করুন


তামাকের ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ হৃদপিণ্ড ও রক্তনালির কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। এটি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বাড়ায়, যা সরাসরি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি করে।


✅ ২. অন্যের ধূমপানের ধোঁয়াও এড়িয়ে চলুন


প্যাসিভ স্মোকিং বা অন্যের ধোঁয়ার সংস্পর্শেও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।


✅ ৩. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন


বিশেষ করে LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) বেড়ে গেলে ধমনিতে ব্লক তৈরি হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যাভ্যাস ও প্রয়োজনে ওষুধে তা নিয়ন্ত্রণ করুন।


✅ ৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন


উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিণ্ডের গঠন পরিবর্তন করে এবং কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম ও প্রয়োজনে ওষুধে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।


✅ ৫. মানসিক চাপ কমান


গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপ হৃদরোগের অন্যতম কারণ। রিলাক্সেশন, মেডিটেশন ও সময়মতো বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি।


✅ ৬. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন


CDC অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করা উচিত।


✅ ৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন


গবেষণায় দেখা গেছে, কোমরের পরিমাপ বেশি হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সুস্থ ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করুন।


একটু খেয়াল রাখলেই হয়তো একটি তরতাজা প্রাণ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। 


ধন্যবাদ,

সাব্বির আহমেদ

#SabbirAhmed

বাত ব্যথা হলেই হোমিও ঔষধের  আবশ্যকতা হয়ে পরে,— গেঁটে বাত (Gout)। ---

 🎋বাত ব্যথা হলেই হোমিও ঔষধের  আবশ্যকতা হয়ে পরে,— গেঁটে বাত (Gout)। --- 🔖 Ledum Palustre 30 🌹 প্রধান লক্ষণ: ▪ গেঁটে বাতের ব্যথা, যা নিচ থে...