**৭ম শ্রেণির শরিফ-শরিফার গল্পটা এরকমও হতে পারতো:-
** শরিফ আর শরিফা দুই ভাই-বোন...বাবা আর মায়ের সাথে ঢাকা থেকে দাদু বাড়ি ময়মনসিংহ বেড়াতে যাচ্ছে --এটাই ওদের প্রথম ট্রেন ভ্রমণ,তাই ওরা দুজনেই খুব উৎফুল্ল,শরিফ ৫ম শ্রেণিতে পড়ে আর শরিফা ৩য় শ্রেণিতে,শরিফ-শরিফার বাবা জনাব আসিফ সাহেব রাজধানীর স্বনামধন্য ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক...
ময়মনসিংহগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি জয়দেবপুর রেলস্টেশনে থামলে একদল হিজড়া/তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ট্রেনটিতে উঠে...ট্রেনের জানালার কাঁচ দিয়ে সে দৃশ্য দেখে শরিফ ও শরিফা,, দুই ভাই-বোনই ওদের দেখে খুব অবাক হয়, 'মানুষগুলো মেয়েদের মত দেখতে,কিন্তু অনেক লম্বা,ঠোঁটে কড়া লিপস্টিক,মুখেও অনেক মেকাপ,দেখতে কেমন যেন একটু অদ্ভুত লাগে।'...ওরা সবচেয়ে অবাক হয়,মেয়েদের মত দেখতে হলেও ওদের গলার আওয়াজ ঠিকই ছেলেদের মত...শরিফা ভয় পায়,মায়ের কোলের ভেতর লুকোতে চায়...কৌতুহল জাগে শরিফের মনে...সে বাবাকে জিজ্ঞেস করে,'বাবা, কে এরা?'
আসিফ সাহেব বলেন,'ওরা তোমার আমার মতই স্বাভাবিক মানুষ...সৃষ্টিকর্তা তোমাকে যেমন ছেলে বানিয়েছেন...তোমার ছোট্ট বোনটাকে যেমন মেয়ে বানিয়েছেন...তেমনি সৃষ্টিকর্তা ওদেরও এক বিশেষভাবে বানিয়েছেন, ওরা ছেলেও না,আবার মেয়েও না, ওদের বলা হয় থার্ড জেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গ'
বাবা-ছেলের এই প্রশ্নোত্তর পর্ব চলতে চলতেই সেই হিজড়াদের দলের একজন ওদের কাছে আসে, টাকা দিয়ে সাহায্য করতে বলে শরিফের বাবাকে...শরিফের বাবা আসিফ সাহেব পকেট থেকে ৫০ টাকার একটা নোট শরিফের হাতে দিয়ে বলেন,'নাও বাবা,এটা আন্টিকে দাও'...শরিফ ভয়ে ভয়ে টাকাটা হিজড়া মানুষটির দিকে বাড়িয়ে দেয়, টাকা নিয়ে মুচকি হাসি দেয় সে হিজড়া মহিলা, শরিফের গাল টেনে আদর করে দিয়ে বলে,'অনেক বড় হও বাবা'...
চলে যায় হিজড়ার দল অন্য বগিতে কিন্তু কৌতুহল তখনও কাটেনি শরিফের,আবারও শরিফ জিজ্ঞেস করে তার বাবাকে,'আচ্ছা বাবা,ওরা যদি আমাদের মত স্বাভাবিক মানুষ হয়,তাহলে ওরা ট্রেনে ট্রেনে এভাবে ভিক্ষা করে কেন ?
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,শরিফ-শরিফার বাবা সুন্দর করে তার দুই ছেলে-মেয়েকে বুঝিয়ে বলেন,'ওরা আমাদের মত স্বাভাবিক মানুষ হলেও স্বাভাবিক মানুষের মত কাজ করার সুযোগ ওরা সমাজে পায় না ,ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগও ওদের নেই ,,ওরা যদি স্বাভাবিক ছেলে-মেয়ের মত পড়ালেখা ও চাকুরি করার সুযোগ পেত,,তাহলে ওদের ট্রেনে ট্রেনে এভাবে ভিক্ষা করার প্রয়োজন হত না।
এ কথা শুনে শরিফ এবং শরিফা দুঃখ প্রকাশ করে বাবা-মায়ের কাছে ওরা বলে,ওরা বড় হয়ে তৃতীয় লিঙ্গের এই অবহেলিত মানুষদের শিক্ষার ব্যবস্থা করবে আর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে, শরিফ-শরিফার বাবা-মা এই কথা শুনে খুব খুশি হয়।
............
আমাদের প্রিয় পটুয়াখালী ফেইসবুক থেকে নেওয়া
.........
বিঃদ্রঃ-আমাদের দেশে শিক্ষার চেয়ে গুজবের শক্তি বেশি, তাই আমাদের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষের শব্দ ও ভাষার ব্যবহারে আরও যত্নশীল হওয়া উচিত,যেন কেউই এই পুস্তকের ভুল ব্যাখ্যা করতে না পারে.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন