যষ্টিমধু । (Licorice)
আজ আলোচনা করবো যষ্টিমধু নিয়ে। কারণ এই যষ্টিমধু আমাদের কুলিনারিতে ব্যবহৃত হয়। যষ্টিমধু, যা লিকোরিস নামেও পরিচিত, এটি হচ্ছে গ্লাইসাইররিজা গ্লাবরা গাছের শিকড়। বাংলায় গাছটিকে আমরা যষ্টিমধু গাছ বলে থাকি। যষ্টিমধুর শিকড় থেকে মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়। এটি লিগিউম জাতীয় বিরুৎ যা মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন অংশে পাওয়া যায়। মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের অনেক দেশে চকোলেট এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার প্রস্তুতিতে যষ্টিমধু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে যষ্টিমধু ঔষধি উদ্ভিদ নামে পরিচিত। এটি উদ্ভিদগতভাবে গোমৌরি, স্টার অ্যানিস বা মৌরির সাথে সম্পর্কিত নয়, যা অনুরূপ স্বাদযুক্ত মশলার উৎস। অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় গোপন রান্না মসলা মিশ্রণ (Secret Spice) হিসেবে এর ব্যবহার আছে।
যষ্টিমধু সংস্কৃত শব্দ 'যষ্টি' থেকে এসেছে, যার অর্থ কাঠ এবং 'মধু', যার অর্থ মধু। মালয়ালম নাম - ইয়াতীমমধুরাম, হিন্দি- মূলেঠি, ইংরেজিতে - Licorice বলে। যষ্টিমধুর ইতিহাস বেশ প্রাচী, ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যষ্টিমধুর ব্যবহার সুপ্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসছে। আমাদের আয়ুর্বেদিক গ্রন্থগুলোতে এর ঔষধি গুণাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। সপ্তম শতাব্দীর মাধবচিকিৎসার জ্বরচিকিৎসা অংশে জ্বর (jvara) নিরাময়ে এর ব্যবহার বর্ণিত আছে। দশম শতাব্দীতে পণ্ডিত বররুচি রচিত যোগশতক, যেখানে সহজ ভাষায় এবং অল্প সংখ্যক ভেষজ (যেমন, যষ্টিমধু) ব্যবহার করে সহজে প্রস্তুত করা যায় এমন ওষুধের ফর্মুলা বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া এই ঔষধি উদ্ভিদ যা আমাদের ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যা আমাদের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বহুযুগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
এটি একটি ভেষজ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ যা উচ্চতায় ১ মিটার (৩৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এর পাতাগুলি প্রায় ৭–১৫ সেমি (৩–৬ ইঞ্চি) দীর্ঘ। ফুলগুলি ০.৮–১.২ সেমি (১⁄৩–১⁄২ ইঞ্চি) লম্বা, বেগুনি থেকে ফ্যাকাশে নীল বর্ণের হয়। ফলটি হচ্ছে একটি বিভাজক পড, ২–৩ সেমি (৩⁄৪–১ +১⁄৮ ইঞ্চি) দীর্ঘ, বেশ কয়েকটি বীজ সমন্বিত । শিকড় স্টলোনিফেরাস হয়।
যষ্টিমধুর মূলের সুগন্ধটি আছে একটি জটিল যৌগ থেকে যার উদ্বায়ী অংশের ৩% থাকে অ্যানথোল। যষ্টিমধুর বেশিরভাগ মিষ্টতা গ্লাইসারাইজিন থেকে আসে। যার মিষ্টি স্বাদ চিনির ৩০-৫০ গুণ বেশি। তবে এর মিষ্টি স্বাদ চিনি থেকে খুব আলাদা, তাৎক্ষণিক এর স্বাদ কম এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। যষ্টিমধু মূলে পাওয়া আইসোফ্লাভিন গ্লাব্রেন এবং আইসোফ্রাভিন গ্লাব্রিডিন হচ্ছে ফাইটোএস্ট্রোজেন। যষ্টিমধু সূর্যের আলো পায় এমন শুকনো উপত্যকায় ভালো জন্মে। রোপণের দুই থেকে তিন বছর পরে শরৎকালে ফসল কাটার উপযুক্ত সময়। যষ্টিমধু উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে রয়েছে ভারত, ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, চীন, পাকিস্তান, আজারবাইজান, উজবেকিস্তান, ইতালি, তুর্কমেনিস্তান এবং তুরস্ক।
আয়ুর্বেদে যষ্টিমধু একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হিসেবে বিবেচিত। এটি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, যেমন - সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটের সমস্যা, ত্বক ও চুলের সমস্যা ইত্যাদি। যষ্টিমধুর প্রদাহ-বিরোধী, অ্যান্টাসিড এবং ব্যথানাশক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা বিভিন্ন রোগের উপশমে সাহায্য করে। যষ্টিমধু ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন - অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস, প্রদাহ, সানবার্ন ইত্যাদি উপশম করতে সাহায্য করে। তবে অধিক পরিমাণে যষ্টিমধু একদিনে খেলে গ্লাইসাররিজিনিক অ্যাসিড রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং মাংসপেশী দুর্বল করে দেয় ও হাইপোক্যালেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আধুনিক বিজ্ঞানও যষ্টিমধুর নানা ঔষধি গুণাবলি প্রমাণ করেছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি নানা রোগের চিকিৎসায় সহায়ক। মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই যষ্টিমধু ঔষধি এবং খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকান সিগারেট, আর্দ্র নস্যি, চাবানোর তামাক এবং পাইপ তামাক এর স্বাদ বাড়াতে এবং আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য বেশিরভাগ যষ্টিমধু তামাকের স্বাদের উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। লিকারিস বা যষ্টিমধু তামাকজাত পণ্যগুলিকে প্রাকৃতিক মিষ্টি স্বাদ এর জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে ২০০৯ সালে, মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন সিগারেট থেকে মেনথল ব্যতীত অন্য কোনো স্বাদ নিষিদ্ধ করে।
খাবার ও পানীয়তে যষ্টিমধু মিষ্টি স্বাদ এবং সুগন্ধের জন্য চকোলেট, মিষ্টি এবং অন্যান্য খাবারে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্ডি বা মিষ্টিতে লিকুইরিস ব্যবহার করে ব্যতিক্রম স্বাদ প্রদান করা হয়। বেশিরভাগ ক্যান্ডিতে অ্যানিসিড তেল দ্বারা স্বাদ জোরদার করা হয় তাই যষ্টিমধুর উপাদান কম থাকে। লিকুইরিস কনফেকশনগুলি প্রাথমিকভাবে ইউরোপের গ্রাহকরা কিনে থাকে, তবে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো অন্যান্য দেশেও এটি জনপ্রিয়। ভারতে এর মূল্য ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা প্রতি কেজি আনুমানিক।
👇
By Chef Moonu
👇
#chefmoonuskitchen #moonuandco #travellermoonu #thefoodietraveller #kolkatablogger #kolkatafood #chefmoonu #kolkata #foodlovers #foodblogger #CulinaryJourney #bengalifood #foodculture #WestBengal @top fans